কলকাতা, 26 সেপ্টেম্বর: এক দেশ এক নির্বাচনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির উপর নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে চাইছে । বৃহস্পতিবার এমনই অভিযোগ করলেন রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় । তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক লুকোনো অ্যাজেন্ডা রয়েছে, যা ধাপে ধাপে প্রকাশ পাচ্ছে । লোকসভার অধ্যক্ষের আলোচনা থেকে মনে হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের হাতে থাকা বিভিন্ন সংস্থাগুলিতে নিজের প্রভাব খাটিয়ে রাজ্য সরকারের ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা করছে ।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি অধ্যক্ষদের কনফারেন্সে যোগ দিতে দিল্লি গিয়েছিলেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় । এ দিন সেই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েই রাজ্যের ক্ষমতা খর্ব করার অভিযোগ করেন তিনি ৷ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ধরনের প্রচেষ্টা দুর্ভাগ্যজনক । রাজ্য সরকারগুলির নিজস্ব স্বায়ত্তশাসন থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । আমরা বিধানসভায় থাকা স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলোতেও হস্তক্ষেপ করি না । এরা স্বাধীনভাবে কাজ করে বিধানসভায় রিপোর্ট দেয় । অনেক সময় সরকার তা মেনে নেয় ৷ অনেক সময় মানে না । কিন্তু তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার কোনও ইচ্ছা আমাদের নেই ।’’
অধ্য়ক্ষ আরও বলেন, ‘‘এক দেশ এক ভোট এই বিল এখনও লোকসভায় আসেনি । এই বিল লাগু করতে গেলে রাজ্য বিধানসভাতেও তা পাশ করাতে হবে । দরকার সংবিধান সংশোধনের । তবে অতীতের একটা ঘটনা থেকে আমরা দেখেছি । যখন ওরা দেখবে ওদের প্রয়োজনীয় সংখ্যা নেই, তখন বিরোধী সাংসদদের বাইরে রেখে বিল পাশের চেষ্টা হতে পারে ।’’
এই বিষয়টি যে অধ্যক্ষদের সম্মেলনে উঠেছিল, সেটাও বলেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর কথায়, ‘‘সম্প্রতি দিল্লিতে হওয়া অধ্যক্ষদের সম্মেলনে লোকসভার অধ্য়ক্ষ ওম বিড়লা এক দেশ এক ভোট নিয়ে একটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন । এক্ষেত্রে আমাদের লোকাল বডি বা পঞ্চায়েতস্তরে যে সমস্ত জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন, তাদের নিয়ে একটি সংস্থা তৈরি করতে চান । এই সংস্থা ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে সদস্যদের যে এজেন্ডা দেবে সেগুলিকে সামনে রেখেই আগামিদিনে কাজ করতে হবে বলা হচ্ছে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে আমি আপত্তি জানিয়েছি । আমি প্রশ্ন তুলেছি, আপনাদের রুল কোথায় আছে ! পঞ্চায়েত পরিচালিত হয় রাজ্যের আইনের মাধ্যমে । যা বলা হচ্ছে, তার বাস্তবতা কী আছে ?’’ এদিন অধ্যক্ষ অভিযোগ করেছেন, ‘‘কেন্দ্র ধাপে ধাপে রাজ্যের উপর তাদের সমস্ত প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে । রাজ্যে যেভাবে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থা রয়েছে, দেশের অন্য কোনও রাজ্যে সেভাবে পঞ্চায়েতের ব্যবস্থা নেই ।’’
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন অধ্যক্ষ । তিনি এই বিষয়টি অধ্যক্ষদের সম্মেলনেও তুলেছিলেন বলে জানান । বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমি ওই বৈঠকে বলেছি বিধায়কদের বাড়িতে হঠাৎ হঠাৎ সিবিআই-ইডি রেড করে দিচ্ছে । তাঁরা ভয়মুক্ত হয়ে কাজ করতে পারছে না । তাঁরা মানুষের জন্য কাজ করবে কীভাবে ! তাঁরা তো সবসময় আতঙ্কে থাকছে, তখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি তাদের বাড়িতে চলে আসবে !’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি এই বিষয়টি নিয়ে সিবিআইকে চিঠিও দিয়েছিলাম । আপনারা এমন কিছু কাজ করবেন না, যাতে আমাদের বিধায়কদের পরিষদীয় কাজ করতে গিয়ে ব্যাঘাত ঘটে । দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি তার কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি । তবে এমনটা হওয়া বাঞ্ছনীয় নয় ৷’’