ETV Bharat / state

‘হটস্পট’ বসিরহাট কেন্দ্রে কি এবার তৃণমূল গড় রক্ষা করতে পারবে ? - Lok Sabha Election 2024

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : May 29, 2024, 3:23 PM IST

Basirhat Constituency West Bengal Lok Sabha Election 2024 Party Wise Candidates: বসিরহাট ৷ উত্তর 24 পরগনার এই লোকসভা আসনে এবার নজর রয়েছে সকলের ৷ তার অন্যতম কারণ, এই আসনের মধ্যে পড়ছে সন্দেশখালি ৷ বিজেপি সন্দেশখালির প্রতিবাদী মুখ রেখা পাত্রকে প্রার্থী করেছে ৷ সিপিএমও ওই এলাকার মানুষের জন্য লড়তে গিয়ে গ্রেফতার হওয়া নিরাপদ সর্দারকে টিকিট দিয়েছে এবার ৷ বিরোধীদের এই চ্যালেঞ্জ উড়িয়ে জিততে পারবেন তৃণমূলের প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম ? বসিরহাটের কুর্সি কার দখলে যাবে, সেটাই খতিয়ে দেখল ইটিভি ভারত ৷

Basirhat Constituency West Bengal
বসিরহাট লোকসভা (ইটিভি ভারত)

বসিরহাট, 29 মে: 'হটস্পট' বসিরহাট কেন্দ্রে এবার জমে উঠেছে নির্বাচনী লড়াই । এই কেন্দ্র থেকেই এবার সিপিএম ও বিজেপি, উভয়ই সন্দেশখালির দুই প্রতিবাদী মুখকে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছে । একজন নিরাপদ সর্দার, অন‍্যজন রেখা পাত্র । যাঁদের প্রতিবাদী মুখকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে বাজিমাত করতে চাইছে বাম ও গেরুয়া শিবির ।

বসিরহাটের কুর্সিতে বসবেন কে ? (ইটিভি ভারত)

তবে, তৃণমূলও কোনও খামতি রাখছে না । শাসকদল দুর্গ ধরে রাখতে এবারে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির তৃণমূল নেতা তথা হাড়োয়ার বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলামের উপরই ভরসা রেখেছে । নির্বাচনের আগে তিনি তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের প্রায় প্রতিটি বিধানসভা এলাকাতেই চষে বেড়াচ্ছেন । বাম, বিজেপি, তৃণমূল ! ভোটের ময়দানে কেউ, কাউকে একচুলও জায়গা ছাড়তে নারাজ । তাই, সপ্তম দফার নির্বাচনে হাইভোল্টেজ এই কেন্দ্রের দিকে নজর সকলের ।

বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রটি ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত । নদী ভাঙন, সীমান্তে চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ বসিরহাটের দীর্ঘদিনের সমস্যা । বহু রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে এখানে । কিন্তু, আজও এই সমস্যায় জর্জরিত সীমান্ত এবং নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা । ভোট আসে ভোট যায় ! রাজনৈতিক নেতাদের গালভরা প্রতিশ্রুতি সীমান্তের অন্ধকার গলিতে মিলিয়ে যায় বলে অভিযোগ । বসিরহাটের রাজনৈতিক ইতিহাসও বেশ পুরনো ও বৈচিত্র্যময় । এই লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে মোট সাতটি বিধানসভা রয়েছে । যার বেশিরভাগই গ্রামীণ এলাকা । অর্থাৎ জনসংখ্যার একটা বড় অংশ গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাস করে । যেখানে কৃষিই মূলত তাঁদের পেশা ।

Basirhat Constituency West Bengal
বসিরহাট কেন্দ্রে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী (ইটিভি ভারত)

আরও পড়ুন:

বসিরহাটের সাতটি বিধানসভা হল: 1. বসিরহাট উত্তর, 2. বসিরহাট দক্ষিণ, 3. হাড়োয়া, 4. মিনাখাঁ, 5. হিঙ্গলগঞ্জ,
6. বাদুড়িয়া, 7. সন্দেশখালি ৷

