দুর্গাপুর, 23 মে: দুর্গাপুরের আমরাই গ্রামে বুদ্ধ পূর্ণিমায় শুরু হল বহু প্রাচীন চড়ক উৎসব ৷ আজও সেখানে ধর্মরাজের শিলামূর্তিতে চড়ানো ফুল যখন নিজে থেকেই পড়ে যায়, তখনই তাকে পুজোর অনুমতি মনে করে ভক্তিভরে সমস্ত রীতিনীতি পালন করেন ভক্তরা । প্রাচীন সেই সময়ে বর্ধমানের রাজা ছিলেন বিজিয় চাঁদ মহাতব, উদয় চাঁদ মহাতবরা । তাঁদের সময়েই বুদ্ধ পূর্ণিমা তিথিতে দুর্গাপুরের জঙ্গলঘেরা আমরাই গ্রামে শুরু হয় গ্রামীণ চড়ক উৎসব বা ধর্মরাজের পুজো । মূলত গ্রামীণ তপশিলি জাতির মানুষদের নিয়েই এই পুজোর আয়োজন । বুদ্ধ পূর্ণিমা তিথিতে পদ্মফুল ও মাটি দিয়ে নির্মিত ঘোড়া দিয়ে ধর্মরাজের পুজো দেওয়ার প্রাচীন রীতি আজও অব্যাহত ।
বাউরি, বাগদি, ধীবর, বাদ্যকর, রুইদাস - এছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই পুজোয় অংশ নেন ৷ পুজোর প্রথম দিনে লোহার শিক শরীরের বিভিন্ন অংশে গেঁথে অসীম কষ্ট সহ্য করে গোটা গ্রাম প্রদক্ষিণ করেন ভক্তরা ৷ এভাবেই তাঁরা ব্রত পালন করেন । দ্বিতীয় দিনে চড়কগাছ পোঁতা হয় ।তাতে প্রদক্ষিণ করেন ভক্তরা । এই পুজো উপলক্ষে বলিদান ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন হয় ।
আরও পড়ুন:
আমরাই গ্রামে এই গাজনে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই অতিথিদের সমাগম হয় । বর্তমানে এই পুজো পরিচালনা করেন আমরাই হিন্দু ষোলোআনা কমিটির সসদ্যরা । কমিটির সম্পাদক অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, "এই পুজো শুধু এই গ্রামের নয়, এই এলাকার সমস্ত মানুষের কাছে বিরাট এক উৎসব । গ্রামীণ ক্লাবগুলোর নাটক, যাত্রা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় এই কয়েকদিনে । চিরাচরিত রীতি মেনে এই পুজোর আয়োজন আজও অব্যাহত । এই পুজো উপলক্ষে গ্রামে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় । এই গ্রামীণ মেলার আকর্ষণ বিরাট ।"
এই উৎসব যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে পালিত হতে পারে, তাই গ্রামের যুবকেরা যেমন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন, তেমনই তৎপর থাকে দুর্গাপুর থানার পুলিশ । এই মন্দিরের পুরোহিত সুকুমার বন্দোপাধ্যায় বলেন, "স্মরণাতীত কাল থেকে এই পুজোর আয়োজন । আমার দাদামশাই, তারপর আমার বাবা, তারপর বর্তমানে আমাদের নাতিরাও এই পুজো করছে । 15 দিন আগেই এই পুজার আচার শুরু হয় ।"
আরও পড়ুন: