কলকাতা, 16 ডিসেম্বর: নিরাপত্তার দাবিতে এবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। তাঁর দাবি, লাগাতার তাঁকে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছে । তিনি একজন প্রাক্তন বিধায়ক। আগে তিনি নিরাপত্তা পেতেন। কিন্তু তাঁর নিরাপত্তা কেন প্রত্যাহার করা হল নেতা তা জানেন না। তিনি এখনও একজন জনপ্রতিনিধি। তাঁকে পুনরায় নিরাপত্তা রক্ষী দেওয়া হোক, এমনটাই তিনি কলকাতা হাইকোর্টের লিখিত আবেদন জানান ৷ একই আবেদন জানিয়েছেন বাংলাপক্ষের গর্গ চট্টোপাধ্যায়।
আদালতের নির্দেশ, আরাবুল ইসলাম কলকাতা পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করবেন। কারণ, ভাঙড় এলাকা এখন কলকাতা পুলিশের অধীনে। সেই আবেদন ক্ষতিয়ে দেখে পুলিশ বিবেচনা করবে নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে কি না। পুলিশ আরও বিবেচনা করে দেখবে কোনও নিরাপত্তা দেওয়া হলে তার অপব্যবহার হবে কি না। পাশাপাশি, আরাবুল ইসলামের নিরাপত্তা কেন প্রত্যাহার করা হয়েছিল সেটাও জানাতে হবে নেতাকে। আরাবুল ইসলামের আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। লাগাতার প্রাণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাঁকে ৷
অন্যদিকে, রাজ্যের আইনজীবী স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্যের কাছে রিপোর্ট আছে। আরাবুলের নামে একাধিক অভিযোগ আছে। দীর্ঘদিন ধরে অপরাধের বহু ঘটনার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। গত নির্বাচনে খুনের ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন বলে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাঁর জামিনের শর্তহিসেবে বিজয়গঞ্জ বাজার এলাকায় ঢুকতে পারবেন না বলে জানানো হয়। কারণ তিনি তাঁর নিরাপত্তার অপব্যবহার করতে পারেন। সেই জন্যই তাঁর নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়।
কয়েকদিন আগে বিজয়গঞ্জ বাজার এলাকায় ঢুকতে চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আরাবুল। তাতে সম্মতি দেয় হাইকোর্ট। নির্দেশে আদালত জানায়, ভাঙড় 2 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে যেতে পারবেন তিনি। সপ্তাহে দু'দিন (সোম ও শনিবার) সকাল 9টা থেকে সন্ধে 6.30টা পর্যন্ত ৷ বিজয়গঞ্জ বাজার থানা এলাকার অফিসে থাকতে পারবেন । পুলিশকে বাড়ি থেকে, এসকর্ট করে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের। তবে পঞ্চায়েত সমিতি অফিসের বাইরে যেতে পারবেন না আরাবুল ইসলাম ৷ সেই ঘটনাতেও রাজ্যের আপত্তি ছিল ৷ আরাবুল, প্রভাব খাটিয়ে তার বিরুদ্ধের সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারে।
উল্লেখ্য, 2023 সালের জুন মাসে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় এলাকায় তৃণমূল-আইএসএফ কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ৷ তাতে আইএসএফের এক কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছিল আরাবুল ইসলামকে। আরাবুলের বিরুদ্ধে একাধিক ভুয়ো এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তারপরই কলকাতা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন আরাবুল। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ আরাবুলের জামিন মঞ্জুর করেছিল।
এদিকে, এদিন বাংলা পক্ষের গর্গ চট্টোপাধ্যায়ও নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁকেও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছে । তাঁরও নিরাপত্তা দেওয়া হোক বলে আর্জি জানান তিনি। মামলাকারীকে বিচারপতি ঘোষ ডায়মন্ড হারবার থানায় আবেদন জানাতে নির্দেশ দেন। জেলরা এসপি খতিয়ে দেখবেন আদৌ নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে কি না।