ব্রাহ্মণডাঙা (বাঁকুড়া), 2 অক্টোবর: বছরভর অষ্টধাতুর দেবী দুর্গার নিত্যসেবা। দুর্গাপুজোর সময় মাটির মূর্তিতে বিশেষ পুজো পাট বাঁকুড়ার ব্রাহ্মণডাঙা গ্রামে রায় পরিবারের দুর্গাদালানে। পরিবারের দাবি, পুজোর বয়স প্রায় 500 বছর অতিক্রান্ত। তবুও আজও বজায় রয়েছে পূর্বপুরুষের দেখানো রীতিনীতি। রয়েছে ইতিহাসের হাতছানি, রয়েছে বনেদিয়ানা ৷ জমিদারি চলে গেলেও ঐতিহ্য আজও অটুট। শোনা যায়, রায় বংশের আদি পুরুষের স্বপ্নাদেশে পাওয়া দেবী দুর্গার পুজো আজও নিয়ম মেনে পালন করেন পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা।
বাঁকুড়ার তালডাংরা ব্লকের ব্রাহ্মণডাঙা গ্রামের রায় পরিবারের আদি পুরুষের বসবাস ছিল উত্তর 24 পরগনার ভাটপাড়া এলাকায়। মগন রায় নামে পূর্বপুরুষ পুঁথি লিখতেন সেই সুবাদেই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় বিষ্ণুপুরের রাজার। শোনা যায়, বিষ্ণুপুর রাজার আমন্ত্রণে সেখানে আসেন মগন রায় ও তাঁর পরিবার। রাজার আদেশে তালুকদার হিসেবে নিযুক্ত হয়ে তালডাংরার ব্রাহ্মণডাঙা গ্রামেই বসবাস শুরু করেন তিনি। তাঁদের আসল পদবী গঙ্গোপাধ্যায় হলেও, বিষ্ণুপুর রাজার থেকেই 'রায়' উপাধি পান তাঁরা।
মগন রায় স্বপ্নাদেশে অষ্টধাতুর দুর্গামূর্তি পেয়ে পুজো পাট শুরু করেন। মন্দির নির্মাণ করে দুর্গাপুজো শুরু করেন তিনি। প্রায় 500 বছর প্রাচীন রায় পরিবারের দুর্গাপুজো। সারাবছর অষ্টধাতুর দেবী দুর্গার আরাধনা ও নিত্যসেবা করা হয়। দুর্গাপুজোর সময় মাটির মূর্তি নির্মাণ করে প্রাচীন নিয়ম মেনেই আরাধনায় মেতে ওঠেন রায় পরিবার ও গ্রামের মানুষ। মাটির মূর্তিও প্রায় 1 বছর রাখা থাকে দুর্গাদালানে, আষাঢ় মাসে তার বিসর্জন দেওয়া হয়।
এই ব্রাহ্মণডাঙা গ্রামে রয়েছে আরেক বিশেষ রীতি ৷ 'রায়' পরিবারের সদস্যেদের পাশাপাশি এই গ্রামের কোনও বাড়িতে শাঁখ বাজানো ও সন্ধে দেওয়া হয় না। বারো মাস দুর্গাদালানে প্রতিদিন সন্ধ্যারতি ও শঙ্খধ্বনি ধ্বনিত হয়। পুরনো বাড়িগুলি আজ জরাজীর্ণ, থামে জমেছে শ্যাওলা, চুন সুরকির পলেস্তারা খসে বেরিয়ে এসেছে ইট। অনেকেই পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি করেছেন। রয়েছে প্রাচীন স্মৃতি খিড়কি দিঘি। সেখানেই দেবী দুর্গার স্নান পর্ব ও ঘট উত্তোলন করা হয়।
নতুন রূপে দেবী দুর্গার মন্দিরও নির্মাণ করেছেন বর্তমান রায় পরিবারের সদস্যরা। পুজোর ভোগ রান্না করেন রায় পরিবারের পুরুষরা। নিয়ম ও প্রাচীন রীতির সবটুকু ভক্তিভরে পালন করেন তাঁরা। আজও নিষ্ঠা ও ভক্তির সঙ্গে দেবী দুর্গার আরাধনা করেছেন রায় পরিবার ও দৌহিত্ররা প্রজন্মের পর প্রজন্ম।