এই কেন্দ্রের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রটি 1952 সালে ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের সময় প্রতিষ্ঠিত হয় । সেই সময় এটি দুই সদস্য়ের কেন্দ্র ছিল, যেখানে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার (সিপিআই) রেণু চক্রবর্তী এবং কংগ্রেসের প্রতিমা রায় নির্বাচিত হয়েছিলেন । পরবর্তী কয়েক দশক ধরেও, এই কেন্দ্রটি সিপিআই এবং কংগ্রেসের মধ্যে ক্ষমতা বদলের সাক্ষী হয়েছে । 1980 থেকে 2004 সাল পর্যন্ত সিপিআই এই কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল ।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটভূমি: 2009 সালে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) প্রথমবারের জয়ের স্বাদ পায় বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে । ক্ষমতাচ‍্যুত হয় বামেরা । সেবার জয়ী হয়েছিলেন হাজি নুরুল ইসলাম । যদিও 2014-র নির্বাচনে তৃণমূল তাঁকে টিকিট দেয়নি । পরিবর্তে তৃণমূলের ইদ্রিস আলি প্রার্থী হন সেখান থেকে । তবে, প্রার্থী বদল করা হলেও শাসক শিবিরের জয়ের ধারা আটকানো যায়নি । হাজি নুরুলের মতো ইদ্রিস আলিও জয়ী হন বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে ।

Basirhat Constituency West Bengal
2019 লোকসভা ভোটের ফলাফল (ইটিভি ভারত)

2019 সালের নির্বাচনে দল বিদায়ী সাংসদ ইদ্রিস আলির উপর ভরসা না রেখে অভিনেত্রী নুসরত জাহানকে নিয়ে আসে এই কেন্দ্রে । তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি জয়ী হয়ে মুখরক্ষা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । সেবারের ভোট নুসরত জাহান 7 লক্ষ 82 হাজার 78 ভোট পেয়েছিলেন । বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীকে পিছনে ফেলে গেরুয়া শিবির অবশ্য দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে । বিজেপির সায়ন্তন বসু সেবার 4 লক্ষ 31 হাজার 709 ভোট পেয়েছিলেন । জোট প্রার্থী কাজি আব্দুর রহিম সর্বসাকুল্যে পেয়েছিলেন 1 লক্ষ 4 হাজার 183 ভোট । নুসরত জাহান জয়ী হয়েছিলেন 3 লক্ষ 50 হাজার 369 ভোটে ।

ভোটারদের জনসংখ্যা ও আঞ্চলিক বিন্যাস: বসিরহাট কেন্দ্রে তফসিলি জাতি-উপজাতি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসবাস বেশি । হাড়োয়া, বসিরহাট উত্তর ও দক্ষিণ এবং বাদুড়িয়া । এই সমস্ত বিধানসভা এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বেশি বসবাস করেন । বাকি তিনটি বিধানসভা এলাকাতে তফসিলি জাতি-উপজাতি ও অন‍্যান‍্য সম্প্রদায়ের লোকজনের আধিক্য বেশি । প্রায় 52 শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে এখানে । ফলে, এই ভোটের উপর বসিরহাট কেন্দ্রের জয়-পরাজয় নির্ভর করে অনেকটাই । তাই, সংখ্যালঘু ভোট হাতছাড়া করতে চাইবেন না কোনও রাজনৈতিক দলই ।

সন্দেশখালি ও শেখ শাহজাহান অধ্যায়: 2024-র লোকসভা নির্বাচনে সন্দেশখালি ইস্যু হট টপিক রাজ‍্য রাজনীতিতে । শেখ শাহজাহান অধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছে । বিশেষ করে শেখ শাহজাহান ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে যেভাবে সন্দেশখালির মহিলারা গর্জে ওঠেন এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব হন । তাতে অক্সিজেন জুগিয়েছে বিরোধী শিবিরকে । তবে, সাম্প্রতিক সময়ে সন্দেশখালি নিয়ে একের পর এক ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ায় কিছুটা হলেও কোণঠাসা পদ্ম শিবির ।

তবে, এই ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে অভিযোগ, পালটা অভিযোগ রয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে । এই নিয়ে রাজনৈতিক চর্চাও চলছে সমানভাবে । যা ভোটের উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বসিরহাট কেন্দ্রে । যদিও, সন্দেশখালি ইস্যু হোক কিংবা শেখ শাহজাহান অধ‍্যায় । তার কোনও প্রভাব নির্বাচনে পড়বে কি না, তা তো বলবে সময়ই । তবে, এর রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে বিরোধী বাম ও বিজেপি যে কোনও কসুর করছে না, তা কিন্তু স্পষ্ট তাদের নির্বাচনী বক্তব্য থেকেই ।

সন্দেশখালির ঘটনার প্রেক্ষিত বুঝতে হলে ফিরে যেতে হবে কয়েক মাস আগে । গত 5 জানুয়ারি রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্ত করতে শাজাহানের সরবেড়িয়া আকুঞ্জি পাড়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাহিনীর হাতে । আক্রান্ত হতে হয় ইডি ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের । সেই ঘটনার পরপরই একে একে সামনে আসতে শুরু করে শেখ শাহজাহান ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে নানা কার্যকলাপ । জোর করে জমি দখল, নারী নির্যাতন, জমিতে নোনাজল ঢুকিয়ে সেখানে গায়ের জোরে ভেড়ি বানানো। সবকিছুতেই খড়গহস্ত ছিলেন শাহজাহান ও তাঁর বাহিনী ।

এসব অভিযোগ ঘিরেই প্রতিবাদের আগুন আছড়ে পড়েছিল সন্দেশখালির গ্রামে গ্রামে । যা ঘিরে দিনের পর দিন সরগরম হয়েছিল সন্দেশখালি । পরবর্তীতে সিবিআই ও ইডি তদন্ত হাতে নিতেই একে একে ধরা পড়ে সন্দেশখালির 'মাস্টারমাইন্ড'-রা । তারপরও ধিকিধিকি আগুন কিন্তু মাঝেমধ্যেই জ্বলে উঠছে সেখানে । সেটা রেখা পাত্র অথবা মাম্পি দাসের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হোক কিংবা আন্দোলনে পুলিশি জুলুমবাজির অভিযোগ । যা ঘিরে তপ্ত সন্দেশখালিতে রাজনৈতিক বাকযুদ্ধ চলছেই !

সন্দেশখালি ইস্যু যে এবার বসিরহাটের নির্বাচনে হট টপিক হতে চলেছে, তা বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । এরাজ্যে নির্বাচনী সভা করতে এসে বারবার তাঁদের মুখে উঠে এসেছে সন্দেশখালির প্রসঙ্গ ! পালটা, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দু'জনেই নির্বাচনী জনসভা থেকে সন্দেশখালির ঘটনাকে বিজেপির চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন ।

সবমিলিয়ে, সন্দেশখালি ইস্যুকে ঘিরে শাসক ও বিরোধীর তরজায় রীতিমতো জমজমাট বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র । তবে, বসিরহাটের কুর্সি কার দখলে যাবে ? তার উত্তর মিলবে 4 জুন ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরই !

আরও পড়ুন:

বসিরহাট, 29 মে: 'হটস্পট' বসিরহাট কেন্দ্রে এবার জমে উঠেছে নির্বাচনী লড়াই । এই কেন্দ্র থেকেই এবার সিপিএম ও বিজেপি, উভয়ই সন্দেশখালির দুই প্রতিবাদী মুখকে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছে । একজন নিরাপদ সর্দার, অন‍্যজন রেখা পাত্র । যাঁদের প্রতিবাদী মুখকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে বাজিমাত করতে চাইছে বাম ও গেরুয়া শিবির ।

বসিরহাটের কুর্সিতে বসবেন কে ? (ইটিভি ভারত)

তবে, তৃণমূলও কোনও খামতি রাখছে না । শাসকদল দুর্গ ধরে রাখতে এবারে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির তৃণমূল নেতা তথা হাড়োয়ার বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলামের উপরই ভরসা রেখেছে । নির্বাচনের আগে তিনি তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের প্রায় প্রতিটি বিধানসভা এলাকাতেই চষে বেড়াচ্ছেন । বাম, বিজেপি, তৃণমূল ! ভোটের ময়দানে কেউ, কাউকে একচুলও জায়গা ছাড়তে নারাজ । তাই, সপ্তম দফার নির্বাচনে হাইভোল্টেজ এই কেন্দ্রের দিকে নজর সকলের ।

বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রটি ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত । নদী ভাঙন, সীমান্তে চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ বসিরহাটের দীর্ঘদিনের সমস্যা । বহু রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে এখানে । কিন্তু, আজও এই সমস্যায় জর্জরিত সীমান্ত এবং নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা । ভোট আসে ভোট যায় ! রাজনৈতিক নেতাদের গালভরা প্রতিশ্রুতি সীমান্তের অন্ধকার গলিতে মিলিয়ে যায় বলে অভিযোগ । বসিরহাটের রাজনৈতিক ইতিহাসও বেশ পুরনো ও বৈচিত্র্যময় । এই লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে মোট সাতটি বিধানসভা রয়েছে । যার বেশিরভাগই গ্রামীণ এলাকা । অর্থাৎ জনসংখ্যার একটা বড় অংশ গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাস করে । যেখানে কৃষিই মূলত তাঁদের পেশা ।

Basirhat Constituency West Bengal
বসিরহাট কেন্দ্রে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী (ইটিভি ভারত)

আরও পড়ুন:

বসিরহাটের সাতটি বিধানসভা হল: 1. বসিরহাট উত্তর, 2. বসিরহাট দক্ষিণ, 3. হাড়োয়া, 4. মিনাখাঁ, 5. হিঙ্গলগঞ্জ,
6. বাদুড়িয়া, 7. সন্দেশখালি ৷

এই কেন্দ্রের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রটি 1952 সালে ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের সময় প্রতিষ্ঠিত হয় । সেই সময় এটি দুই সদস্য়ের কেন্দ্র ছিল, যেখানে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার (সিপিআই) রেণু চক্রবর্তী এবং কংগ্রেসের প্রতিমা রায় নির্বাচিত হয়েছিলেন । পরবর্তী কয়েক দশক ধরেও, এই কেন্দ্রটি সিপিআই এবং কংগ্রেসের মধ্যে ক্ষমতা বদলের সাক্ষী হয়েছে । 1980 থেকে 2004 সাল পর্যন্ত সিপিআই এই কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল ।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটভূমি: 2009 সালে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) প্রথমবারের জয়ের স্বাদ পায় বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে । ক্ষমতাচ‍্যুত হয় বামেরা । সেবার জয়ী হয়েছিলেন হাজি নুরুল ইসলাম । যদিও 2014-র নির্বাচনে তৃণমূল তাঁকে টিকিট দেয়নি । পরিবর্তে তৃণমূলের ইদ্রিস আলি প্রার্থী হন সেখান থেকে । তবে, প্রার্থী বদল করা হলেও শাসক শিবিরের জয়ের ধারা আটকানো যায়নি । হাজি নুরুলের মতো ইদ্রিস আলিও জয়ী হন বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে ।

Basirhat Constituency West Bengal
2019 লোকসভা ভোটের ফলাফল (ইটিভি ভারত)

2019 সালের নির্বাচনে দল বিদায়ী সাংসদ ইদ্রিস আলির উপর ভরসা না রেখে অভিনেত্রী নুসরত জাহানকে নিয়ে আসে এই কেন্দ্রে । তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি জয়ী হয়ে মুখরক্ষা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । সেবারের ভোট নুসরত জাহান 7 লক্ষ 82 হাজার 78 ভোট পেয়েছিলেন । বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীকে পিছনে ফেলে গেরুয়া শিবির অবশ্য দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে । বিজেপির সায়ন্তন বসু সেবার 4 লক্ষ 31 হাজার 709 ভোট পেয়েছিলেন । জোট প্রার্থী কাজি আব্দুর রহিম সর্বসাকুল্যে পেয়েছিলেন 1 লক্ষ 4 হাজার 183 ভোট । নুসরত জাহান জয়ী হয়েছিলেন 3 লক্ষ 50 হাজার 369 ভোটে ।

ভোটারদের জনসংখ্যা ও আঞ্চলিক বিন্যাস: বসিরহাট কেন্দ্রে তফসিলি জাতি-উপজাতি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসবাস বেশি । হাড়োয়া, বসিরহাট উত্তর ও দক্ষিণ এবং বাদুড়িয়া । এই সমস্ত বিধানসভা এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বেশি বসবাস করেন । বাকি তিনটি বিধানসভা এলাকাতে তফসিলি জাতি-উপজাতি ও অন‍্যান‍্য সম্প্রদায়ের লোকজনের আধিক্য বেশি । প্রায় 52 শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে এখানে । ফলে, এই ভোটের উপর বসিরহাট কেন্দ্রের জয়-পরাজয় নির্ভর করে অনেকটাই । তাই, সংখ্যালঘু ভোট হাতছাড়া করতে চাইবেন না কোনও রাজনৈতিক দলই ।

