ব্যারাকপুর, 20 মার্চ: সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবার নাম না-করে পার্থ ভৌমিককে নিশানা করলেন ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদ অর্জুন সিং। মঙ্গলবার তিনি বলেন, "উনি (পার্থ ভৌমিক) কত টাকা রোজগার করেন,পাঁচ-পাঁচটা পেট্রল পাম্পের মালিক হয়ে গেলেন? রাতারাতি কীভাবে একের পর এক সম্পত্তি বাড়ল?" তা নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তুলে মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন অর্জুন সিং।
এতদিন শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ শিবু হাজরার জমিকাণ্ডের সঙ্গে পার্থর নাম জুড়ে তাঁকে ক্রমাগত আক্রমণ করে আসছিলেন সদ্য তৃণমূলত্যাগী এই বিজেপি নেতা। এবার অর্জুনের আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে নৈহাটির বিধায়কের সম্পত্ত, যা নতুন মাত্রা যোগ করল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের রাজনীতিতে। এ দিন পার্থ ভৌমিকের পাশাপাশি ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদের নিশানায় ছিলেন তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম এবং সুবোধ অধিকারীও । তাঁদের সম্পত্তি নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন অর্জুন সিং । যদিও অর্জুনের অভিযোগকে আমল দিতে চাননি তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পার্থ ভৌমিক ।
মঙ্গলবার বিকেলে ভাটপাড়ায় মজদুর ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আবারও শাহজাহান ঘনিষ্ঠ শিবু হাজরার সঙ্গে মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের যোগসাজশের অভিযোগ তুলে সরব হন বিজেপি নেতা অর্জুন সিং। তাঁর কথায়,"সন্দেশখালি থেকে নৈহাটিতে এসে শিবু হাজরা জমি কিনছেন । সেই জমিতে ব্যবসা করছেন । এমনি এমনি তো তিনি এখানে জমি কিনতে যাবেন না? নিশ্চয় এর মধ্যে কোনও না কোনও রহস্য রয়েছে । ধৈর্য্য ধরুন । সবকিছুই সামনে আসবে ।"
এই প্রসঙ্গে অর্জুন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রসঙ্গ টেনে বলেন,"রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে বাকিবুরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বালু(জ্যোতিপ্রিয়)মল্লিক জেলে গিয়েছেন । আবার যখন শাহজাহান ঘনিষ্ঠ শিবু হাজরার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তখন উনি(পার্থ ভৌমিক) নৈহাটি থেকে 150 কিলোমিটার দূরে সন্দেশখালিতে চলে গেলেন । কিছু না কিছু সংযোগ তো রয়েছেই এই দু'টো ঘটনার মধ্যে ৷"
শিবু হাজরার নৈহাটিতে জমি, সম্পত্তি বাড়ানোর পিছনে জোতিপ্রিয় মল্লিক এবং পার্থ ভৌমিকের হাত রয়েছে বলেও ফের এ দিন বিস্ফোরক দাবি করেছেন বিজেপি নেতা । শুধু শাহজাহান ঘনিষ্ঠ শিবু হাজরার সঙ্গে যোগ থাকাই নয় ! এ দিন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের একের পর এক সম্পত্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অর্জুন সিং ।
তিনি বলেন,"ওর (পার্থ ভৌমিক) কত টাকা রোজগার যে, নৈহাটি-সোদপুরের মতো জায়গায় ফ্ল্যাট কিনছেন? শিবু হাজরার নৈহাটিতে জমি, বাড়ি কিনতে সাহায্য করছেন? এই প্রশ্ন আসাটা তো স্বাভাবিক ! উনি এখন ভালো সাজার চেষ্টা করছেন । করুন, ভালো সাজলেই ভালো হওয়া যায় না । ওনার কী এমন রোজগার,যে রাতারাতি পাঁচটা পেট্রোল পাম্পের মালিক হয়ে গেলেন? একটা পেট্রোল পাম্প তো বিক্রি করারও চেষ্টা চলছে । হয়তো বকলমে সেই পেট্রোল পাম্পের মালিক রয়েছেন উনি। কীভাবে সব হয়েছে তা আমরা জানি। তদন্ত হলে সব তথ্য সামনে আসবে। চিন্তা করবেন না ।"
এদিকে পার্থ ভৌমিকের পাশাপাশি এদিন তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম এবং সুবোধ অধিকারীকেও নিশানা করতে ছাড়েননি অর্জুন সিং। বীজপুরের বিধায়ক সুবোধ অধিকারীর বিরুদ্ধে আয় বহির্ভূত সম্পত্তির অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদ । তিনি বলেন, "পাশেই একজন বিধায়ক আছেন যাঁর আয় সর্বসাকুল্যে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা। কিন্তু সম্পত্তি বেড়ে তাঁর দাঁড়িয়েছে সাড়ে আট কোটি ।" ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলে সেই আয়ের তথ্য দেখানো হলে গত দু'বছরে বীজপুরের বিধায়কের সম্পত্তি বেড়েছে বলেই দাবি করেছেন অর্জুন ।
অন্যদিকে, সোমনাথ শ্যামের হলুদ ফাইলের পালটা এদিন কালো ফাইল খোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ব্যারাকপুরের এই বিজেপি নেতা। জগদ্দলের বিধায়ককে কটাক্ষ করে এদিন অর্জুন সিং পালটা বলেন, "ওনার কথা ছেড়ে দিন! উনি তো এতদিন হলুদ ফাইল খোলার কথা বলছিলেন। উনি কি হলুদ ফাইল খুলবেন । তৃণমূল দলে থাকার সময় ওর(সোমনাথ) বিরুদ্ধে হলুদ, কালো ফাইল খোলার কথা বলতে পারছিলাম না। এবার বলছি খুলব।"
যদিও অর্জুনের অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে চাননি মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। পালটা নাম না-করে একসময়ের সতীর্থকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, "আমার নামে কোনও অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। ওসব দলিল, কাগজপত্র দেখিয়ে কোনও লাভ নেই । আমার জীবনটা যেমন খোলা পাতা তেমনই ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলও খোলা পাতা। আমি যখন তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি তখন আমাকে নির্বাচন কমিশনের কাছে কত সম্পত্তি আছে না আছে, তা তুলে ধরতে হবে। এর বাইরে কেউ যদি আমার বাড়তি কোনও সম্পত্তি দেখাতে পারে তাহলে আমি অন্য কেউ বলার আগে নিজের দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করব। নিশ্চিন্তে থাকুন।"
আরও পড়ুন: