বোলপুর, 7 ডিসেম্বর: বিশ্বভারতীর বাংলাদেশ ভবনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারলেন না ওপার বাংলার কবি-সাহিত্যিকেরা ৷ কারণ দুই দেশের তিক্ত সম্পর্কে মেলেনি ভিসা ৷ সম্প্রতি ঢাকা হিন্দু সন্ন্যাসীকে আক্রমণের ঘটনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতির অবনতি হয় বলে জানা গিয়েছে ৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ৷
তাই বিশ্বভারতীর বাংলাদেশ ভবনে খোয়াই সাহিত্য সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে আসতে পারলেন না ওপার বাংলার 18 জন সাহিত্যিক ৷ ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়া আমেরিকা, জার্মানি, দুবাই থেকে সাহিত্যিকরা এই উৎসবে সামিল হয়েছেন ৷ বাংলাদেশের সতীর্থদের অনুপস্থিতি নিয়ে আক্ষেপ করলেন এপারের কবি-সাহিত্যিকরা ৷
বিশ্বভারতীতে রয়েছে আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ভবন ৷ যা হাসিনা সরকারের অর্থানুকূল্যে নির্মিত হয়েছিল ৷ এই বাংলাদেশ ভবন ও খোয়াই সাহিত্য সংস্কৃতি সমিতির যৌথ উদ্যোগে দু'দিনের আন্তর্জাতিক আলোচনা সভা ও হৃদয় মিলন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ভবন চত্বরে 8 ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই উৎসব ৷
খোয়াই সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক তথা এই আন্তর্জাতিক উৎসবের অন্যতম আয়োজক কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, "আমরা বাংলাদেশ ভবন ও খোয়াই সাহিত্য সংস্কৃতির যৌথ উদ্যোগে দু'দিনের আন্তর্জাতিক আলোচনা সভা ও হৃদয় মিলন উৎসবের আয়োজন করেছি ৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কবি-সাহিত্যিক, লেখকরা এসেছেন ৷ তবে বাংলাদেশের 17 থেকে 18 জন সদস্য আমাদের আসতে পারেননি ৷ তাঁরা ভিসা পাননি ৷ আমরাও ওদেশের পরিস্থিতির জন্য আসতে বারণও করেছি ৷ তবে তাঁরা আসতে না পারায় খারাপ লাগছে ৷ আশা করি, আগামীতে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে ৷"
ঝাড়খণ্ড থেকে আগত পূরবী ঘোষ, দিল্লি থেকে আগত ইন্দিরা দাস, পশ্চিমবঙ্গের দেবিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এই উৎসবে যোগ দিতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে ৷ বাংলাদেশের কেউ অংশ নিতে পারেননি ৷ প্রতি বছর অংশ নেন, কত গল্প, আড্ডা হয় ৷ তাই খুব খারাপ লাগছে । রবীন্দ্রনাথ-নজরুল দুই দেশের, আমাদের ভাষা এক, সংস্কৃতি এক ৷ অথচ, কিছু ভেদবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের জন্য আজ এই পরিস্থিতি ৷ তবে আমরা আশাবাদী খুব দ্রুত দুই দেশের সম্পর্ক ঠিক হবে ৷ আবার আগের মতো সাহিত্যচর্চা হবে দুই বাংলার ৷"
বৃহৎ ছাত্র আন্দোলনের জেরে 5 অগস্ট দেশ ছাড়েন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ তারপর থেকে মুখ্য উপদেষ্টা নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার চলছে ৷ এই সময় চট্টগ্রাম, রঙপুরের মতো জায়গায় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ছবি সামনে আসছে ৷ যাকে কেন্দ্র করে উদ্বিগ্ন এপার বাংলার মানুষ-সহ সমগ্র ভারতের সনাতনীরা ৷ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে ফাটল ধরা দিয়েছে, তা বলাই যায় ৷
উৎসবে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয় কুমার সরেন-সহ অধিকাংশ বিভাগের অধ্যক্ষ, বিভাগীয় প্রধান, অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা অংশ নেন ৷ এছাড়া, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত-সহ দিল্লি, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, গুজরাত, ত্রিপুরা, অসম প্রভৃতি রাজ্য থেকে প্রায় 220 জন সাহিত্যিক অংশ নিয়েছেন । এমনকী আমেরিকা, জার্মানি, দুবাই থেকেও 3 জন কবি-সাহিত্যিক এসেছেন ৷ প্রতি বছর এই উৎসবে ওপার বাংলার কবি-সাহিত্যিকেরা অংশ নেন। এবার তা হয়নি ৷
বিশ্বভারতীর বিভিন্ন বিভাগ, ভবন মিলিয়ে প্রায় 35 জন বাংলাদেশি পড়ুয়া আছেন ৷ প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বহু পড়ুয়া বিশ্বভারতীতে ভর্তি হন ৷ গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা ৷ তাঁকে ঘিরে দুই বাংলার মেলবন্ধন ৷ অথচ, এখন পরিস্থিতি এমনই যে বিশ্বভারতীতে ওপার বাংলার অর্থানুকূল্যে নির্মিত বাংলাদেশ ভবনের অনুষ্ঠানেই যোগ দিতে পারছেন না বাংলাদেশের কবি, সাহিত্যিক, লেখকেরা ৷