কলকাতা, 28 অগস্ট: আগামী তিন-চার মাসে কেন্দ্রীয় সরকার ধর্ষণ বিরোধী কড়া আইন না-আনলে তৃণমূল দিল্লিতে গিয়ে ফের বৃহত্তর আন্দোলন করবে ৷ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের মঞ্চ থেকে এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে এদিন মেয়ো রোডে গান্ধি মূর্তির পাদদেশে ছাত্র সমাবেশে ধর্ষণ বিরোধী কড়া আইন তৈরি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ বাড়ালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । এ দিন এই মঞ্চ থেকেই তিনি দাবি করেন, "ধর্ষণের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কড়া আইন চান তিনি । তিনি বলেন, বিচার তবেই হবে, যদি আইন আসে । আমরা চাই, যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, সে যে কোনও রাজনৈতিক দল হোক, কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হোক ।"
এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই মঞ্চ থেকেই আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার যদি ধর্ষণবিরোধী কড়া আইন না-নিয়ে আসে, তাহলে দিল্লি গিয়ে আন্দোলনের হুমকি দেন । তিনি বলেন, "আগামী 3-4 মাসের মধ্যে কেন্দ্র যদি এই আইন না-আনে তাহলে দিল্লিতে বৃহত্তর আন্দোলনে তৃণমূল রাস্তায় নামবে ।"
এখানেই শেষ নয়, আরও একধাপ এগিয়ে অভিষেক বলেন, "আমরা কেন্দ্রকে চিঠি লিখব । আমাদের চাই ধর্ষণ বিরোধী আইন । কেন্দ্র যদি না-আনে তাহলে আমি প্রাইভেট মেম্বার বিল এনে এই আইন মুভ করব । সেই অধিকার যে কোনও সাংসদের আছে ।" তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার অহেতুক এই আইন আনতে দেরি করছে । কারণ তারা জানে এমন আইন আনা হলে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়বে বিজেপি । কারণ এ ধরনের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেই ।
এদিন পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে নারী নির্যাতন ও নারীদের উপর হওয়া অত্যাচারের ঘটনার পরিসংখ্যান দেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক । একইসঙ্গে, যারা এই রাজ্যে আরজি করের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চাইছেন, তাঁদেরও কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি ।
অভিষেকের কথায়, "যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইছেন, তাঁদের বলে রাখি, এনসিআরবি-র তথ্য বলছে যে রাজ্যগুলিতে নারী নির্যাতনের ঘটনা সব থেকে বেশি হয়েছে সেই তালিকায় উত্তরপ্রদেশ প্রথম, তারপর মধ্যপ্রদেশে, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র । উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মা, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিণ্ডে । সর্বত্রই রয়েছে ডবল ইঞ্জিন সরকার । ক্ষমতা থাকলে বিজেপি আগে তাঁদের পদত্যাগ দাবি করুক, তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তুলবেন ।"
একইসঙ্গে এদিন মণিপুরের ঘটনার উদাহরণও তুলে আনেন অভিষেক ৷ তিনি বলেন, "নারী সুরক্ষা আমাদের বিজেপির কাছে শিখতে হবে ! যাদের আমলে মণিপুরে বিবস্ত্র করে হাঁটানো হল । এরপর কি মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং পদত্যাগ করেছেন ? ক্ষমতা থাকলে বীরেন সিংয়ের পদত্যাগ চান ।"
এদিন ধর্ষণবিরোধী কড়া আইন আনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি । তিনি বলেন, "ভারতে ধর্ষণ বিরোধী টাইম বাউন্ড কঠোর আইন আনা উচিত কিনা বলুন । যারা নবান্ন অভিযান করে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন, তারা সংসদ অভিযান করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান ।" অভিষেকের কথায়, "রাতারাতি এই সরকার নোটবন্দি, লকডাউন করতে পারলে ধর্ষণ বিরোধী আইন কেন না ? এই ধর্ষকদের সমাজে থাকার অধিকার নেই । তিনি বলেন, সিবিআই আজ 14 দিন হয়ে গেল তদন্ত করছে । এর আগে সারদা, রবীন্দ্রনাথের নোবেল, কী বিচার হয়েছে ? বিচার তবেই হবে যদি আইন আসে । এই ঘটনায় যারা যুক্ত, সে যে দলেরই হোক দ্রুত শাস্তি চাই ।"