রায়গঞ্জ, 11 ডিসেম্বর: নাবালিকা ইসকন-ভক্ত ৷ অভিযোগ, তাঁকে অপহরণের হুমকি দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশে। শেষমেশ প্রাণে বাঁচতে লুকিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিল সে। উদ্দেশ্য ছিল জলপাইগুড়িতে এক আত্মীয়র কাছে যাওয়া। তবে তার আগেই ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে উত্তর দিনাজপুরে প্রবেশ করতেই বিএসএফের হাতে ধরা পড়ল নাবালিকা ৷ মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া ব্লকের ফতেপুর বিওপি এলাকায় ৷
নাবালিকাকে আটক করে চোপড়া থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয় বিএসএফ ৷ এরপর ওই রাতেই তাকে রায়গঞ্জের একটি হোমে পাঠায় পুলিশ ৷ বুধবার তাকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে তোলা হয় ৷ বিচারক নাবালিকাকে কোচবিহারের একটি হোমে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ৷
এ বিষয়ে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার জবি থমাস বলেন, "বিএসএফের পক্ষ থেকে একটি নাবালিকাকে আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ৷ ওই নাবালিকা সীমান্ত পার হয়ে এসেছে বলে বিএসএফ একটি অভিযোগ দায়ের করেছে ৷ আমরা নাবালিকাকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পাঠিয়েছি ৷"
এই ঘটনা প্রসঙ্গে সরকারি আইনজীবী প্রদীপ অধিকারী বলেন, "ভারতীয় নাগরিকত্বের কোনও বৈধ নথি ওই নাবালিকার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি ৷ বিএসএফ ওই নাবালিকাকে চোপড়া থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয় ৷ পুলিশ তাকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পাঠায় ৷ বিচারক তাকে কোচবিহারের একটি বালিকা আবাসে পাঠানোর নির্দেশ দেন ৷"
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার বাসিন্দা ওই নাবালিকার পরিবার ইসকনের ভক্ত ৷ অভিযোগ, শুধুমাত্র এই অপরাধে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল ৷ মেয়েটির বাবা পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ ৷ তিনি বর্তমানে অসুস্থ ৷ তার মাও অসুস্থ বলেই জানা গিয়েছে ৷
এমন পরিস্থিতিতে মেয়েকে বাঁচাতে দিশেহারা হয়ে পড়ে তার পরিবার ৷ কোনও রাস্তা না পেয়ে ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে ওই নাবালিকা ৷ জলপাইগুড়ির বেলাকোবায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশে মেয়েটি বাংলাদেশ থেকে উত্তর দিনাজপুরের সীমান্ত পেরিয়ে রাজ্যে প্রবেশ করেছিল ৷ তার কাছ থেকে বেলাকোবার আত্মীয়ের ফোন নম্বর পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই পুলিশ তাদের চোপড়া থানায় ডেকে পাঠায় ৷ এরপর নাবালিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ ৷ এরপর আইনানুগ পদক্ষেপ করে জেলা শিশু কল্যাণ সমিতি (CWC)-র মাধ্যমে হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ ৷
বুধবার সকালে তাকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পেশ করা হয় ৷ বিচারক তাকে কোচবিহারের একটি হোমে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ৷ নাবালিকার আত্মীয়ের বক্তব্য, "বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার চলছে ৷ শুধুমাত্র সংখ্যালঘু হওয়াতেই এভাবে নির্যাতন, অপহরণ করার হুমকি-হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে ৷ ওপার বাংলার মেয়েরা নিরাপদে নেই ৷" এই সঙ্কটকালে ভারত সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন ওই নাবালিকার আত্মীয় ৷ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করছে চোপড়া থানার পুলিশ ৷