সন্দেশখালি, 18 জুন: সন্দেশখালিতে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে তুলোধনা করলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় দলের নেতৃত্ব দেওয়া ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব দেব । তিনি বলেন, "সরকারি মদতে এখানে গুন্ডামি চলছে । আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই গুন্ডামিকে প্রশয় দিচ্ছেন । এর আগেও তিনি সন্দেশখালির 'ত্রাস' শেখ শাহজাহানের মতো গুন্ডাদের প্রোটেকশন দিয়ে এসেছেন । তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে মমতা বন্দোপাধ্যায় এই সমস্ত গুন্ডাদের উৎসাহ দিয়ে এসেছেন । তাই, তিনি যে তাঁর দলের গুন্ডাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেবেন না এটাই স্বাভাবিক ।"
এরপরই রাজ্যের শাসকদলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিজেপি সাংসদ বিপ্লব দেব বলেন, "আমি তৃণমূলের গুন্ডাদের বলব, ভাই, সাবধান হয়ে যাও । নইলে কপালে দুঃখ আছে । ফের কোনও তফসিলি ভাই-বোনেদের উপর হামলা হলে রক্ষে নেই ! কারওকে ছাড়া হবে না । সংবাদ মাধ্যমের সামনে এটা বলে গেলাম । ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে থাকতে হলে দেশের আইনকানুন, সংবিধান মেনে চলতে হবে । তফসিলি জাতি-উপজাতিদের অধিকার, বঞ্চনা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না । যাঁরা এসব করতে পারবেন না, তাঁদের এদেশে থাকার কোনও অধিকার নেই । এদেশ থেকে তাঁরা চলে যেতে পারেন।"
মঙ্গলবার বিকেলে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালিতে আসে বিজেপির চার সদস্যের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম । বিপ্লব দেব, রবিশঙ্কর প্রসাদ ছাড়াও এই দলের সঙ্গে ছিলেন বিজেপির পরাজিত প্রার্থী রেখা পাত্র, দলের মহিলা নেত্রী অর্চনা মজুমদার, ফাল্গুনি পাত্র-সহ অন্যান্য নেতারা ৷ এদিন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের সদস্যরা প্রথমেই যান সন্দেশখালির সরবেড়িয়া এলাকায় । সেখানে আক্রান্ত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে গিয়ে তাঁরা কথা বলেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে । তাঁদের অভাব-অভিযোগও এদিন মনোযোগ সহকারে শোনেন বিপ্লব দেব, রবিশঙ্কর প্রসাদের মতো দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ।
সেখান থেকে বেরিয়ে তাঁরা ছোটবিট পোলের 42 ও 45 নম্বর বুথের বামনঘেরি এলাকায় যান । সেখানেও আক্রান্ত বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের আশ্বস্ত করতে দেখা দিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের সদস্যদের । আক্রান্ত কর্মীদের সমস্ত অভাব-অভিযোগ এদিন নথিভুক্ত করেছে বিপ্লব দেবের নেতৃত্ব চার সদস্যের প্রতিনিধি দল । দিল্লিতে ফিরে সেই সমস্ত নথি রিপোর্ট আকারে পেশ করা হবে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নাড্ডার কাছে, জানিয়েছেন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের আহ্বায়ক বিপ্লব দেব ।
তিনি এবিষয়ে বলেন, "এখানে এসে যা পরিস্থিতি দেখলাম তা ভয়াবহ । গরিব তফসিলি পরিবারের বাড়ি যেভাবে ভাঙচুর করা হয়েছে তা নিন্দার ভাষা নেই । এঁদের এত আর্থিক ক্ষমতাও নেই যে ভাঙা বাড়ি মেরামত করে নেবে । শুধু তাই নয়, বিজেপিকে ভোট দেওয়ার অপরাধে কল থেকে জলও আনতে পারছেন না এঁরা । শেখ শাহজাহান জেলে রয়েছে ঠিকই । কিন্তু,তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোরা এখনও অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে সন্দেশখালির বিভিন্ন প্রান্তে । এর আগে সন্দেশখালির ঘটনা গোটা দেশের মানুষ দেখেছিল । এবার ভোট পরবর্তী হিংসাও দেখছে জনগণ । আমরা এই সমস্ত তফসিলি গরিব মানুষের সুরক্ষার ব্যবস্থা করব । তার জন্য যা যা করণীয় তাই করা হবে ।"
এদিকে, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের সন্দেশখালি আসার প্রসঙ্গে বিজেপির পরাজিত প্রার্থী রেখা পাত্র বলেন,"ওঁদের সামনে গ্রামের মানুষজন অভাব-অভিযোগ জানিয়েছেন । সেই অভিযোগ শুনেছেন তাঁরা । আশ্বস্ত করেছেন সাধারণ মানুষকে । যা যা পদক্ষেপ করার তা তাঁরা করবেন ।" তাঁর অভিযোগ, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কীভাবে ভোটে জিতেছেন, তাঁর সেই কারসাজি মানুষ ধরে ফেলেছেন । সাধারণ মানুষই এখন অভিযোগ করছেন । নতুন করে আমার কোনও অভিযোগ করার প্রয়োজন নেই ।"