কলকাতা, 13 অগস্ট: আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আনা হল গুরুতর অভিযোগ ৷ এই ঘটনার সঙ্গে তুলনা টানা হয়েছে কামদুনি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার ৷ এই ঘটনায় তথ্য-প্রমাণ লোপাট করতেই মুখ্যমন্ত্রী সাতদিন সময় দিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলা হয় ৷ নিশানা করা হয় নগরপাল বিনীত গোয়েলকেও ৷ তবে স্বচ্ছ তদন্ত চলছে বলে দাবি করে রাজ্য সরকার ৷
আরজি করের ঘটনা নিয়ে বেশকয়েকটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে ৷ আজ সেই মামলায় মৃতার পরিবারকে যুক্ত করার আবেদনে সম্মতি দেন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ৷ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব নিতে দেখা যায় তাঁকে ৷ বেলা একটার মধ্যে এই ঘটনার কেস ডায়েরি পেশ করার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি ৷
এদিন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, "গোটা রাজ্যের রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না ৷ এই পরিস্থিতিতে এটা প্রথমেই দেখা দরকার । এটা নিয়ে আদালত উদ্বিগ্ন । কিন্তু যে নৃশংসভাবে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে তাঁর পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা অবশ্যই থাকবে ৷"
আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী হাসপাতালে পর্যাপ্ত সিসিটিভি নেই বলে অভিযোগ জানিয়েছেন । সে ব্যাপারে রাজ্যের আইনজীবী বলেন, "গোটা হাসপাতাল সিসিটিভি দিয়ে মুড়ে ফেলা সম্ভব নয় ।" তবে তাঁর মতকে খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতির বক্তব্য, চাইলে গোটা রাজ্য মুড়ে দেওয়া যায় সিসিটিভি দিয়ে ।
এই ঘটনার সঙ্গে কামদুনির ঘটনার তুলনা টেনে আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি অভিযোগ করেন, "কামদুনি ধর্ষণের ঘটনায় বিনীত গোয়েল তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন সিআইডি পদাধিকারী হিসাবে । সমস্ত তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছিল । এখন তিনি কলকাতা পুলিশের সিপি । একই জিনিস করা হতে পারে । তার পুরো সম্ভাবনা রয়েছে ।" আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীর অভিযোগ, তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করার জন্য ও অন্য কিছুকে আড়াল করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এখন সাতদিন সময় চাইছেন ।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর তরফে আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য বলেন, যে ধরনের তদন্তই হোক না কেন, একজন ব্যক্তির পক্ষে এই ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয় । সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে এনকাউন্টার করার কথা বলেছেন রাজ্যের শাসক দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি । ফলে আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না যে, তথ্য প্রমাণ লোপাট করা হতে পারে । নষ্ট করা হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ । উল্লেখ্য, সঞ্জয় রায়কে এনকাউন্টার করার কথা বলেছিলেন শাসকদলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, সকাল 10.30 নাগাদ চিকিৎসক-ছাত্রীর বাড়িতে টেলিফোন করে জানানো হয় তিনি অসুস্থ । পরিবার জানতে চায় কী ধরনের অসুস্থ ? সেসব কিছুই বলা হয়নি । পরে ফের বলা হয়, মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে । বাধ্য হয়ে মেয়েটির বাবা-মা ছুটে যায় হাসপাতালে । কিন্তু সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে তাঁদের মেয়ের কাছে যেতে দেওয়া হয় । যেভাবে সময় নষ্ট করা হয়েছে তাতে তথ্য-প্রমাণ নষ্ট হতে পারে ।
এর পর রাজ্যের আইনজীবী বলেন, "কারা এই ফোন করেছিল সেটা পুলিশ খতিয়ে দেখছে । কিন্তু কেউ যদি (বিকাশরঞ্জনকে উদ্দেশ্য করে বলেন) জানেন সেটা তাঁরা জানান পুলিশকে । পুলিশ দ্রুত তদন্ত করছে । এখনও পর্যন্ত 30-35 জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে । কিছু সময় দেওয়া হোক ।রাজ্য রিপোর্ট দিতে পারবে ।"
বিভিন্ন সওয়াল-জবাব শুনে প্রধান বিচারপতি রাজ্যের আইনজীবী অমিতেষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেন, "আপনারা কীভাবে আদালতকে আশ্বস্ত করবেন যে তদন্ত স্বচ্ছ হবে । কোনও তথ্য-প্রমাণ নষ্ট হবে না ! আপনারা স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করেছেন ?" জবাবে রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, সাতজন সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে । অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার নিজে তদন্ত তত্ত্বাবধান করছেন । রাজ্যের আইনজীবী অমিতেষ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, "এখনও পর্যন্ত স্বচ্ছ তদন্ত চলছে । তদন্তকারীরা সব রকমভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । কিন্তু সমাজ মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে ।"
তবে সব পক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পর এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট ৷ যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, সাতদিনের মধ্যে কিনারা না-হলে সিবিআই তদন্ত হোক ৷ তবে সেই সময় কাটার আগেই আজ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট ৷