গঙ্গাসাগর, 22 জুলাই: মাছ ধরতে গিয়ে উত্তাল ঢেউয়ের কারণে গভীর সমুদ্রে ডুবে গেল ট্রলার ৷ পাশাপাশি উলটে গেল ইলিশ বোঝাই দু'টি নৌকাও ৷ ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ 24 পরগনার গঙ্গাসাগরে ৷ নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে দু'টি নৌকায় থাকা বেগুয়াখালির 17 জন মৎস্যজীবীকে ৷ তবে তিনজন মৎস্যজীবী আহত হয়েছেন ৷ তাঁদের মধ্যে সাগর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর দু'জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৷ একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে ৷
এই বিষয়ে দক্ষিণ 24 পরগনার কাকদ্বীপ ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, "রবিবার কাকদ্বীপের মৎস্য বন্দর থেকে এফবি মোল্লেশ্বর নামে একটি ট্রলার মৎস্যজীবীদের নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল । উত্তাল ঢেউয়ের কারণে ট্রলারের নীচের অংশ ফুটো হয়ে যায় । সেই ফুটো দিয়ে জল ঢুকতে থাকে ট্রলারটিতে । এরপরেই ট্রলারে থাকা মৎস্যজীবীরা চিৎকার শুরু করে দেয় ৷ তাঁদের চিৎকার শুনে উদ্ধারকার্যে এগিয়ে আসে অন্য আরেকটি ট্রলার। অন্যান্য মৎস্যজীবী ট্রলারে সহযোগিতায় ডুবন্ত ট্রলারটি থেকে মৎস্যজীবীদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে । কিন্তু উত্তাল ঢেউয়ের কারণে ট্রলারটিকে উদ্ধার করা যায়নি। ট্রলারটিকে উদ্ধারের জন্য কাকদ্বীপ থেকে বেশ কয়েকটি ট্রলার ইতিমধ্যে রওনা দিয়েছে ।"
বাংলায় কথা প্রচলিত রয়েছে, তীরে এসে তরী ডুবে যাওয়া । এই ঘটনায় সেই কথাই যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল গঙ্গাসাগরের কয়েকজন মৎস্যজীবীদের সঙ্গে । প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল মৎস্য দফতর । কিন্তু আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হতে জীবন-জীবিকার টানে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন গঙ্গাসাগরের বেগুয়াখালির কয়েকজন মৎস্যজীবী ।
বাঙালির রসনাতৃপ্তিতে ইলিশের সন্ধানে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেয় মৎস্যজীবীদের নৌকাগুলি। মাছ ধরার পর নৌকাগুলি বেগুয়াখালির বন্দরের দিকে আসছিল । সেই মুহূর্তে পূর্ণিমার কোটালের জেরে উত্তাল হয়ে ওঠে সমুদ্র ৷ ঢেউয়ের কারণে তড়িঘড়ি মাছ ভর্তি দু'টি নৌকো উপকূলের দিকে আসার চেষ্টা করছিল । একেবারে উপকূলের খুব কাছে চলে আসার পর একটি বিশালকার ঢেউ সবকিছু মুহূর্তের মধ্যে তছনছ করে দেয় ।
ঢেউয়ের তোরে উপকূলের কাছে এসে উলটে যায় দু'টি মাছ ভর্তি নৌকা। এরপর মৎস্যজীবীরা চিৎকার করতে থাকে তাদের করুণ আর্তনাদ শুনে উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসে স্থানীয় বাসিন্দা ও অন্যান্য মৎস্যজীবীরা। নিরাপদে সকল মৎস্যজীবীদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে ৷ তবে দু'টি নৌকায় থাকা প্রায় 50 থেকে 60 কুইন্টাল মাছ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি । ওই ইলিশ মাছের আনুমানিক বাজার মূল্য কয়েক লক্ষ টাকা ।
এই বিষয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা দেবব্রত মণ্ডল জানান, "পূর্ণিমার কোটালের জেরে নদীতে এমনিতে জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। কোটালের জেরে উত্তাল হয়েছে সাগর ৷ আমরা দেখি উপকূলের কাছে দু'টি নৌকা উলটে গিয়েছে ৷ আমরা তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছই এবং মৎস্যজীবীদের উদ্ধার করি। দু'টি নৌকায় থাকা সকল মৎস্যজীবীরা সুস্থ রয়েছে । আমরা দড়ি দিয়ে দু'টি নৌকাকে টেনে তীরে তোলার চেষ্টা চালাই । কিন্তু এই সময় নৌকায় থাকা বেশিরভাগই মাছ ভেসে চলে গিয়েছে ।"