সন্দেশখালি ও শেখ শাহজাহান অধ্যায়: 2024-র লোকসভা নির্বাচনে সন্দেশখালি ইস্যু হট টপিক রাজ‍্য রাজনীতিতে । শেখ শাহজাহান অধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছে । বিশেষ করে শেখ শাহজাহান ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে যেভাবে সন্দেশখালির মহিলারা গর্জে ওঠেন এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব হন । তাতে অক্সিজেন জুগিয়েছে বিরোধী শিবিরকে । তবে, সাম্প্রতিক সময়ে সন্দেশখালি নিয়ে একের পর এক ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ায় কিছুটা হলেও কোণঠাসা পদ্ম শিবির ।

তবে, এই ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে অভিযোগ, পালটা অভিযোগ রয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে । এই নিয়ে রাজনৈতিক চর্চাও চলছে সমানভাবে । যা ভোটের উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বসিরহাট কেন্দ্রে । যদিও, সন্দেশখালি ইস্যু হোক কিংবা শেখ শাহজাহান অধ‍্যায় । তার কোনও প্রভাব নির্বাচনে পড়বে কি না, তা তো বলবে সময়ই । তবে, এর রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে বিরোধী বাম ও বিজেপি যে কোনও কসুর করছে না, তা কিন্তু স্পষ্ট তাদের নির্বাচনী বক্তব্য থেকেই ।

সন্দেশখালির ঘটনার প্রেক্ষিত বুঝতে হলে ফিরে যেতে হবে কয়েক মাস আগে । গত 5 জানুয়ারি রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্ত করতে শাজাহানের সরবেড়িয়া আকুঞ্জি পাড়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাহিনীর হাতে । আক্রান্ত হতে হয় ইডি ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের । সেই ঘটনার পরপরই একে একে সামনে আসতে শুরু করে শেখ শাহজাহান ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে নানা কার্যকলাপ । জোর করে জমি দখল, নারী নির্যাতন, জমিতে নোনাজল ঢুকিয়ে সেখানে গায়ের জোরে ভেড়ি বানানো। সবকিছুতেই খড়গহস্ত ছিলেন শাহজাহান ও তাঁর বাহিনী ।

এসব অভিযোগ ঘিরেই প্রতিবাদের আগুন আছড়ে পড়েছিল সন্দেশখালির গ্রামে গ্রামে । যা ঘিরে দিনের পর দিন সরগরম হয়েছিল সন্দেশখালি । পরবর্তীতে সিবিআই ও ইডি তদন্ত হাতে নিতেই একে একে ধরা পড়ে সন্দেশখালির 'মাস্টারমাইন্ড'-রা । তারপরও ধিকিধিকি আগুন কিন্তু মাঝেমধ্যেই জ্বলে উঠছে সেখানে । সেটা রেখা পাত্র অথবা মাম্পি দাসের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হোক কিংবা আন্দোলনে পুলিশি জুলুমবাজির অভিযোগ । যা ঘিরে তপ্ত সন্দেশখালিতে রাজনৈতিক বাকযুদ্ধ চলছেই !

সন্দেশখালি ইস্যু যে এবার বসিরহাটের নির্বাচনে হট টপিক হতে চলেছে, তা বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । এরাজ্যে নির্বাচনী সভা করতে এসে বারবার তাঁদের মুখে উঠে এসেছে সন্দেশখালির প্রসঙ্গ ! পালটা, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দু'জনেই নির্বাচনী জনসভা থেকে সন্দেশখালির ঘটনাকে বিজেপির চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন ।

সবমিলিয়ে, সন্দেশখালি ইস্যুকে ঘিরে শাসক ও বিরোধীর তরজায় রীতিমতো জমজমাট বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র । তবে, বসিরহাটের কুর্সি কার দখলে যাবে ? তার উত্তর মিলবে 4 জুন ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরই !

আরও পড়ুন:

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.