কলকাতা, 1 অগস্ট: বিজেপির লাগাতার বয়কটের জেরে অবশেষে অবস্থান বদলালেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ! "কারও ধর্মকে আঘাত করার অভিপ্রায় আমার ছিল না।" বৃহস্পতিবার বিধানসভায় এমনটাই জানালেন তিনি। আর এই বক্তব্যের শেষে তাঁকে বয়কটের প্রশ্ন থেকে সরে দাঁড়াল বিজেপি। সবমিলিয়ে গত কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা অচলাবস্থা কেটে গেল !
গত কয়েকদিন ধরে বারবার রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে বয়কট করতে দেখা গিয়েছে প্রধান বিরোধীদল বিজেপিকে। মূলত বিধানসভার বাইরে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর করা বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই এই অবস্থান নিয়েছিল গেরুয়া শিবির। এক্ষেত্রে মন্ত্রী বলতে উঠলেই দল বেঁধে বিধানসভার বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন বিজেপি বিধায়করা। আবার তাঁর বক্তব্যের শেষে বিধানসভায় প্রবেশ করছিলেন। মন্ত্রী হিসেবে তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন না দলের বিধা ?
বৃহস্পতিবার এই অবস্থানের মুখে পড়ে অবশেষে নিজের বক্তব্য স্পষ্ট করলেন ফিরহাদ। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিনি বিবৃতিও দিলেন। এদিন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র বলেন, "যখনই আমি কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে যাচ্ছি সে সময় এভাবে বিজেপি বিধায়কদের বেরিয়ে যাওয়াটা অস্বস্তিকর। আমার কোনও উক্তির কেউ যদি অপব্যাখা করে তাহলে আমার কী করার আছে ? আপনারা যাঁরা আছেন তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে বুকে হাত দিয়ে আমাকে বলুন, আপনারা আমাকে ধর্মনিরপেক্ষ ভাবেন কী ভাবেন না ? একটা জায়গায় আমি কী মন্তব্য করলাম তা নিয়ে এভাবে রাজনীতিকরণ করা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না।"
এরপরই বিষয়টি নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, "মন্ত্রী যা বলেছেন তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। যে অনুষ্ঠানে আপনি গিয়েছিলেন তা একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুষ্ঠান। সেখানে যেতেই পারেন তাতেও আমাদের কোনও আপত্তি নেই। সেখানে মন্ত্রী এবং মহানগরিক হিসেবেই আপনাকে ডাকা হয়েছিল। আমরা সকলেই স্বামীজির মন্ত্রে বিশ্বাসী ৷ আমরা নিজের ধর্মের প্রতি আস্থাশীল ও অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আপনি যে অনুষ্ঠানে গিয়েছেন তার প্রশংসা করবেন এটা স্বাভাবিক। তবে আমাদের মনে হয়েছে, এটা নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধানের পরিপন্থী। এটা সঠিক নয়। এক্ষেত্রে সব বিষয়টা মিটে যাবে যদি আপনি বলেন, অন্যেরা আঘাত পেয়ে থাকলে আপনি দুঃখিত।"
এরপর বিধানসভায় নিজের ঘরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফিরহাদ। সেই সময় তিনি বলেন, "আমি ওই নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ বলেই ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছি। সে কারণেই আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে কোনও ধর্মকে আঘাত করব তা আমি ভাবতেই পারি না। কারণ আমি নিজে সব ধর্মকে সম্মান করার বিশ্বাসে বড় হয়েছি। সেই সম্মান আমি সারা জীবন দিয়ে এসেছি।" তিনি আরও বলেন, "আমার কখনওই কারও ধর্মকে আঘাত করার অভিপ্রায় ছিল না। আমি ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবনাতেই বড় হয়ে এসেছি। আগামিদিনেও এভাবেই চলব।"