মেদিনীপুর, 23 অগস্ট: আরজি কর হাসপাতালে পড়ুয়া-চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য বিজেপির তরফ থেকে থানা ঘেরাও কর্মসূচি ডাক দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম থানায় ডেপুটেশন দিতে আসেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। যদিও ডেপুটেশন দেওয়ার আগে থেকেই পুলিশ নন্দীগ্রাম থানার দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপরই পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ধস্তাধস্তি বেধে যায়।
পুলিশের তরফে বলা হয়েছিল, তারা একটি নির্দিষ্ট প্রতিনিধিদলকে থানায় প্রবেশের অনুমতি দেবে ৷ কিন্তু বিজেপি কর্মীদের দাবি ছিল, তাঁরা সকলেই থানার ভিতরে ঢুকবেন। এরপর নন্দীগ্রাম থানার গেটের কাছে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের পুলিশ আটকে দেয়। তারপরই শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের তুমুল বচসা। পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়েন বিজেপি কর্মীদের একাংশ। পরে অবশ্য বিজেপির একটি প্রতিনিধিদল থানায় ডেপুটেশন জমা দেয় ৷ পরে বিজেপি কর্মীরা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে নন্দীগ্রাম থানার সামনে বিক্ষোভও দেখান ৷ সবমিলিয়ে বিজেপির কর্মসূচি ঘিরে উতপ্ত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গড় ।
অন্যদিকে, মেদিনীপুরে বিজেপির থানা ঘেরাও কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। যদিও শেষ পর্যন্ত থানা ঘেরাও না করে বিক্ষোভ মিছিল করে বিজেপি ৷ আর সেই মিছিল থেকেই সিবিআই তদন্ত এবং শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা নিয়ে রাজ্যকে বিঁধলেন দিলীপ ঘোষ ৷ এদিন প্রথমে তিনি জেলার ডিআই অফিসের নির্দেশিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, "ডিআই-এর কি অধিকার আছে এই নির্দেশিকা জারি করার ? এর আগে কলেজ স্কোয়ারে জমায়েত নিয়ে ফরমান জারি হয়েছিল। কেউ মানেনি। এখানেও তিনি সরকারি আধিকারিকদের দিয়ে এই ধরনের ফরমান জারি করে নিজেদের ইমেজ খারাপ করছেন। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। ডাক্তারদেরও আটকাতে পারেননি । শিক্ষক, পড়ুয়াদেরও আটকাতে পারবেন না।"
ডাক্তারদের উপর চাপ সৃষ্টি করা নিয়ে দিলীপ ঘোষের সোজা সাপটা উত্তর, "ডাক্তারদেরও আন্দোলন করার অধিকার আছে। যাঁরা অন্যের চিকিৎসা করবেন তাঁরা যদি ভয়ে থাকেন এবং নিরাপত্তা না পান তাহলে তাঁরা কাজ করবেন কেন ? সিকিউরিটি ফাস্ট এবং ট্রিটমেন্ট মাস্ট -এই দুটোই করতে হবে ডাক্তারদের।"
সন্দীপ ঘোষের বয়ানে অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন করলে দিলীপ বলেন, "ওঁকে কেউ বাঁচাতে পারবেন না। ডাক্তার, প্রিন্সিপালও বাঁচাতে পারবেন না। এই নিয়ে অনেকবার রাস্তায় হেঁটেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এবার আর তাঁকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। একাধিক কারণে গ্রাম ও শহরের মানুষের জমে থাকা ক্ষোভ চোখে পড়ছে ৷ তাই উকিল, ডাক্তার, সাধারণ মানুষ সকলেই প্রতিবাদে নেমেছেন। এর জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।"
দিলীপের কথায়, "কোটি কোটি কেস জমে আছে আদালতে ৷ তার জন্যই বিচার বিলম্বিত হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় পুলিশমন্ত্রী হয়েও চাইছেন এ ধরনের অপরাধ বাড়ুক রাজ্যে ! সন্দীপ ঘোষ নিশ্চয়ই কারও কোনও স্বার্থে এই কাজ করেছেন ৷ সুবিধা দিয়েছেন এবং টাকা দিয়েছেন তাই তাঁর পদোন্নতি হয়েছে। হয়তো অন্যান্য হসপিটালেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে । তবে সেগুলো বেরিয়ে আসছে না প্রকাশ্যে ৷ তাই কেউ জানতে পারছেন না।"
মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করে আর হাওয়াই চটির মালা পড়ে বিজেপির থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হল শুক্রবার দুর্গাপুর মহকুমার বিভিন্ন থানায় । পুলিশের সাথে চলল ধস্তাধস্তি। বিজেপির এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে পুলিশ, কমবাট ফোর্স এবং মহিলা পুলিশ তৈরি রাখা হয়েছিল। আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে চটির মালা পড়ে বিক্ষোভ। পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি। শুক্রবার বিকেলে দুর্গাপুরের কোকওভেন ও নিউ টাউনশিপ ও দুর্গাপুর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ।পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি। দলের জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দত্তর এবং জেলা সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিজেপি কর্মীরা গলায় চটির মালা পড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্ল্যাকার্ড পোড়ালো বিজেপি কর্মীরা। দুর্গাপুর স্টেশন থেকে একটি পদযাত্রা করে বিজেপি কর্মীরা কোকওভেন থানার সামনে বসে পড়ে তুমুল বিক্ষোভে সামিল হয়। দুর্গাপুর থানা জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দত্তের নেতৃত্বে ঘেরাও করা হয়। বাধা দিতে গেলে পুলিশের সাথে চলে তুমুল ধস্তাধস্তি। উত্তেজনা পরিস্থিতি সামাল দেয় কমব্যাট ফোর্স।
বিজেপির জেলা সহ সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ দত্ত বলেন, "আরজি করের নিশংস ঘটনার প্রতিবাদে স্বাস্থ্য দপ্তর ঘেরাও করেছিল একজন নেতৃত্ব। তখনই গ্রেপ্তার করা হয় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ বহু বিজেপি কর্মীকে। আজ আমরা তারই প্রতিবাদে থানা ঘেরাও করছি। রাজ্যের শাসকদলের আইন চলছে। গণতন্ত্র রোধ করা হচ্ছে। আরজি করের নৃশংস ঘটনার বিচারও আমরা চাইছি।।"