আমতলা, 18 জুন: দলের কর্মী-সমর্থকদেরই বিক্ষোভের মুখে পড়ল বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ৷ আটকে দেওয়া হল তাদের কনভয় ৷ ভোট পরবর্তী হিংসার জেরে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের প্রায় শতাধিক বিজেপি কর্মী-সমর্থক এখনও ঘরছাড়া, অভিযোগ গেরুয়া শিবিরের ৷ আক্রান্ত সেইসব বিজেপি-কর্মী সমর্থকদের ঠাঁই হয়েছে ডায়মন্ড হারবার বিজেপির সাংগঠনিক জেলার দলীয় কার্যালয়ে ৷ সেখানেই প্রতিনিধিদের এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় ৷ এদিকে রাজ্যে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করেছে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ৷ এমনকী তাঁকে শুধরে যাওয়ার নিদানও দিয়েছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব ৷
মঙ্গলবার সকালে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত আমতলা এলাকায় ডায়মন্ড হারবার বিজেপির সাংগঠনিক জেলার দলীয় কার্যালয়ে আক্রান্ত বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দেখা করতে যান বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের বিপ্লব দেব, পাটনা সাহিবের বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ, রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ ব্রিজ লাল এবং কবিতা পতিদার ৷ তাঁদের সঙ্গে ছিলেন রাজ্য বিজেপির মহিলা মোর্চা সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পল ৷ প্রতিনিধি দল আমতলার আলতাবেরিয়া এলাকায় পৌঁছলে তাঁদের কনভয় আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের আক্রান্ত ও ঘরছাড়া বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা ৷
আক্রান্তরা ও ঘরছাড়া কর্মী-সমর্থকরা দাবি করেন, তাঁরা যখন হিংসার কারণে ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন, তখন বিজেপি জেলা সভাপতি অভিজিৎ সর্দার ও মণ্ডল সভাপতি তাঁদের কোনও খোঁজ নেননি ৷ উলটে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের ভুল বোঝানো হয়েছে ৷ এই অবস্থায় প্রতিনিধি দলের সদস্য নবনির্বাচিত বিজেপি সাংসদ বিপ্লব দেব গাড়ি থামিয়ে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের আক্রান্ত এবং ঘরছাড়া বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের কথা শোনেন ৷ সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন ৷ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সামনেই জেলা সভাপতি অভিজিৎ সর্দারকে নিশানা করেন আক্রান্ত বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা ৷
রবিবার রাতে রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কলকাতায় আসে বিজেপির এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম ৷ এদিন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, "বিজেপি কর্মীরা ভয়ে গ্রামে আসতে পারছেন না ৷ আমরা এখানে বসে প্রতিবাদ জানাচ্ছি ৷ এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেমন শাসন যে, গোটা গ্রামটাই খালি করে দিয়েছে ৷"
রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও ত্রিপুরার সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দেন ৷ তিনি বলেন, "আপনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) শুধরে যান, নয়তো শুধরে দেব ৷ আপনি কমিউনিস্টদের 34 বছরের দীর্ঘ শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন, তাতে আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই ৷ কিন্তু তারপরে আপনি কী করেছেন ? আপনি যা করেছেন, কমিউনিস্টরা তা করেনি ৷ আপনি বাংলার মাটিকে হেয় করেছেন ৷"
দক্ষিণ আসানসোলের বিধায়ক তথা বিজেপির মহিলা মোর্চা সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পল বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে 2021 সালে বিধানসভা ভোটের পর যেভাবে হিংসার ঘটনা ঘটেছিল, তারপরও তিনি বলেছিলেন, কিছুই ঘটেনি এবং সবকিছু শান্তিতে রয়েছে ৷ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এখানে এসেছিল এবং তার মামলা এখনও চলছে ৷ দশ হাজার লোক অসম ও বিহারে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন ৷ 2024 সালে লোকসভা ভোটের পর সেই হিংসার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর মন্ত্রী এবং পুলিশের কাছ থেকে আমাদের কোনও প্রত্যাশা নেই ৷ আমাদের দলের কর্মীদের সুবিচারের জন্য যতদূর সম্ভব যাব ৷"
এই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলটি সোমবার কোচবিহারে গিয়ে ভোট পরবর্তী হিংসা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ৷ ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সাংবাদিকদের বলেন, "ভোটের ফলাফল বেরনোর পর হিংসার ঘটনা তৃণমূলের একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ৷ যত দ্রুত তৃণমূল বিরোধীদের উপর হামলা চালানোর এই অভ্যাস বদলাবে, দলের জন্য ততই ভালো হবে ৷"
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলটি সারা রাজ্য ঘুরে সব বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের অবস্থা দেখবে ৷ এর আগে আক্রান্ত ও ঘরছাড়া বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দফায় দফায় দেখা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মতো বাংলার বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।