কলকাতা ও বারাসত, 20 অগস্ট: আরজি করের পড়ুয়া চিকিৎসকের মৃত্যুতে উত্তপ্ত রাজনৈতির মহল ৷ মঙ্গলবার কলকাতা ও উত্তর 24 পরগনার বারসতে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখাল সিপিএম ও শ্রমিক সংগঠন সিটু ৷ সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর জেলাশাসক দফতরের অভিযান ঘিরে মঙ্গলবার ধুন্ধুমার পরিস্থিতি বাঁধল বারাসতে। কলকাতার মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সিআইটিইউ, এআইটিইউসি, এআইসিসিটিইউ, এআইইউটিইউসি, টিইউসিসি, এইচএনএস, আইএনটিইউসি, ইউটিইউসি'র নেতৃবৃন্দ।
- কলকাতা:
আরজি করে পড়ুয়া চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিল করলেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্ৰী, পুলিশ মন্ত্রীর তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি করলেন তাঁরা। একই সঙ্গে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের গ্রেফতারির দাবি করা হয়েছে । সর্বোপরি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন, শিল্প ও পেশাভিত্তিক ফেডারেশনসমূহের যৌথমঞ্চের নেতৃবৃন্দর বক্তব্য, "কর্মস্থলে মহিলাকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। একজন ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্রীকে যেভাবে তাঁর কর্মস্থলে নির্মমভাবে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে তা কার্যত নজিরবিহীন! এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র ধিক্কার জানিয়ে প্রকৃত দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমিক-কর্মচারীরা বিকাল পাঁচটায় ধর্মতলা থেকে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিলে শামিল হন।"
এই প্রসঙ্গেই সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনাদি বলেন, "ময়না তদন্তের রিপোর্টে অনেক কিছু আছে । সেদিন ডেপুটি সুপার ওই ছাত্রীর বাড়িতে বলেছিলেন ছাত্রী অসুস্থ, তারপর পরিবারকে বলা হয় তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁর পরিবারের লোকজনকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। ঘটনার নেপথ্যে আরও অনেক মাথা রয়েছে। তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা দ্রুত সামনে আনতে হবে। দোষীদের কঠোর থেকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।"
এআইসিসিটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বসু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "সন্দীপ ঘোষ দুর্নীতি চক্রের মাথা। চিকিৎসক জগতের কলঙ্ক। তাঁকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। কারণ, হাসপাতলে মানুষ সুস্থ হতে যান, হাসপাতালকে আমরা নিরাপদ জায়গা হিসেবেই বুঝি, সেখানেই এই নৃশংস ধর্ষণ খুন! তাও আবার একজন ডাক্তারি পড়ুয়াকে। এই ঘটনায় লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। দোষীদের একযোগে শাসক দল তৃণমূল ও পুলিশ প্রশাসন প্রথম থেকেই আড়াল করতে তৎপর। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষের বাক স্বাধীনতাকে এভাবে দমন করা যায় না ।"
- বারাসত:
এদিকে আরদি কর-কাণ্ডে বারাসতেও ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় ৷ আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর 12 দিন কেটে গেলেও আন্দোলনের ঝাঁঝ কিন্তু এতটুকু কমেনি। রাজনৈতিক দলগুলি আন্দোলন তো করছেই। সেই সঙ্গে অরাজনৈতিক ব্যানারেও পথে নেমে গর্জে উঠেছে সাধারণ মানুষ। সকলেরই একটাই দাবি,'জাস্টিস ফর আরজি কর'। সেই দাবিতেই মঙ্গলবার দুপুরে জেলাশাসক দফতর অভিযানের ডাক দিয়েছিল সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু। সেই মতো বারাসত স্টেশনের 1 নম্বর প্ল্যাটফর্ম চত্বর থেকে সিটুর কর্মী-সমর্থকরা মিছিল করে এগোতে থাকে জেলাশাসকের দফতরের দিকে।
এই কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন সিটুর জেলা তথা রাজ্য নেত্রী গার্গী চট্টোপাধ্যায়। মিছিলে অশান্তির আশঙ্কায় এদিন আগে থেকেই জেলাশাসকের দফতরের ঠিক সামনে গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেয় পুলিশ। তারই মধ্যে শুরু হয় পুলিশের গার্ডরেল ভাঙার চেষ্টা। যা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসা, ধস্তাধস্তি বেঁধে যায় সিটুর কর্মী, সমর্থকদের। জোর করে জেলাশাসকের দফতরে ঢোকার চেষ্টা হলে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় সেখানে।
মিডিয়া দেখে দৌড় আরজি কর-কাণ্ডে ধৃত সঞ্জয় ঘনিষ্ঠ পুলিশ কর্মীর
এই বিষয়ে সিটুর রাজ্য নেত্রী গার্গী চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় আমরা সুবিচার চাই। সেই কারণেই শান্তিপূর্ণভাবে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু,পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে সেই আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করল। এর থেকেই স্পষ্ট চিকিৎসক খুনে প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করতে চাইছে সরকার। নারীদের সুরক্ষায় যে 'রাত্তির সাথী' অ্যাপ চালু করা হয়েছে তারও বিরোধিতা করছি আমরা। কারণ, এসব করে আসলে মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমানোর চেষ্টা চলছে। এ রাজ্যে নারীদের কোনও নিরাপত্তা নেই। সেদিকে বরং জোর দিক রাজ্য সরকার ।"