কলকাতা, 8 অগস্ট: উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর এলাকায় শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ে চলছে পরীক্ষা । স্কুল জুড়ে রয়েছে নিস্তব্ধ পরিবেশ ৷ সেই নীরবতা যেন আরও প্রকট করল একটি খবর । রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর নেই । তিনি এই স্কুলেরই কৃতি ছাত্র ছিলেন । 12 বছর তিনি এই স্কুলে পড়েছেন । এলাকায় বাচ্চু নামেই সবাই জানতেন তাঁকে । মন্ত্রী বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যে উচ্চতায় তিনি পৌঁছেছিলেন, তার পরও তিনি স্কুল-শিক্ষক-বন্ধু কাউকেই ভোলেননি । তাঁর ব্যবহারে কোনও ফারাক কেউ লক্ষ্য করেননি । তাঁর প্রয়াণের খবর আসতেই শোক নেমে আসে স্কুলে । পরীক্ষা চলছে বিভিন্ন ক্লাসের, যার জেরে আচমকা স্কুল বন্ধ করা যায়নি । তবে আগামিকাল, শুক্রবার স্কুল ছুটি ।
এ দিন স্কুল প্রাঙ্গনেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ছবিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় ৷ এ দিন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর ছবিতে প্রধান শিক্ষক ড. দেবকুমার বিশ্বাস, সহ-প্রধান শিক্ষক হরিনাথ নন্দ ছাড়াও বাকি সহকারি শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্ররা মালা-ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন । পুরনো শিক্ষকরা জানালেন, মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নন । উনি নিজেকে স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতেন । শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ের সহ-প্রধান শিক্ষক হরিনাথ নন্দ বলেন, ‘‘বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রয়াণ আমাদের কাছে অত্যন্ত বেদনার । আমরা খুবই শোকার্ত । আজ স্কুল ছুটি দিতে পারিনি পরীক্ষার জন্য । স্কুল চলা সত্ত্বেও আমরা নীরবতা পালন করলাম ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘1997 ও 2001, দু’বার এসেছিলেন । প্রথমবার এসেছিলেন আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাংলার প্রথম জাতীয় শিক্ষক জ্যোতির বিকাশ মিত্র রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিলেন তাঁর মূর্তি উন্মোচনে । দ্বিতীয়বার স্কুলের লাইব্রেরি উদ্বোধন । তাঁকে সেই সময় প্রধান শিক্ষক নিজের চেয়ার ছেড়ে দিলেও তিনি বসেনি । উলটো দিকে একটি চেয়ারে বসেছিলেন । এটা বড় প্রাপ্তি ছিল ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘বুদ্ধদেববাবু আমাদের কাছে মন্ত্রী নন । এই স্কুলের ছাত্র হিসেবে আমরা পেয়েছি । সকলের সঙ্গে মিশেছেন । শিক্ষকদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন । এমন কিছু শিক্ষক ছিলেন যাঁরা তাঁর সঙ্গেই পড়েছেন । তাঁদের সঙ্গে তিনি আড্ডা দিয়ে গিয়েছেন । এই পাড়ায় উনি জনপ্রিয় ছিলেন । উনি স্কুলের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন সকলে বলেছেন পড়ার বাচ্চু এসেছেন । আমাদের কাছে প্রাক্তন ছাত্র এসেছেন । আমাদের কাছে বড় পাওনা তিনি স্কুলকে ভুলে যাননি । যখন ডেকেছি পেয়েছি । তার মৃত্যু আমাদের কাছে কষ্টের ।’’
অন্যদিকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাল্যবন্ধু তপন ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘ভীষন ভালো বন্ধু ছিলেন । এক্কেবারে শিশু বয়সের বন্ধু । প্রথম শ্রেণী থেকে স্কুল ফাইনাল, এক সঙ্গে পড়েছি শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ে । খুবই ভালো ছিল বুদ্ধ পড়াশোনায় । এক সঙ্গে কফি হাউজে বসে বসে কাগজে লিখতাম বহু লেখা । নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ধুতি পড়ার স্টাইল দেখেই দু’জনের ধুতি পড়া শুরু ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে মতাদর্শগত খানিক ফারাক ছিল । তবে সেটা কোনোদিন বর্তমান সময়ের মতো নয় । এক সঙ্গে সিনেমায় যাওয়া পাড়ায় আড্ডা দিয়েছি । বুদ্ধ বলেই ডাকতাম চিরকাল । ওর বহু অনুষ্ঠানে গিয়ে ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় আবৃত্তি করেছি । বছর 50-60 সময়কাল আমাদের বন্ধুত্বের ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘ওর চলে যাওয়ার খবর পেয়ে অত্যন্ত খারাপ লাগল । বুদ্ধ ক্রিকেট খেলত ভালো । ব্যাট করতে ভালোবাসতেন । প্রথম দিকে নামতেন । ইন্টার স্কুল প্রতিযোগিতায় স্কুলের নাম বিশাল ছিল । খাবার নিয়ে কোনও ঝামেলা ছিল না । ঝালমুড়ি থেকে কাটলেট সবটাই খেত । অত্যন্ত ভালো মনের ছেলে ছিল ।’’