কলকাতা, 14 ডিসেম্বর: জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (জেডএসআই)-র বিজ্ঞানীরা পাঁচটি ভিন্ন প্রজাতির পরজীবী ভীমরুল আবিষ্কার করলেন ৷ একটি নাগাল্যান্ড থেকে, বাকি চারটি পশ্চিমঘাট অঞ্চলে পাওয়া গিয়েছে ৷ নাগাল্যান্ডে পাওয়া নতুন ভীমরুলকে Ceraphron initium শনাক্ত করেছেন
জেডএসআই ডিরেক্টর ধৃতী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "মূলত দু'টি জায়গা থেকে 5টি নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করা হয়েছে ৷ পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে এই ক্ষুদ্র প্রাণীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ৷" নাগাল্যান্ডে সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ বোর্ড (SERB)-এর অর্থায়নে পরিচালিত ফিল্ড সার্ভে চলাকালীন - Ceraphron initium নামে একটি প্রজাতি আবিষ্কার করা হয়েছে ৷
কাওমুদ ত্যাগীর নেতৃত্বে জেডএসআই দল Ceraphron initium আবিষ্কার করেছে ৷ তিনি বলেন, "আমরা এই নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করতে পেরে আনন্দিত ৷ Ceraphronidae ছোট আকার (0.8 মিমি থেকে 1.5 মিমি) ৷ বৈজ্ঞানিক পরিভাষায়, 'ডার্ক ট্যাক্সন' হল বলা হয় ৷ এদের জটিল আকার স্বতন্ত্র এবং অত্যন্ত রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের কারণে কখনও কখনও এদের উপেক্ষা করা হয় ৷ ঠিক একারণেই এতদিন অনাবিষ্কৃত ছিল প্রাণীটি ৷ নতুন আবিষ্কৃত প্রজাতির ব্যতিক্রমী ডানার প্যাটার্ন, শরীরের গঠন, পিগমেন্টেশন এবং বিশেষ করে অদ্ভুত পুরুষ যৌনাঙ্গ সহ বিভিন্ন স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে ৷"
গবেষকদের আর একটি দল পশ্চিমঘাটে চারটি নতুন প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন ৷ ডাঃ রাজমোহনা কে-এর নেতৃত্বে ওই দলটি চারটি নতুন প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন ৷ যেগুলির নাম ক্যালোটেলিয়া আকুটা, সি চিত্রক, সি ফোভেটা এবং সি ফুলভা ৷ এই Hymenopteran wasps বিভিন্ন পোকামাকড় প্রজাতির জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে ৷ বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ৷
এই আবিষ্কারক দলে ছিলেন গবেষক অমিত কুমার ঘোষ, বিকাশ কুমার এবং এ রমেশকুমার ৷ তাঁদের কঠোর পরিশ্রম ও গবেষণার কারণে নতুন প্রজাতির ভীমরুল চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন ৷ এগুলি ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গের উপর বা ভিতরে ডিম পাড়ে ৷ যেখানে লার্ভা হোস্টকে ধ্বংস করে ৷ প্রাকৃতিক কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত ৷ কারণ, এই প্রজাতিগুলি উদ্যানপালনে উপকারী এবং সহায়ক পোকামাকড় ৷
জেডএসআই গবেষকদের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে ডিরেক্টর ধৃতী বন্ধ্যপাধ্যায় বলেন, "ভারত যে প্রচুর জীববৈচিত্র্যের জায়গা তার প্রমাণ পাই এই ধরনের আবিষ্কারে ৷ ভারতে কীটপতঙ্গের প্রজাতির উল্লেখযোগ্য বৈচিত্র্য এবং এই প্রজাতিগুলি আমাদের বাস্তুতন্ত্রে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা স্পষ্ট ৷ তাছাড়া, আমাদের সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা জারি রাখার আহ্বান জানায় ৷"
তিনি আরও বলেন, "গবেষক দলগুলির ভবিষ্যতে এই প্রজাতির প্রাণীগুলির আণবিক এবং জৈব পরিবেশগত গবেষণায় ফোকাস করার পরিকল্পনা রয়েছে ৷ এই ধরনের কম পরিচিত কীটপতঙ্গ গোষ্ঠীর উপর ব্যাপক শ্রেণিবিন্যাস সংক্রান্ত গবেষণার জরুরী প্রয়োজন ৷ কারণ তারা টেকসই কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে ৷ এই গবেষণাটি ভারতে ক্যালোটেলিয়া প্রজাতির মোট সংখ্যাকে 25-এ উন্নীত করেছে ৷ যদিও এই প্রজাতির জৈবিক ভূমিকা এখনও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে ৷ বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং টেকসই কৃষিকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য ৷"