কলকাতা, 15 অগস্ট: আরজি কর-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি তুলল বিজেপি ৷ এই দাবিতে শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ঘেরাও করার কর্মসূচির ডাক দিয়েছে গেরুয়া শিবির । আগামিকাল বিকেলে হাজরা মোড় থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি অর্থাৎ কালীঘাট পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল করবে বিজেপি মহিলা মোর্চা । এরপর সেখানে অবস্থান বিক্ষোভ করবে তারা ৷ এই বিক্ষোভ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেবেন মহিলা মোর্চার জাতীয় সভানেত্রী বনথী শ্রীনিবাসন ৷
পাশাপাশি দেশের প্রতিটি জেলায় আরজি করের ঘটনায় প্রতিবাদে পথে নামছে বিজেপি ৷ শুক্রবার থেকে লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভ করবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব ৷ বৃহস্পতিবার সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো বার্তা পোস্ট করে খোদ এই কর্মসূচির কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত ৷
এ দিন ভিডিয়ো বার্তায় তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে একেবারে ব্যর্থ । আমরা তাঁর পদত্যাগ চাই ৷ 'অভয়া'র সুবিচারের দাবিতে এবং বুধবার মধ্যরাতে আরজি করে ভাঙচুরের প্রতিবাদে, আগামী শুক্রবার থেকে দেশজুড়ে একাধিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিজেপি । আগামিকাল প্রতিটি জেলায় বেলা দুপুর 2টো থেকে রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি করব আমরা । পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল করবেন মহিলা মোর্চার বনথী শ্রীনিবাসন, ফাল্গুনী পাত্র ও মহিলা বিধায়করা ৷"
The rape and murder of a doctor on duty at RG Kar Hospital, Kolkata is an appalling failure in protecting women’s safety. This heinous crime demands immediate action and accountability.@BJPMahilaMorcha is organizing a Silent Candle March across the nation on 16th August 2024,… pic.twitter.com/3KnBppBW3i
— Vanathi Srinivasan (@VanathiBJP) August 15, 2024
এরই সঙ্গে শুক্রবার দুপুর 2টো থেকে 4টে এই দু'ঘণ্টা সাধারণ মানুষকেও এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার ৷ বালুরঘাটের সাংসদের কথায়, "যে যেখানে থাকবেন, সেখান থেকেই দু'ঘন্টা তাঁদের কাজ বন্ধ রেখে এই অবরোধে সামিল হোন । সাধারণ মানুষ অরাজনৈতিকভাবে এবং সামাজিকভাবে কোনোরকম ঝান্ডা ছাড়াই এই প্রতিবাদে সামিল হোক । সবাই সামাজিক কর্মবিরতি পালন করুক এই দু'ঘণ্টা ।"
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে স্বাধীনতা দিবসের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ সেখান থেকে তিনিও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন । তাঁর কথায়, "দফা এক, দাবি এক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ ৷" তিনি বলেন,"মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অতীন ঘোষকে দিয়ে বুধবার রাতে আরজি করে হামলা করিয়েছে এবং নগরপাল বিনীত গোয়েল সব জানতেন তবুও নিষ্ক্রিয় ছিলেন । বিশেষ সম্প্রদায়ের দু’ হাজার মানুষকে হাওড়া, কামারহাটি ও বেলগাছিয়া থেকে জড়ো করে জুনিয়র ডাক্তারদের উপরে হামলা করানো হয়েছে । এটা ক্ষমারও অযোগ্য । অবিলম্বে আরজি করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দখলে দেওয়া উচিত কেন্দ্রীয় বাহিনীর । গতকালের হামলা তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকে দেওয়া উচিত ।"
বুধবার মধ্যরাতে যখন অগণিত মহিলারা রাত দখলের কর্মসূচিতে ব্যস্ত, তখনই একদল দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে । অভিযোগ, মহিলাদের কর্মসূচি থেকে নজর ঘোরাতে এবং তথ্য-প্রমাণ ধ্বংস করতেই বুধবার আরজি করে ভাঙচুর চালানো হয়েছে । তবে কলকাতা পুলিশের নগরপাল বিনীত গোয়েল সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে জানিয়েছেন, ক্রাইম সিন বা যেখানে ঘটনাটি ঘটেছিল অর্থাৎ সেমিনার হল অক্ষত রয়েছে । তাঁর এই বক্তব্যের পরও প্রতিবাদের আঁচ কমেনি ৷ হামলার ঘটনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা ।
বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেস এটা করিয়েছে ৷ কারণ যে মহিলা জাগরণ কাল হয়েছে, তাতে তারা ভীত । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অবস্থা দেখে এই দেশেও ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকেও উৎখাত করতে চাইছে । এর মানে তাঁর মধ্যে ভয় ঢুকে গিয়েছে । তার উপর মহিলাদের এই কর্মসূচি দেখে আরও ভয় পেয়ে গিয়েছেন তিনি । কাল সাতশোর উপর পুলিশ ছিল আরজি করে তাহলে তাদের সরিয়ে নেওয়া হল কেন । আর এই হামলা যে হবে তার কোনও খবর ছিল না কেন গোয়েন্দা বিভাগের কাছে? তার মানে চরম ব্যর্থতা পুলিশমন্ত্রীর । তাই এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ করা উচিত ।"
বিজেপি নেতা তথা কাউন্সিলর সজল ঘোষ বলেন, "পিসি আর ভাইপোর হয়ে 40 থেকে 50 জনের একটা ছোট গ্যাং এই কাজটা করেছে । আধ ঘণ্টার জন্য পুলিশ একটা বিরতি নিয়েছিল, সেই জন্য তারা ওই 40 থেকে 50 জনকে আটকাতে পারেনি । ভারতবর্ষের আগে স্থাপত্য যারা ভেঙেছিল এরাও সেই মোঘলের বংশধর ৷ এরাও কলকাতার শাহজাহান ।"
বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি চিকিৎসক ইন্দ্রনীল খাঁ-এর কথায়, "হাঁসখালি থেকে সন্দেশখালি, কামদুনি থেকে আরজি কর যেভাবে একটার পর একটা নারী নিগ্রহের ঘটনা ঘটে চলেছে, তার থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে বাংলার আইনশৃঙ্খলা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে । মেয়েদের কর্মসূচির থেকে নজর ঘোরাতে এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাটের কারণেই কোনও এক অজ্ঞাত কারণে আক্রমণ হল আরজি করে ৷ তাও একেবারে পুলিশের চোখের সামনে । এই হামলার দ্বায়িত্ব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত ।"