কলকাতা, 6 নভেম্বর: মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে জোড়া এফআইআর দায়ের হওয়া নিয়ে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে ৷ পুলিশের বিরুদ্ধে চাটুকারিতা এবং তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার অভিযোগ করলেন বঙ্গ-বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ অন্যদিকে, পালটা মিঠুন চক্রবর্তীকে সংযত ও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিলেন, তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার ৷
মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার সকালে কলকাতা ও বিধাননগর পুলিশে বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে দু’টি লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৷ সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে এমন মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে ৷ যদিও, পুরো বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে অভিযোগ করেছে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব ৷ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷
সুকান্ত সোশাল মিডিয়ায় লেখেন, "রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে কাপুরুষোচিতভাবে রাজ্যের চাটুকার পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবহার করা হচ্ছে ৷ আরও একবার ভারত বিখ্যাত অভিনেতা এবং ভারতীয় জনতা পার্টির বরিষ্ঠ নেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে হেনস্তা করার অপচেষ্টা করলেন রাজ্যের ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়...৷ শুধুমাত্র রাজনৈতিক শত্রুতা চরিতার্থ করার জন্য তাঁকে মিথ্যা অপবাদে ফাঁসিয়ে দেওয়ার মতো কুরুচিপূর্ণ কাজ করলেন রাজ্যের নৃশংস, জনবিচ্ছিন্ন এবং ব্যর্থতম মুখ্যমন্ত্রী ৷"
একদিকে সুকান্ত যখন মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ৷ তখন, রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য, মিঠুন চক্রবর্তীর মন্তব্যকে হুমায়ুন কবীরের করা উস্কানিমূলক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া বলে দাবি করলেন ৷ আর এফআইআর প্রসঙ্গে তাঁর মত, "ওই এফআইআর মিঠুন চক্রবর্তীও বুঝে নেবেন, আর বিজেপিও বুঝে নেবে ৷"
তবে, দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা তথা রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের সঙ্গত বলেই মনে করছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ এই নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, "পশ্চিমবঙ্গটা মিঠুন চক্রবর্তী পৈত্রিক সম্পত্তি নাকি, যে তিনি যাঁকে খুশি পুঁতে দেবেন বলছেন ৷ অভিনেতা হিসেবে তিনি ভালো কাজ করতে পারেন ৷ কিন্তু, তাঁর এই ধরনের বক্তব্য কোনও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ সমর্থন করতে পারেন না ৷"
তাঁর কথায়, "লোকসভা ভোটে ভরতপুরের বিধয়াক যে মন্তব্য করেছিলেন, তা দলনেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেন্সর করেছিলেন ৷" তবে, এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও নিশানা করেছে তৃণমূল ৷ জয়প্রকাশ বলেন, "মিঠুন চক্রবর্তী অমিত শাহকে পাশে বসিয়ে এ ধরনের কথা বলেছেন ৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সেই কথা শুনে হাততালি দিচ্ছিলেন ৷ তাহলেই ভাবুন ! তৃণমূল কংগ্রেসের কেউ কিছু করলে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেন তিনি ৷ বিজেপির ক্ষমতা থাকলে মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক ৷"
প্রায় একই সুরে তৃণমূলের কুণাল ঘোষ বলেন, "যে কোনও দায়িত্বশীল নাগরিকের মিঠুন চক্রবর্তীর করা মন্তব্য ভালো লাগবে না ৷ তাই তেমনই কোনও ব্যক্তি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন ৷ সুকান্ত মজুমদারের উচিত পুলিশকে চাটুকার না-বলে, মিঠুন চক্রবর্তীকে সংযত হতে বলা ৷"
মিঠুন চক্রবর্তীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে হওয়া এফআইআরকে সমর্থন করেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় ৷ তিনি বলেন, "মিঠুন চক্রবর্তী একজন স্বনামধন্য অভিনেতা ৷ তাঁর কৃষ্টি, সংস্কৃতি নিয়ে কোনও কথা হবে না ৷ আমি তাঁর অনুরাগী বলাই চলে ৷ কিন্তু, যখন রাজনীতিতে আসছেন, তখন রাজনীতিক হিসেবে তাঁর কিছু দায়-দায়িত্ব থেকে যায় ৷ সাবধানে কথাবার্তা বলা জরুরি ৷ ফলে উনি যদি উস্কানিমূলক মন্তব্য করে থাকেন এবং এফআইআর হয়ে থাকে, তাহলে আইনের শাসনে উনিও যা, একজন সাধারণ নাগরিকও তাই ৷ উস্কানিমূলক মন্তব্য করতে পারেন না ৷ সংবিধান-বিরোধী কোনও মন্তব্য করা যায় না ৷ ওঁর বিরুদ্ধে পুলিশ যথাযথ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিক ৷"
সিপিআইএম নেতা রবীন দেবের বক্তব্য," মিঠুন চক্রবর্তীর একজন বিখ্যাত অভিনেতা ৷ অভিনয় জগৎ থেকে তিনি রাজনীতিতে যোগ দিলেন ৷ প্রথমে তৃণমূল, তারপরে বিজেপি ৷ কথায় আছে অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ হয় ৷ মানুষ তাঁর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলি হারিয়ে ফেলেন ৷ রাজনীতিতে আসার আগে তাঁর নানান, মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে ৷ কিন্তু, যখন রাজনীতির মঞ্চে এসেছেন, তখন সংবিধান-বিরোধী কোনও মন্তব্য করলে, তার যথাযথ আইনত ব্যবস্থা হবে ৷ আদালত দেখবে বিষয়টি ৷ যদি, তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে কোনও যুক্তি দিতে পারেন, তাহলে সেটা আদালতেই দেবেন ৷"