কলকাতা, 24 অক্টোবর: বিগত কয়েক বছরে বঙ্গের আকাশে ঘূর্ণিঝড়ের আনাগোনা প্রায়ই দেখা যাচ্ছে । শুধু বাংলাই নয়, একই পরিস্থিতি প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশারও ৷ অস্থির আবহাওয়া কি বাংলা আর ওড়িশাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভরা রাজ্যে পরিনত করেছে ? কারণ, সাম্প্রতিক অতীতে আয়লা, রেমাল, ফণী, বুলবুল, আমফানের মতো একাধিক তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কা সামলেছে এই দুই রাজ্য । তার জেরে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। এখানেই প্রশ্ন ওড়িশা আর বঙ্গের আকাশে এত ঘূর্ণিঝড়ের হানা কেন?
তীব্র ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব:
রাত পোহালেই তীব্র ঘূর্ণিঝড় ওড়িশা উপকুল এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যবর্তী অঞ্চলে ভিতরকণিকা এবং ধামারায় আছড়ে পড়বে। এই দুটো অঞ্চলই ওড়িশা উপকূলে। ফলে ওড়িশায় তীব্র ঘূর্ণিঝড় দানার যে প্রভাব পড়বে, প্রায় একইরকম প্রভাব বঙ্গের উপকূলেও পড়ার পূর্বাভাস রয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়টি 24 অক্টোবর রাত থেকে 25 অক্টোবর সকালের মধ্যে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু, তার পরেও আলিপুর আবহাত্তয়া দফতর অবশ্য ঘূর্ণিঝড় সংখ্যা বৃদ্ধি বা বাংলা-ওড়িশার উপকূলকে 'অতি ঘূর্ণিঝড়প্রবণ' এলাকা হয়ে উঠেছে বলে মানতে নারাজ।
বাংলা-ওড়িশার উপকূল কি বঙ্গপোসাগরের 'অতি ঘূর্নিঝড়প্রবণ' এলাকা ?
আলিপুর হাওয়া দফতরের অধিকর্তা হাবিবুর রহমান বিশ্বাস বলেন, "ঘূর্ণিঝড় রেমালের সঙ্গে তীব্র ঘূর্ণিঝড় দানার মিল রয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। এখন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর পরবর্তী সময় চলছে। 2019 সালের পর থেকে ওড়িশা এবং বাংলার উপকূলে ঘূর্ণিঝড় বেশি হচ্ছে এমন নয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে তিন থেকে চারটে ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে। এই সময়টা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর পরবর্তী সময়। মার্চ থেকে মে, এই সময়টা আমরা মৌসুমী বায়ুর পূর্ববর্তী সময় বলে থাকি। এই সময়টা একটা থেকে দুটো ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে। সেই হিসেবে বছরে চার থেকে পাঁচটা ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমরা যদি পরিসংখ্যান দেখি, তাহলে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বেড়েছে এমন তথ্য নেই ।"
বিগত 4 বছরে বাংলা-ওড়িশায় প্রভাব ফেলা পঞ্চম ঘূর্ণিঝড় দানা:
আমফানের পর বিগত 4 বছরে দানা পঞ্চম ঘূর্ণিঝড় যেটি বাংলা-ওড়িশায় প্রভাব ফেলছে ৷ অতীতে আয়লা, ফণী, বুলবুলের মতো একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কা সামলেছে এই দুই রাজ্য । তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের আছড়ে পড়ার স্থান ইতিমধ্যেই ঘোষিত। কোন সময়ের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় দানা অছড়ে পড়বে, তা-ও চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে ঠিক ঘড়ির কাঁটায় ক'টা বাজলে দানা আছড়ে পড়বে, তা এখনও নিশ্চিত করে জানায়নি হাওয়া অফিস। এর জন্য আরও কিছুটা সময় গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে চায় আবহাওয়া দফতর। আলিপুর হাওয়া দফতর ইতিমধ্যেই ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিj মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা এবং ঝাড়গ্রামে 20 সেন্টিমিটার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সবথেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী বলা যায়, তীব্র ঘূর্ণিঝড় দানার বেশি প্রভাব ওড়িশা উপকূলে পড়তে চলেছে। বঙ্গের প্রাপ্তি দুর্ভোগ ! আর ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা সাম্প্রতিক অতীতে মোটেই বাড়েনি। এমনটাই জানিয়ে দিল আবহাওয়া দফতর।