কলকাতা, 18 জুলাই: শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয় তাঁর দল ৷ 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ' উলটো সুর মেনে নিতে পারেনি বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা ৷ তাদের মতে, ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা ৷ এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই । সবাইকে নিয়ে চলাটাই গেরুয়া শিবিরের ভাবনা ।
সায়েন্স সিটিতে শুরু হয়েছে বঙ্গ বিজেপির রাজ্য কমিটির বৈঠক । কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি সেখানে উপস্থিত রয়েছেন বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বও । বুধবার সেই মঞ্চ থেকেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, সংখ্যালঘু মোর্চার কোনও প্রয়োজন নেই । তাঁর কথায়, "আগে বলেছি সবকা সাথ সবকা বিকাশ । আর বলব না ৷ এবার বলব যো হামারে সাথ হাম উসকে সাথ । সবকা সাথ সবকা বিকাশ বন্ধ করো ।"
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ'-এর ভাবনার উলটো সুরে কথা বলায় শুভেন্দুর মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে যায় ৷ বিজেপির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে চর্চা শুরু হয়ে যায় ৷ এই সুযোগকে কাজে লাগাতে ছাড়েনি রাজ্যের শাসকদলও । এই মন্তব্যের তীব্র কটাক্ষ করেন শান্তনু সেন এবং কুণাল ঘোষ । এদিকে, শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন তাঁর দলেরই সংখ্যালঘু মোর্চার সদস্যরাও ।
বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি চার্লস নন্দী বলেন যে, "এটা ওঁর ব্যক্তিগত মতামত উনি প্রকাশ করেছেন । তবে দলের ভাবনা হল সবকা সাথ সবকা বিকাশ । আর আমিও দলের ভাবনাতেই বিশ্বাসী । হায়দরাবাদের কর্মসমিতির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন যে, সবথেকে পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু মানুষের কাছে বিজেপিকে পৌঁছতে হবে, ভোটের আশায় নয়, সেবার আশায় । বিজেপি একাত্ম মানববাদে বিশ্বাস করে । সর্বস্পর্শী এবং সর্বমর্মী হতে হবে । এটা বিজেপির ভাবনা ।"
তিনি মনে করেন যে, এক সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘুরা বিজেপিকে ভোট দেন না, এটা ঠিক নয় । রাজ্যের বহু জায়গা রয়েছে যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিজেপিকে ভোটদানের হার বেশ ভালো । তবে হ্যাঁ, এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে খামতি রয়েছে ৷ সেইসব জায়গায় কী করে মানুষের আস্থা অর্জন করা যায় সেটা দেখতে হবে । তাই শুভেন্দু অধিকারী যা বলেছেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত ৷ এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই ।
শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যের পালটা জবাব দিয়ে সংখ্যালঘু মোর্চার সদস্য শামসুর রহমান বলেন যে, "উনি বিজেপির মূলে আঘাত করেছেন । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন 'সব কা সাথ সবকা বিকাশ' ৷ সংখ্যালঘু ভাইরা বিজেপির হৃৎপিণ্ড এবং হিন্দু ভাইরা বিজেপির মস্তিষ্ক । তাহলে তো উনি প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা করেছেন । বাংলার সংখ্যালঘুদের সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যের বিজেপি সংখ্যালঘুদের গুলিয়ে ফেললে চলবে না । একদিন সংখ্যালঘুরা বিজেপি দলটাকে এই রাজ্যে তৈরি করতে একটা বিরাট ভূমিকা নিয়েছিল । শুভেন্দুবাবু হয়তো ইতিহাসটা ঠিক জানেন না । শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং অধ্যাপক আবদুল আলি এই রাজ্যে গেরুয়া দলটাকে তৈরির মূল কাণ্ডারী ছিলেন ৷ আজকে আমাদের এই গৈরিক পতাকাও তৈরি করেছেন অধ্যাপক আবদুল আলি । তাহলে তো শুভেন্দু অধিকারী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করছেন ।"