সন্দেশখালি, 22 মে: তাঁরা শেষবার ভোট দিয়েছিলেন 2011 সালে ৷ রাজ্যে 34 বছরের বাম শাসনের পালাবদলের সময় ৷ তারপর থেকে একাধিক ভোট এসেছে, আর গিয়েছে ৷ ভোট কেন্দ্রে গেলে আঙুলে কালি লাগিয়ে ভোটের কাগজ কেড়ে নিত তৃণমূলের লোকজন ৷ তারপর শাসকের ইচ্ছেতেই হয় ভোট ৷ কথা হচ্ছে সন্দেশখালির নিপীড়িত মানুষগুলির ৷ যাঁদের উপর গত 10-12 বছর ধরে অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে শেখ শাহজাহান এবং তাঁর বাহিনীর উপর ৷ তেমনই কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছিল ইটিভি ভারত ৷
আগামী 1 জুন সন্দেশখালিতে নির্বাচন ৷ বসিরহাট লোকসভার অন্তর্গত এই সন্দেশখালি-সহ সুন্দরবনের একাংশ দ্বীপ অঞ্চল ৷ চলতি লোকসভা নির্বাচনে এই সন্দেশখালি একটি দাবানলের নাম ৷ যেখানে শাসকদলের বিরুদ্ধে জুলুমবাজি, নারী নির্যাতন, জমিদখল-সহ নানান অভিযোগ উঠেছে ৷ আর সেখান থেকে সুন্দরবনের এক দ্বীপ সন্দেশখালি আজ রাজনীতির বদ্ধভূমি ৷ সেখানকার একাংশ মানুষের মধ্যে আরও একটি ক্ষোভ আছে ৷ তা হল, নিজেদের ভোটাধিকার নিজেরা প্রয়োগ করতে পারেন না ৷ আর সেটা হয়ে আসছে 2011 সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে ৷
ভোট না-দিতে পারার বিষয়টি বেশি ঘটে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৷ 2023 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের স্মৃতি এখনও তাজা সেখানকার মানুষের মধ্যে ৷ বিরোধী দলের কেউ ভোটে দাঁড়ালে জোটে হেনস্থা ও পরিবারকে ভয় দেখানো ৷ কারও বাড়ির রেশন বন্ধ হয়ে যায়, তো কারও সন্তানের স্কুল যাওয়া ৷ এমনই ভয়াবহ অভিযোগ ভেসে বেড়াচ্ছে সন্দেশখালির 'নোনা-বাতাসে' ৷ আর ভোট কেন্দ্র পর্যন্ত হেঁটে গেলেও, ভোট দেওয়া হয় না ৷ তেমনি এক বাসিন্দা অভিযোগ করলেন, বুথের কাছে যেতেই শাসকদলের লোকেরা হাত থেকে ভোটের কাগজ নিয়ে নেয় ৷ আর বাইরে দাঁড় করিয়ে হাতে কালি লাগিয়ে দেওয়া হয় ৷ তারপর কোথায় ? কার নামে ভোট পড়ল ? তা আর জানতে পারেন না ৷
লোকসভা ও বিধানসভা ভোটেও ছবিটা প্রায় এক ৷ তবে, যেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকত, সেখানে লোকে ভোট দিতে পারতেন ৷ কিন্তু, কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপরেও যে, পুলিশ-প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ ৷ তবে, 2024 লোকসভায় ভোট দিতে পারবেন, এমনটা আশা করছেন সকলে ৷ কীসের ভরসায় এই আশা ? একাংশের কথায়, "প্রধানমন্ত্রী বলে গেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে ৷ তাঁদের ভরসায় ভোট দিতে যাব ৷ আশা করছি এবার ভোট দিতে পারব ৷"
স্থানীয়দের দাবি, "যাঁদের দাপটে ভোট লুঠ হত, তারা এখন জেলে ৷ এবার ভোট দিতে যাওয়া যাবে ৷ নিজের পছন্দের প্রাথীকে ভোট দেব ৷" এবারের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে রেকর্ড সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে ৷ সে প্রসঙ্গ তুলে অনেকেই বলছেন, "পুলিশকে তো আর ভরসা করা যায় না ৷ পুলিশের সামনে হাতে কালি লাগিয়ে বুথ থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হত ৷ এখন আর হবে না ৷ মানুষ প্রতিবাদ করবে ৷ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে ৷" সন্দেশখালির এই মানুষগুলোর আশাপূরণ হয় কিনা, সেটাই দেখার ৷ অপেক্ষা 1 জুনের ৷
আরও পড়ুন: