ব্যান্ডেল, 3 অক্টোবর: এপার বাংলার দুর্গা মণ্ডপের কাজে শিল্পের ছোঁয়া বাংলাদেশের শিল্পীর। বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক পালা বদল হয়েছে। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের দীপু বিশ্বাস। হুগলির কেওটা নবীন সংঘের পুজোর থিমের শিল্পী তিনি ৷ এখানে দুর্গার 18টি হাত। আর মাটি থেকে 7 ফুট নীচে মূল মন্দির করা হয়েছে। ওপার বাংলার শিল্পীর হাতের তৈরি মণ্ডপে আর কী কী বিশেষত্ব রয়েছে, তা তুলে ধরল ইটিভি ভারত ৷
ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই শিল্পের টানে চলে এসেছেন তিনি। হুগলির কেওটা নবীন সংঘের পুজোর থিমের শিল্পী ওপার বাংলার বাসিন্দা ৷ এবারে কেওটা নবীন সংঘের থিম 'প্রাচীন সভ্যতার ইতিকথা'। এর আগে একাধিক দুর্গা ও জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপের কাজ করেছেন দীপু। সেই ডাকেই সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে মা, বোন ও ঠাকুমাকে ছেড়ে চলে এসেছেন তিনি।
দীপুর এপার বাংলায় আগমন-
বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের দীপু বিশ্বাস হুগলির কেওটা নবীন সংঘের দুর্গা মণ্ডপে ভাস্কর্য ফুটিয়ে তুলছেন। দীপু বিএল কলেজে ইতিহাস নিয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়েন। পড়াশোনার পাশাপাশি মাটির ভাস্কর্যও গড়েন। ফেসবুকে তাঁর কাজ দেখে যোগাযোগ করেন এপার বাংলার রঙ্গজীব রায়। দীপু মূলত মণ্ডপের দেওয়ালে পৌরাণিক দেব-দেবীর ভাস্কর্য ফুটিয়ে তুলছেন।
শিল্পী দীপু বলেন, "ভিসা নিয়ে এদেশে এসেছি। আমি মূলত মাটির কাজ করি। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম সিমেন্ট, বালির কাজ হচ্ছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালা বদলে মধ্যেও আমি শিল্পের টানে কাজ করতে এসেছি। দুর্গাপুজোর আগে চলে যাব। বাড়িতে বাবা নেই, মা, বোন বৃদ্ধা ঠাকুমা রয়েছেন। নিজ দেশেই পুজো কাটাব।"
পুজো মণ্ডপের সাতকাহন-
হুগলির কেওটা নবীন সংঘের পুজো এবছর 52 বছরে পা দিল। এবারে পাথরের গুহা মন্দিরের অংশ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মণ্ডপে প্রবেশ করে সমতল থেকে বেশকিছুটা নীচে মেনে প্রতিমা দর্শন করতে হবে। বহু যুগ আগে ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোনও মন্দিরের ভগ্নাবশেষ দেখা যাবে পাতালে।মন্দিরের দেওয়ালে নানা পৌরাণিক দেব-দেবীর মূর্তি দেখা যাবে। পাথরের আদলে 18 হাতের মা দুর্গাকে দেখা সাবে। পুরো মণ্ডপজুড়ে জুটের বস্তার উপর বালি ও সিমেন্ট দিয়ে মূর্তি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
শতাধিক কাঠের সিংহাসন ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। প্রবেশদ্বার থেকে পেরিয়ে মণ্ডপে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে বিশাল শিবের মূর্তি। তাঁর দু'দিকে, পাঁচিলের গা-ঘেঁষে মন্দিরে প্রবেশ করা হয়েছে। গাছও রয়েছে সেখানে। মন্দিরের প্রবেশের মধ্যেই জলাশয়ে থাকবে মাছ ও পদ্ম ফুল। মোট 30 জন শিল্পী দিন-রাত কাজ করে প্রাচীন সভ্যতা ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত এখন। এখন অপেক্ষা পঞ্চমীতে উদ্বোধনের।
কী বলছেন কেওটা নবীন সংঘের পুজোর থিমের প্রধান শিল্পী ?
নবদ্বীপ আর্ট কলেজের শিক্ষক রঙ্গজীব রায়ের মতে, "মাটির নীচে মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। সোশাল মিডিয়ায় দীপুর সঙ্গে পরিচয় । ওর হাতের কাজ অসাধারণ। শুধু বাংলাদেশ না, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকেও শিল্পীরা এসে থিমের কাজ করেন।"
উদ্যোক্তা কী বলছেন ?
কেওটা নবীন সংঘের সম্পাদক গৌতম দাস বলেন, "ইট, বালি ও সিমেন্ট দিয়ে কংক্রিটের একটি মণ্ডপ করা হয়েছে। যা পরিবেশবান্ধব। আমরা ছ'মাস ধরে কাজ করছি। এবারের বাজেট 25 লক্ষ টাকা। বিশেষত্ব আমাদের দুর্গার 18টি হাত। আর মাটি থেকে 7 ফুট নীচে মূল মন্দির করা হয়েছে।যা মানুষকে আকর্ষণ করবে।"