চন্দননগর, 24 জানুয়ারি: রেল পথ হওয়ার আগে হুগলি নদীর তীরে ছিল ইউরোপের নানা উপনিবেশ । ভারতে বাণিজ্যের জন্য ডাচ, পর্তুগিজ, আর্মেনিয়ান, ফরাসি,ডেনিস ও ইংরেজরা জাহাজে করে আসত এখানে । সেই সময় থেকেই মসলিন সিল্ক,শস্য-সহ নানা ধরনের জিনিস এখান থেকে বিদেশে রফতানি হওয়া শুরু হয়েছিল । ধীরে ধীরে গঙ্গার নদীর তীরে বসতি স্থাপন করেছিল বিদেশিরা । তাদের হাত ধরেই হুগলি নদীর ধারে নানা স্থাপত্য ও ঐতিহ্য গড়ে ওঠে । সময় বদলাও এখনও ব্যান্ডেল, চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর ও ব্যারাকপুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেসময়কার নানা ইতিহাস । সেই ইতিহাসকেই এবার মুর্শিদাবাদের সিল্কের উপর মোমের ও রঙের সাহায্যে বাটিক প্রিন্ট করে ফুটিয়ে তুললেন ইতিহাসবিদ ও শিল্পী নেলিন মণ্ডল ৷
1396 সাল থেকে 1854 খ্রিস্টাব্দের ইতিহাসকে নিয়ে রিভার টাইম বলে একটি প্রজেক্ট তৈরি হয়েছে । এই প্রজেক্ট করেন ব্রিটেনের লিভারপুল ইউনিভার্সিটি ফ্রেঞ্চ ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ডঃ ইয়ান ম্যাগাডেরা । তাঁর এই প্রজেক্টে থাকছে বিভিন্ন বিষয়ের ডকুমেন্টারি ও পাঁচটি ব্যানার । যার মাধ্যমে হুগলি নদীর তীরে মিনি ইউরোপকে তুলে ধরা হয়েছে । অন্যান্য অধ্যাপকদের সঙ্গে এই প্রজেক্টে কাজ করেছেন হুগলি জেলার বিভিন্ন ইতিহাস নিয়ে চর্চা করা চন্দননগরের বাসিন্দা নেলিন মণ্ডল । তিনি বিদেশিনী হলেও তাঁর বিয়ে হয়েছে এখানে ৷
ভারতের ইতিহাস নিয়ে নেলিন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন । সেই সূত্র ধরেই ব্রিটেনের লিভারপুল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডঃ ইয়ান ম্যাগাডেরা সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর । তিনি হুগলি জেলার উপনিবেশের ইতিহাসের সম্বন্ধে আলোচনা করেন বিদেশি অধ্যাপকের সঙ্গে । ফরাসি ভাষায় বিভিন্ন বই থেকে ভারত সম্পর্কের তথ্য সংগ্রহ করা হয় । এই প্রজেক্টের একটি অংশ হল পাঁচটি শহরের পাঁচটি ব্যানার । যার মাধ্যমে বিভিন্ন শহরের ইতিহাস তুলে ধরেছেন ইতিহাসবিদ ও শিল্পী নেলিন মণ্ডল । এই এক একটি ব্যানার দশ ফুট লম্বা ও সাড়ে তিন ফুট চওড়া ৷
নেলিন মণ্ডল বলেন, "ডাচ,আর্মেনিয়ান,ফরাসি,ডেনিস ও ইংরেজরা উপনিবেশের জন্য হুগলি নদীর তীরে ঘাঁটি গেড়েছিল । সেই সময় ব্যান্ডেল, চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর ও ব্যারাকপুরে নানা স্থাপত্য তৈরি করেছিল তারা । যেমন পর্তুগিজ ও ডাচদের হাত ধরেই ছানা ও বিভিন্ন ফল,সবজি ও পোস্ত এসেছিল ভারতে । সেই সময়কার সাল ধরেই তাই বিভিন্ন দেশের পতাকা ছবি তুলে ধরেছি ব্যানারে । হুগলির তাঁত শিল্প, বিভিন্ন মন্দির, মসজিদ, চার্চের ছবিও এঁকেছি । মুর্শিদাবাদের সিল্কের উপর মোমের ও রঙের সাহায্যে বাটিক প্রিন্ট করেছি । পাঁচটি দশ ফুট লম্বা ও সাড়ে তিন ফুট চওড়া কাপড়ের উপর হাতের সাহায্যে পাঁচটি শহরের ঐতিহ্য তুলে ধরতে পেরে আমি খুশি । তৎকালীন ইতিহাস অনুসন্ধান করে খুঁটিনাটি বিষয় ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেতে আমার গোটা একবছর সময় লেগেছে । পুরো কাজটি করতে আমার সঙ্গে সহযোগিতা করেছে অসীম মণ্ডল ।"
আরও পড়ুন: