মালদা, 10 জানুয়ারি: ভারত-বাংলা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনে আবারও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের বাধা ভারতের কেন্দ্রীয় পূর্ত সড়ক বিভাগকে ৷ এবার নয়া ফিকির ৷ তাদের দাবি, বেড়া নির্মাণের জন্য খুঁটির গর্ত খোঁড়া যাবে না ৷ যেখানে গর্ত খোঁড়া হচ্ছে, সেই জায়গা নাকি বাংলাদেশের ৷ তাদের বাধায় বৃহস্পতিবার সকালে বন্ধ হয়ে যায় বেড়া দেওয়ার কাজ ৷ বিকেলে ইংরেজবাজারের মহদিপুরে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং হয় ৷ সেই বৈঠকে বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে ম্যাপ খুলে সবকিছু দেখানোর পর, তারা নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসে ৷
শুক্রবার সকাল থেকে ফের শুরু হয়েছে বেড়া দেওয়ার কাজ ৷ জানিয়েছেন মালদার জেলাশাসক ৷ তবে সীমান্ত লাগোয়া এলাকার ভারতীয়রা বলছেন, এর পিছনে রয়েছে বাংলাদেশের অভিসন্ধি ৷ যেখানে তারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে, সেখানে সীমান্তের ওপারে রোহিঙ্গারাও জড়ো হয়েছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন ৷ তবে কি বাংলাদেশি আর রোহিঙ্গাদের অনুপ্রেবেশের স্বার্থেই বিজিবির এই বিরোধিতা ? প্রশ্ন তুলছেন এপারের মানুষ ৷
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সম্প্রতি ইন্দো-বাংলা সীমান্তের অরক্ষিত সীমান্তে ত্রিস্তর কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ৷ দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি থেকে সেই কাজ শুরু হয়েছে ৷ কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের বাখরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সুকদেবপুরেও চলতি সপ্তাহে সেই কাজ শুরু হয় ৷ কিন্তু গত সোমবার সেখান প্রথমবার কাজে বাধা দেন বেশকিছু বাংলাদেশি ৷ তাঁদের সমর্থনে এগিয়ে আসে বিজিবিও ৷ তারা দাবি করে, যেখানে বেড়া দেওয়া হচ্ছে সেই জায়গা বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্যে পড়ে ৷ যদিও কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লক প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে ম্যাপ খুলে বিজিবিকে প্রমাণ দেন, যে তাদের দাবি সঠিক নয় ৷
মঙ্গলবার কাজ ফের শুরু হয় ৷ একদিন কাজ হতে না হতে ফের বাধা আসে ৷ নকশা অনুযায়ী, কাঁটাতারের বেড়া দিতে ওই এলাকায় মরাগঙ্গা নদীর ধারে মোট 400টি খুঁটি পুঁততে হবে ৷ তার জন্য ইতিমধ্যে শতাধিক গর্ত করা হয়ে গিয়েছে ৷ গতকাল বিজিবির তরফে দাবি করা হয়, যে জায়গায় গর্ত খোঁড়া হচ্ছে, সেটা বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার মধ্যে পড়ে ৷ তাদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন বাংলাদেশিরাও ৷ ফের বন্ধ হয়ে যায় কাজ ৷
বাখরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আবদুর রহিম জানাচ্ছেন, "বিজিবি ও অল্প কিছু সংখ্যক বাংলাদেশির বাধায় বারবার এই কাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে ৷ আমরা চাই, দ্রুত এই বেড়া দেওয়া হোক ৷ এতে এলাকার নিরাপত্তা যেমন বাড়বে, তেমনই চোরা কারবার আর অনুপ্রবেশের উপরেও নিয়ন্ত্রণ রাখা সহজ হবে ৷ এই মুহূর্তে বাংলাদেশে অস্থির অবস্থা চলছে ৷ বিনা কারণে বাংলাদেশিরা কাঁটাতারের ওপারে ভারতীয় জমিতে চাষ করতে যাওয়া চাষিদের গালাগালি করছে ৷ এসবই তাদের উত্তেজনা ছড়ানোর ফিকির ৷ তবে বিএসএফ সক্রিয় রয়েছে ৷ সীমান্তে নিরাপত্তা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ 24 ঘণ্টা পেট্রোলিং করছে ৷ সতর্ক রয়েছেন গ্রামের বাসিন্দারাও ৷"
সুকদেবপুরের বাসিন্দা মহম্মদ ফইজুদ্দিনের কথায়, "ওরা আসলে পায়ে পা দিয়ে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করছে ৷ এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পরিস্থিতি খুব খারাপ ৷ হাসিনা চলে যাওয়ার পর মানুষের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই ৷ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এই বেড়া দেওয়ার কাজ শেষ করতে হবে ৷ প্রয়োজনে আমরা পাহারা দেব ৷ তবে গতকাল থেকে বিএসএফ আমাদের সীমান্তে যেতে দিচ্ছে না ৷"
একই বক্তব্য বাবলু শেখেরও ৷ তিনি বলেন, "এমনিতেই এই এলাকা দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে ৷ মাঝেমধ্যেই জাল নোট কিংবা নেশার কাফ সিরাপ উদ্ধার হয় ৷ বিএসএফ জওয়ানদের উপর বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের হামলার ঘটনাও ঘটেছে ৷ নিজেদের নিরাপত্তায় আমরা দীর্ঘদিন ধরেই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলাম ৷ অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার সেই কাজ শুরু করেছে ৷ যে কোনও মূল্যে কাঁটাতারের বেড়া দিতে হবে ৷"
স্থানীয় রমজান আলির বক্তব্য, "আমরা খবর পেয়েছি, এই অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি আর রোহিঙ্গাদের এদেশে অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করছে বিজিবি ৷ সেই কারণেই তারা বারবার ঝামেলা পাকাচ্ছে ৷ বিএসএফ আমাদের একবার সুযোগ দিক, আমরা সব ঠান্ডা করে দেব ৷"
বিএসএফের এক আধিকারিক হনুমান প্রসাদ জানাচ্ছেন, "বিজিবির বাধায় গতকাল সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ৷ সমস্যা মেটাতে গতকাল বিকেলে মহদিপুরে দু’দেশের ফ্ল্যাগ মিটিং হয়েছে ৷ আজ থেকে ফের কাজ শুরু হয়েছে ৷ সীমান্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সুকদেবপুর বিওপি থেকে শবদলপুর বিওপি পর্যন্ত জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়েছে ৷"
এদিকে, জেলাশাসক নিতীন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, "ইন্দো-বাংলা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিয়ে সোমবারের পর গতকালও সামান্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল ৷ তবে সেই সমস্যা মিটে গিয়েছে ৷ আজ থেকে ফের কাজ শুরু হয়েছে ৷ এখনও পর্যন্ত নতুন করে কোনও সমস্যার কথা শোনা যায়নি ৷"