আলিপুরদুয়ার, 3 সেপ্টেম্বর: মহারাষ্ট্র ও কেরালার পর এমন উদ্যোগ রাজ্যে সম্ভবত প্রথম । বইয়ের প্ৰতি ভালোবাসা থেকে পথচলা শুরু হল বইগ্রামের ৷ জানেন পশ্চিমবঙ্গের কোথায় এই গ্রাম ?
উত্তরবঙ্গের বিশেষ আকর্ষণ বইগ্রাম
বক্সার জঙ্গল ঘেরা বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র রাজভাতখাওয়া ৷ তার পাশেই অবস্থিত একটি ছোট্ট গ্রাম পানিঝোরা । যে গ্রামে প্রায় প্রতিদিনই বন্য জীবজন্তুর আনাগোনা লেগেই থাকে । সেই গ্রামকে ঘিরেই এক নতুন সংস্কৃতির আন্দোলন শুরু হয়েছে । পানিঝোরার বাসিন্দারা জেলা প্রশাসন ও এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় নিজেদের গ্রামকে গড়ে তুলেছে বইগ্রাম হিসেবে ।
জঙ্গল ঘেরা পানিঝোরা গ্রামের বাসিন্দারা যেমন জানেন গাছ মানুষের জীবনে অপরিহার্য, তেমনই বইও । বই মানুষের জ্ঞানচক্ষু খুলে দেয় । তাই পানিঝোরাকে বই গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলতে এগিয়ে এসেছেন সবাই । এই তালিকায় রয়েছেন গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা, ছাত্রছাত্রী থেকে অভিভাবকরা । পর্যটকদের আনাগোনা থাকায় এই গ্রামের নাম দেশ বিদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে । আর এখন এই বই গ্রামের তকমা মেলায় পর্যটকের আগমন আরও বাড়বে পানিঝোরায়, তারই আশায় দিন গুনছেন বাসিন্দারা ।
কী রয়েছে বইগ্রামে ?
বরঞ্চ ডুয়ার্সে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে বিশেষ একটা আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এখন বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধীনে থাকা এই পানিঝোরা বইগ্রাম । বইগ্রামকে সাজাতে গ্রামে ঢোকার মুখেই তৈরি করা হয়েছে একটি সুন্দর তোরণ । বইকে থিম হিসেবে রেখে কাঠের তৈরি গাছের আদলে করা হয়েছে সেই তোরণ । সেখানে রাখা হয়েছে বইয়ের রেপ্লিকা ও ছোট লাইব্রেরির রেপ্লিকা । কাঠের তৈরি সেই তোরণ পেরিয়ে গ্রামে প্রবেশ করেই চোখে পড়বে বইগ্রামের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বানানো একটা ফলক ।
গ্রামের ভেতরে নির্বাচিত দশটি বাড়ির সামনে বানানো হয়েছে 'আলোকবর্তিকা'। 'আলোকবর্তিকা' হল কাঠের তৈরি ছোট খুপরি লাইব্রেরি । সেগুলোর প্রত্যেকটিতে গল্পের, বিজ্ঞানের, সামাজিক সচেতনতামূলক-সহ নানা স্বাদের বই থাকবে । ওই গ্রামেরই 10 জন স্বেচ্ছাসেবক ছোট লাইব্রেরিগুলোর দেখভাল করবেন । আগ্রহী পাঠকরা বই নিয়ে, পড়ে আবার সেখানেই ফেরত দিয়ে যাবেন ।
গ্রামে থাকছে লাইব্রেরি
এছাড়া গ্রামে থাকছে একটি বড় আকারের লাইব্রেরি । আপাতত তা বানানো হয়েছে ওই গ্রামেরই প্রাথমিক স্কুলের একটি ঘরে । যেখানে দুটি আলমারিতে 500-রও বেশি বই থাকবে । পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে থাকবে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় বইও । যার দেখভালের দায়িত্ব পালন করবেন 2 জন স্বেচ্ছাসেবক । পরবর্তীতে জমির ব্যবস্থা হয়ে গেলে ওই গ্রামেই পাকাপাকিভাবে বড় গ্রন্থাগার তৈরি করা হবে । সেখানে মাসে একদিন কম্পিউটার শেখানোর সঙ্গে সংস্কৃতিচর্চাও করানো হবে । পাশাপাশি গ্রামের 50টি বাড়ির দেওয়াল শিক্ষামূলক, বইকেন্দ্রিক, মনীষীদের বাণী দিয়ে সাজানোর চিন্তাভাবনাও রয়েছে উদোক্তাদের ।
পানিঝোরায় বাড়বে পর্যটকদের আনাগোনা
বক্সা ব্যাঘ্র-প্রকল্পের অধীন থাকা পানিঝোরা গ্রামে 7টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী-সহ তপশিলি-অনগ্রসর শ্রেণির বাসিন্দাদের বাস রয়েছে । এই গ্রামে প্রায় 320 জন বাসিন্দা রয়েছেন । বাসিন্দারা গ্রামের এই পরিবর্তনে দারুণ উচ্ছ্বসিত ৷ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এতে গ্রামে উন্নতি হবে । বাসিন্দাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়বে ৷ নতুন প্রজন্ম মোবাইল ছেড়ে বইয়ের পাতায় মনোনিবেশ করবে । দেশ-বিদেশের মানুষ আসবে গ্রামে। বাইরে থেকে আসা পর্যটকরা এখানে এসে বই পড়ে জানতে পারবেন উত্তরবঙ্গ, ডুয়ার্স, আদিবাসী ও বক্সার অজানা ইতিহাস । পাশাপাশি আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে পানিঝোরার ।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক পার্থ সাহা বলেন,"আলো ছড়িয়ে দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য । সামাজিক বঞ্চনা থেকে উত্তরণের অস্ত্র হতে পারে বই । আশাকরি ডুয়ার্সে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছেও বিশেষ একটা আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবে পানিঝোরার বইগ্রামটি ।" আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক আর বিমলার কথায়,"বইগ্রামে এসে খুব ভালো লাগছে । এখানে একটি বড় এবং একটি ছোট লাইব্রারি রয়েছে । বই পড়লে মস্তিস্ক ভালো থাকে ।"