সন্দেশখালি, 9 ফেব্রুয়ারি: বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্র - টানা তিনদিন ধরে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালিতে । হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগে কার্যত অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সন্দেশখালি 2 নম্বর ব্লকে । শাহজাহান ঘনিষ্ঠ শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের বিরুদ্ধে অন্যায় অত্যাচারের অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফুঁসছেন গ্রামবাসীদের একটি বড় অংশ । যার জেরে শুক্রবারও চরম জনরোষ দেখা গিয়েছে জেলিয়াখালিতে । আবার পালটা শিবু হাজরার দলবলকেও এলাকার দখল নিতে ঝাঁপাতে দেখা গিয়েছে ।
সেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মধ্যেই এবার অশান্ত সন্দেশখালিকে শান্ত করতে কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটল প্রশাসন । সন্দেশখালিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য জারি করা হল 144 ধারা । সন্দেশখালি 2 ব্লকের মোট 16টি পঞ্চায়েত এলাকাজুড়ে এই 144 ধারা বলবৎ থাকবে বলে জানা গিয়েছে প্রশাসন সূত্রে । ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করা হচ্ছে সন্দেশখালিতে ।
সন্দেশখালিতে যে ক্ষোভের আঁচ ত্রিমোহনী এলাকার মধ্যে এতদিন সীমাবদ্ধ ছিল । সেই ক্ষোভের আঁচ শুক্রবার এসে পৌঁছয় জেলিয়াখালিতে । ভেড়ি অধ্যুষিত এই জেলিয়াখালিতেই শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা শিবু হাজরার একের পর এক পোল্ট্রি ফার্মে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় । শুধু তাই নয়, ওই তৃণমূল নেতার পৈতৃক ও বাগানবাড়িতেও হামলা চালিয়ে ঘরের যাবতীয় জিনিসপত্র তছনছ করে দেয় ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীদের একাংশ । জনরোষে পুড়ে খাক হয়ে যায় শাসক নেতা শিবু হাজরার একের পর এক সম্পত্তি ।
এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিরর খবর সংগ্রহে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকেও । ক্যামেরা পর্যন্ত ভেঙে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ । এসবের মধ্যেই শুক্রবার রাতে নবান্ন থেকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে । জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সন্দেশখালিকাণ্ডে দোষীরা কঠিন শাস্তি পাবে । এর পরপরই ডিজি এসসিআরবি সিদ্ধিনাথ গুপ্তা, আইজি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এসআর ঝাঁঝারিয়া, ডিআইজি বারাসত সুমিত কুমার, এসপি বসিরহাট-সহ বিভিন্ন জেলা থেকে সন্দেশখালিমুখী হতে দেখা যায় পুলিশ আধিকারিকদের । সঙ্গে আসে পুলিশ বাহিনীও । শনিবার সকালেও সন্দেশখালি ফেরিঘাট ধরে বিভিন্ন গ্রামে পৌঁছাতে দেখা গিয়েছে অতিরিক্ত বাহিনীকে ।
এসবের মধ্যেই এবার সন্দেশখালিতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে কোনোভাবেই নতুন করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না চলে যায়, তা নিশ্চিত করতে তৎপর পুলিশ-প্রশাসন । তাই সেখানে জারি করা হয়েছে 144 ধারা । যদিও শুক্রবার রাতে রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) মনোজ ভার্মা বলেছিলেন, ‘‘পরিস্থিতি সেই সময়ের মতো পুরোটাই কন্ট্রোলে । অশান্তিতে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’’ শুক্রবারের অশান্তির ঘটনায় আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি ।
এদিকে, শনিবার সকাল থেকেই মাইকিং করে গ্রামের বাসিন্দাদের অবগত করা হয় প্রশাসনের 144 ধারা জারির বিষয়ে । একসঙ্গে চারজনের বেশি জমায়েত না হওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে মাইকিং প্রচারের মাধ্যমে ৷ অন্যদিকে, সন্দেশখালিতে ফেরি সার্ভিস সচল করতে ফেরিঘাটগুলিতে পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো । অশান্তির আঁচ ফেরিঘাট পর্যন্ত যাতে এসে না পৌঁছয়, তার জন্য মোতায়েন রয়েছে পর্যাপ্ত পুলিশও ।
আরও পড়ুন: