বহরমপুর, 30 জুলাই: বহরমপুরে দেহ ব্যবসার কাজে লাগানো হত বাংলাদেশি নাবালিকাদের । মধুচক্র থেকে গ্রেফতার দুই মহিলা দালালকে জেরা করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল পুলিশের হাতে । জানা গিয়েছে, বাংলাদেশি নাবালিকাদের চোরা পথে ভারতে এনে মূলত দেহ ব্যবসার কাজে ব্যবহার করা হত । বহরমপুর শহরের পাশেই কদবেলতলায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে দিনের পর দিন চলত এই যৌন ব্যবসা । সেখানে নাবালিকাদের দিয়ে জোর করে দেহ ব্যবসা করানো হত বলে অভিযোগ । রবিবার এই কারবারের জাল কাটে পুলিশ, গ্রেফতার করা হয় 2 জনকে ৷
জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন সোমা ভৌমিক বলেন, "যে নাবালিকাদের এনে এখানে দেহ ব্যবসায় নামানো হত তারা অধিকাংশই বাংলাদেশি । চার-পাঁচজন নাবালিকা এই কাজ করতে বলেই আমাদের কাছে খবর । পুলিশ তাদের খোঁজার চেষ্টা করছে । আমরাও আমাদের মত করে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ চালাচ্ছি । "
গোপন সূত্রে তথ্য পেয়ে বহরমপুর থানার পুলিশ ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যরা রবিবার বিকেলে ওই ভাড়া বাড়িতে হানা দেয় । পুলিশ আসার খবর পেয়ে বাড়ির মালিক রামু শেখ পালিয়ে যান । তাঁর সঙ্গে উধাও হয়ে যায় পাঁচ বাংলাদেশি নাবালিকাও । তবে ওই বাড়ি থেকে দুই মহিলা দালালকে পুলিশ পাকড়াও করে । তাদের থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় । তাদের একজনের বাড়ি বীরভূম জেলায় । অপরজন নদিয়ার হরিণঘাটার বাসিন্দা ।
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, মূলত দুই মহিলাই ওই নাবালিকাদের পরিচালনা করত । পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলারা বিভিন্ন জায়গা থেকে মেয়েদের এনে ভাড়া বাড়ির দু'টি ঘরে যৌন ব্যবসার আসর বসাত । বাড়ির মালিক ওতপ্রোতভাবে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত । তার খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে । কারা কারা সেখানে যাতায়াত করত সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।
বহরমপুর থানার এক আধিকারিক বলেন, "নির্দিষ্ট মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে । যে দুই মহিলা দালালকে পাকড়াও করা হয়েছে তারা বেশ কিছু বছর ধরে এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত । তারা এখনও সেভাবে মুখ না খোলায় আমরা বিশেষ কিছু জানতে পারিনি । তবে ওই বাড়ির মালিক এবং নাবালিকারা কোথায় আছে তা জানতে তল্লাশি চালাচ্ছি ।"
এর আগেও বহরমপুর শহরের উপকন্ঠে ফরাসডাঙার কাছে একটি হোটেলে দিনের পর দিন ধরে দেহ ব্যবসার অভিযোগ ওঠে । ভিন জেলা থেকে নাবালিকাদের এনে জোর করে সেখানে দেহ ব্যবসায় নামানো হত বলে অভিযোগ ছিল । সেখানে হানা দিয়ে উত্তর 24 পরগনা জেলার বনগাঁ ও বারাসতের দুই নাবালিকাকে উদ্ধার করা হয়েছিল । জানা গিয়েছিল, তাদের মোটা টাকার বিনিময়ে কাজের লোভ দেখিয়ে আনা হতো । বহরমপুরে ভালো কাজ আছে বলে এক মহিলা টোপ দিয়ে তাদের এনে ফরাসডাঙার একটি হোটেলে রেখে এই কাজ করিয়েছে ।
এর পাশাপাশি জেলার ছাত্রীদেরও এই নোংরা কাজে নামানো হচ্ছিল বলে অভিযোগ । সেই সময় জলঙ্গির একাদশ শ্রেণির ছাত্রীকেও কাজের টোপ দিয়ে আনা হয়েছিল ওই হোটেলে । সেই হোটেল সম্পূর্ণ সিল করে দেয় জেলা প্রশাসন । এবার কদবেলতলায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে এই ধরনের কাজ চলছিল । অভিযোগ, দিনে ও রাতে সবসময় নানা লোকজনের আনাগোনা ছিল সেই বাড়িতে । গত কয়েক বছর ধরে সেখানে অবলীলায় চলছিল যৌন কারবার । রবিবার সেখানে অভিযান চালাতেই গোটা চক্রের নাগাল পায় পুলিশ । অভিযুক্ত বাড়ির মালিক এবং দেহ ব্যবসার কাজে যুক্ত থাকা নাবালিকাদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ ।