শিলিগুড়ি, 25 জানুয়ারি: প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় এবার শোরগোল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৷ অভিযোগ, দু’টি কিডনি বিকল হয়ে গেলেও 27 দিন ধরে বিনা ডায়ালিসিসে হাসপাতালে ফেলে রাখা হয় ওই প্রসূতিকে ৷ এই ঘটনায় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতের স্বামী ৷
অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পোর্টেবল ডায়ালিসিস মেশিন না-থাকায়, পরিকাঠামোর অভাবের অভিযোগে বিক্ষোভ দেখাল শিলিগুড়ির বিজেপি নেতৃত্ব ৷ নিহত প্রসূতি সান্ত্বনা রায়কে 'খুনে'র অভিযোগ করলেন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ ৷ কেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পোর্টেবল ডায়ালিসিস মেশিন নেই, সেই প্রশ্নে রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেন তিনি ৷
শঙ্কর ঘোষ বলেন, "এটাকে মৃত্যু বলবেন না ৷ এটা হত্যা ৷ হত্যা এই কারণে, বিষ স্যালাইনের কারণে প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ তাঁর কিডনি বিকল হয়ে যায় ৷ তারপর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন, সেখানে তাঁর ডায়ালিসিস হল ৷ তারপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ভেন্টিলেশনে দেওয়া হল ৷ কিন্তু, ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন, তাঁকে ডায়ালিসিস করানো হল না ৷ কারণ, পোর্টেবল ডায়ালিসিস মেশিন ছিল না ৷ 27 দিন ধরে বিনা ডায়ালিসিসে ফেলে রাখা হয়েছিল ৷ কেন তাঁকে কলকাতায় ট্রান্সফার করা হল না ?"
এ প্রসঙ্গে রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেন শঙ্কর ঘোষ ৷ তিনি বলেন, "এই সরকারের লজ্জা হওয়া দরকার ৷ নাচগানে দু-হাতে টাকা খরচ করছে রাজ্য সরকার ৷ কিন্তু, পোর্টেবল ডায়ালিসিস মেশিন কেনার জন্য টাকা দিতে পারে না ৷ হাসপাতাল সুপার অভিযোগ করেছেন, পোর্টেবল ডায়ালিসিস মেশিন কেনার টাকা চেয়ে আবেদন করেও পাওয়া যায়নি ৷ আর তাদের নেতারা দু’হাত তুলে নাচছে ৷ অথচ মাত্র সাড়ে দশ লক্ষ টাকার অভাবে পোর্টেবল ডায়লেসিস মেশিন-না থাকায় এই প্রসূতির মৃত্যু হল ৷ এটা দুর্ভাগ্যজনক ৷"
উল্লেখ্য, ওই প্রসূতি গত ডিসেম্বর মাসে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হন ৷ সেখানে সিজারের মাধ্যমে প্রসব করেন তিনি ৷ তারপরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি ৷ অভিযোগ ওঠে, তাঁকে বিষাক্ত আরএল স্যালাইন দেওয়া হয়েছে ৷ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে, 29 ডিসেম্বর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় ৷
অভিযোগ, 27 দিন ধরে বিনা ডায়ালিসিসে ফেলে রাখা হয়েছিল তাঁকে ৷ তার জেরেই না কি মহিলার মৃত্যু হয়েছে ৷ অন্যদিকে, জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে গেলে পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেন মহিলার স্বামী ৷ এরপর পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হওয়ার পর, অভিযোগ নেওয়া হয় ৷ মৃত প্রসূতির স্বামী উত্তম মাতব্বর বলেন, "27 দিন কেন আমার স্ত্রীকে ফেলে রাখা হল ? কেন কলকাতায় পাঠানো হল-না ? পুলিশও প্রথমে সহযোগিতা করেনি ৷ বিষাক্ত স্যালাইনও ব্যবহার করা হতে পারে ৷ এর তদন্ত হওয়া উচিত ৷"
হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, "পোর্টেবল ডায়ালিসিস মেশিন না-থাকায় ডায়লিসিস করা যায়নি ৷ শারীরিক পরিস্থিতি অনেকটা খারাপ থাকায় স্থানান্তরিত করা সম্ভব ছিল না ৷ তবে, ডায়ালিসিস মেশিনের জন্য এক বছর আগেই স্বাস্থ্যভবনে জানানো হয়েছিল ৷ কিন্তু, এখনও মেলেনি ৷ পরিবারের সদস্যরা যদি ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ময়নাতদন্ত চান, তাহলে সেটার ব্যবস্থা করা হবে ৷"