কলকাতা, 12 জুলাই: ঢোলাহাটে যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের গাইডলাইন মেনে দেহের ময়নাতদন্ত করতে হবে বলে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার ৷ শনিবারের মধ্যে এই ময়নাতদন্ত করতে হবে অন্তত তিনজন চিকিৎসক ও মৃতের বাবার উপস্থিতিতে । শুধু তাই নয়, পুরো ঘটনার ভিডিয়োগ্রাফি করে সংরক্ষণও করতে হবে ৷ আদালতের তরফে আরও জানানো হয়েছে, সিএফএসএল হায়দারাবাদে শনিবারের মধ্যে ভিসেরা করতে পাঠাতে হবে। 22 জুলাই মামলার ফের শুনানি।
অন্যদিকে, ঢোলাহাটে পুলিশের হেফাজতে যুবককে মারধরেরর অভিযোগ ও তাঁর মৃত্যুতে তড়িঘড়ি থানার আইসি ও তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে এফআইআর করল পুলিশ। সেখানে মৃত্যুর ধারাও যুক্ত করা হয়েছে। ওসি মানস চট্টোপাধ্যায় ও রাজদীপ সরকার নামে এক পুলিশ অফিসার মারধর তোলাবাজিতে অভিযুক্ত বলে সামনে এসেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানাল রাজ্য।
এদিন রাজ্য আদালতকে জানায়, পুলিশ যে সব তথ্য দিয়েছে সেসবই হাসপাতাল ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের থেকে পাওয়া। ডিএসপি তদন্ত করছেন। এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ এই তদন্ত করছে। থানার পুলিশ করছে না। শুধু তাই নয়, অফিসার রাজদীপ সরকারকে ক্লোজ করা হয়েছে।
বিচারপতি অমৃতা সিনহা বলেন, ময়না তদন্তের ভিডিয়ো রেকর্ডিং হলেও কেন ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখা হয়নি? এত তাড়া কীসের ছিল? বাড়ির লোককেও কেন জানানো হয়নি? ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেহের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। তদন্ত করতে চাইলেও রাজ্য NHRC-র গাইড লাইন লঙ্ঘন করে ময়না তদন্ত করতে পারে না। পাশাপাশি, নার্সিং হোমের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন বিচারপতি।
রাজ্যের যুক্তি, এই মৃত্যু পুলিশের হেফাজতে হয়নি। মাত্র কয়েক ঘণ্টা ওই ব্যক্তি থানার হেফাজতে ছিলেন। তারপরে বিভিন্ন হাসপাতাল ও আদালতে যান। জামিন পাওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়। ফলে NHRC গাইড লাইন এখানে লাগু হতে পারে না। মৃতের পরিবারের তরফে আইনজীবী চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে জানান, থানার আইসি হাসপাতালে গিয়ে ব্যাপারটা মিটমাট করে নেওয়ার চেষ্টা করেন। শুধু তাই নয়, পুলিশ জোর করে মৃতের বিরুদ্ধে তাঁর কাকাকে দিয়ে চুরির অভিযোগ লিখিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ। পাশাপাশি, কাকাকে মামলার সাক্ষী না হতেও চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি আইনজীবীর।
সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি সিনহার পর্যবেক্ষণ, তথ্য প্রমাণ জোগাড় ও স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে নথি জোগাড় করা দরকার। একইভাবে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করাও জরুরি। শনিবারের মধ্যে এই দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করতে হবে। হেফাজতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে যেসব গাইড লাইন আছে সেসব মানতেহবে। মৃতের কাকা-সহ পরিবারের লোকেদের নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত করতে হবে। থানার আইসি থানায় দায়িত্বে থাকলেও এই তদন্তে কোনওভাবে যুক্ত থাকতে পারবেন না। সেই সকল চিকিৎসকের ময়নাতদন্তে রাখতে হবে যাঁদের পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে ৷