বেলঘরিয়া, 12 জুলাই: আড়িয়াদহ-কাণ্ডে জয়ন্ত সিং-কে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার ঘটনার পুনর্নির্মাণ করল বেলঘরিয়া থানার পুলিশ । আড়িয়াদহের 'ত্রাস' জয়ন্ত সিং ও তাঁর দুই শাগরেদকে সঙ্গে নিয়ে এদিন তালতলা স্পোর্টিং ক্লাবে যান তদন্তকারী অফিসাররা । এরপর জয়ন্তকে নিয়ে সোজা ক্লাবঘরে ঢুকে যান পুলিশ আধিকারিকরা । দরজা বন্ধ ঘরে প্রায় আধঘণ্টা ধরে চলে আড়িয়াদহের ঘটনার পুনর্নির্মাণ । পুনর্নির্মাণ শেষে জয়ন্ত সিংয়ের 'মারকুটে' তালতলা স্পোর্টিং ক্লাব 'সিল' করে দেওয়া হয় ।
প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ক্লাবে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না বলে জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে । তল্লাশিতে ওই ক্লাব থেকে একটি লোহার রডও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । মারধরের সময় ওই লোহার রড ব্যবহার করা হত বলে খবর পুলিশ সূত্রে । আড়িয়াদহ-কাণ্ডে এলাকার বেতাজ বাদশা জয়ন্ত সিং গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজে ধরা পড়েছে 'ঔদ্ধত্য'। চালচলন এবং বেপরোয়া মনোভাবে তিনি কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন,'জয়ন্ত আছেন জয়ন্ততেই'! এদিনও পুনর্নির্মাণের সময় আড়িয়াদহের 'ডন'-এর শরীরী ভাষায় ছিল বেপরোয়া মনোভাব । যেন 'কুছ পরোয়া নেহি'।
এদিন সাংবাদিকরা তাঁর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিতেই ধাক্কা মেরে বুম সরিয়ে জয়ন্ত সোজা ঢুকে যান পুলিশের গাড়িতে । সেখানেও তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কেন তিনি ক্লাবঘরে ঢুকিয়ে সাধারণ মানুষের উপর নারকীয় অত্যাচার চালাতেন ? তার উত্তরে জয়ন্ত বলেন, "মারধরের সময় আমাকে কী ছবিতে দেখা গিয়েছে ?" নেতাদের সঙ্গে এক ফ্রেমে তাঁর ছবি থাকা নিয়ে জয়ন্তকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, "নেতাদের সঙ্গে সবারই ছবি থাকে।" অর্থাৎ,একের পর এক ভাইরাল ভিডিয়োয় তাঁর পৈশাচিক নির্যাতনের ছবি প্রকাশ্যে আসার পরেও অনুতপ্ত হওয়া তো দূরের কথা, বরং মাথা উঁচু করেই আদালত এবং থানায় প্রবেশ করতে দেখা গেল জয়ন্ত সিং-কে ।
স্থানীয়রা বলছেন,"এটাই তো জয়ন্ত'র বরাবরের স্বভাব । আদালত, আইনকানুন তাঁর কাছে কিছুই না । সেই-ই ছিল আড়িয়াদহের পুলিশ এবং আদালত । তাঁর মতো করেই তালতলা স্পোটিং ক্লাবে বসানো হত আদালত । একটু এদিক-ওদিক হলেই চলত নির্মম অত্যাচার ।"
সম্প্রতি আড়িয়াদহের এই ক্লাবেই এক যুবক-যুবতীর উপর তালিবানি শাসন চালানোর অভিযোগ ওঠে জয়ন্ত সিং ও তাঁর 'বাহুবলী' গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে । উইকেট দিয়ে তাঁদের বেধড়ক পেটানো হয় বলে অভিযোগ । মারধরের সেই হাড়হিম করা ভিডিয়ো ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে (যার সত্যতা যাচাই করেনি ইটিভি ভারত)। পুলিশ সূত্রে খবর, ক্লাবে কীভাবে এই কাজ চালাতেন জয়ন্তরা, তা বোঝার জন্যই সেখানে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । ক্লাবের কোন ঘরে কে বসতেন, মারধরে ব্যবহৃত হাতিয়ারগুলি কোথায় রাখা হত, তা-ই দেখতে গিয়েছিলেন পুলিশ আধিকারিকেরা ।
শুধু এটাই নয় ! এরকম আরও অনেককেই ক্লাবঘরে এনে জয়ন্ত'র বাহিনী তালিবানি কায়দায় শাসন করেছেন বলে অভিযোগ এলাকার লোকজনের । ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োর সূত্র করে জয়ন্ত সিংয়ের বেশ কয়েকজন শাগরেদ গ্রেফতার হয়েছেন পুলিশের হাতে । ধরা পড়েছেন আড়িয়াদহ-কাণ্ডের 'মাস্টারমাইন্ড' জয়ন্ত সিং-ও । আপাতত সে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তবে,গ্রেফতারের আটদিন পরেও জয়ন্ত'র ঔদ্ধত্য কমেনি এতটুকু !