কুলতলি, 19 জানুয়ারি: এবার দুয়ারে এসে পৌঁছেছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার । তাই আবারও বাঘ আতঙ্কে কাঁপছে দক্ষিণ 24 পরগনার কুলতলির মৈপীঠের গুড়গুড়িয়া গ্রাম । স্থানীয়দের দাবি, শনিবার গভীর রাতে এক গৃহস্থের বাড়ির উঠোনে উপস্থিত হয় দক্ষিণরায় । এমনকি রীতিমতো গর্জন করে সে । বুঝিয়ে দেয় শীতের রাতে সে ক্ষুধার্ত । যদিও কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে পরে নিজেই সেখান থেকে ফিরে যায় ।
সারারাত আতঙ্কে সিঁটিয়ে ছিলেন ওই বাড়ির বাসিন্দারা ৷ রবিবার সকালে ওই বাড়ির উঠোনে দক্ষিণরায়ের পায়ের ছাপ এবং নখের আঁচড়ের দেখা মিলেছে ৷ বনদফতর এসে এলাকায় নজরদারি শুরু করেছে । আর সন্ধান করছে কোন পথে গিয়েছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার । এদিকে মৈপীঠের বাসিন্দারা জানান, গর্জন শুনে কোনও আওয়াজ না করে লুকিয়ে তাঁরা বাঘ দেখেছেন । এক বাড়িতে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বাঘ বেশ কয়েকবার মেঝেতে আঁচড় কাটে এবং গর্জন করে ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল কুলতলির কোস্টাল থানার গুড়গুড়িয়ার জন্মেজয় গিরির বাড়িতে বাঘ আসে ৷ রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বাড়ির মধ্যে ছিলেন সকলে ৷ সেই সময় বাঘ বাড়ির উঠোনে এসে গর্জন করতে থাকে ৷ আর তাতেই জড়োসড়ো হয়ে যায় ওই পরিবার ৷ জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি হওয়ায় এবং প্রতিনিয়ত মাছ কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করার জন্য, বাঘের গতিবিধি তারা আন্দাজ করতে পারে ৷ তাই ভাগ্য চক্রে তারা প্রাণে বেঁচে যায় ।
জন্মেজয় গিরি বলেন, "রাতে আমরা তখন খাওয়া দাওয়া করে উঠে সবে বসেছি । বাইরে হঠাৎ একটা বাঘের গর্জনের আওয়াজ পেলাম । দরজা দিয়ে তখন উঁকি মেরে দেখি, মেঝেতে বাঘ আঁচড় কাটছে । আমরা সকলেই দেখতে পেয়েছি । আর বাথরুমের দরজাতেও আওয়াজ করে পিছনের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যাই ।"
জন্মেজয়ের বউমা দেবিকা গিরি বাড়িতে শুয়ে ছিলেন । তখনই বাড়ির উঠোনে আগমন হয় দক্ষিণরায়ের । তিনি বলেন, "হঠাৎ বাসন পড়ার শব্দ শুনে বাইরে এসে দেখি কেউ একজন পালিয়ে যাচ্ছে ৷ আলো জ্বালিয়ে দেখতে পাই বাঘের পায়ের ও নখের আঁচড় । বাড়ির পাশের জঙ্গলে দেখা গিয়েছে বাঘের পায়ের ছাপ । আমি নদীতে যাই ৷ তাই নখের আঁচড় দেখে বুঝতে পেরেছি বাঘ ৷ আমি পরে ফোন করে বাড়ির লোককে সতর্ক করি এবং পিছনের দরজা থেকে আমরা বাইরে বেরিয়ে যাই । কার্যত সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে আমাদের পরিবার বেঁচেছে ।"
বারবার লোকালয়ে বাঘ চলে আসায় বনদফতরের কাজে অসন্তুষ্ট গ্রামের মানুষজন । এ বিষয়ে গ্রামবাসী আরতি গুচ্ছাইতের বক্তব্য, "আমরা আতঙ্কে রয়েছি । বারবার এলাকায় বাঘ ঢুকে পড়ছে ৷ আমরা বাড়িতে বাচ্চাদের নিয়ে থাকতে ভয় পাচ্ছি । বনদফতরের কর্মীরা আসছে, বোমা ফাটাচ্ছে, বাঘ চলে যাচ্ছে ৷ তারা বলছে, বাঘ আবার জঙ্গলে চলে গিয়েছে ৷ কিন্তু আবারও বাঘ ফিরে আসছে । গতকাল ওই গিরি পরিবার যদি না বুদ্ধি করে বাইরে বেরিয়ে আসতো, তাহলে বড়সড় ক্ষতি হয়ে যেত । আমরা চাই, বনদফতর এই এলাকায় জাল দিয়ে ঘিরে পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করে দিক, যাতে বাঘ না আসে ।"