চন্দ্রপুর (বীরভূম), 26 নভেম্বর: হায়দরাবাদের পর এবার পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় দেশের দ্বিতীয় বেলুন উৎক্ষেপণ কেন্দ্র তৈরি হল ৷ সিউড়ি থেকে 18 কিলোমিটার দূরে 63 বছর পর ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের উদ্যোগে তৈরি হল এই কেন্দ্র । এখান থেকে প্রায় 100 ফুট ব্যাসের একটি বেলুন উৎক্ষেপণ করা হয় ৷ মাটি থেকে কমপক্ষে 40 কিলোমিটার উঁচুতে ওঠার পর সক্রিয় হয় বেলুনটি ৷ খুলে যায় বেলুনের 'পে-লোড' ৷ মহাকাশ থেকে অতি সহজে তথ্যসংগ্রহ করার ক্ষেত্রে গবেষকদের নতুন দিশা দেখাবে এই কেন্দ্র ৷
1961 সালে হায়দরাবাদ হোমি জাহাঙ্গির ভাবার উদ্যোগে দেশে প্রথম বেলুন উৎক্ষেপণ কেন্দ্র তৈরি করা হয় ৷ এই কেন্দ্রকে 'বেলুন ফেসিলিটি' বলা হয় ৷ 63 বছর পর দেশের দ্বিতীয় বেলুন উৎক্ষেপণ কেন্দ্র চালু হল বাংলায় ৷ ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের (ICSP)-এর উদ্যোগে বীরভূমের চন্দ্রপুরে 'হাই অল্টিটিউড বেলুন ফেসিলিটি' তৈরি করা হল ৷ সিউড়ি থেকে 18 কিলোমিটার দূরে এই কেন্দ্রটির তৈরি করা হয়েছে ৷ এই স্থান দিয়ে বিমান চলাচল না-করায়, এলাকাটিকে বেলুন উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ ।
ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স (আইসিএসপি)-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাকাশ বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী জানান, মহাকাশ থেকে অতি সহজে তথ্য সংগ্রহ করতে এই বেলুনের গুরুত্ব অপরিসীম ৷ ফলে হাতের কাছে এমন একটি গবেষণা কেন্দ্র বাংলার বিজ্ঞানীদের নতুন দিশা দেখাবে ৷ তিনি আরও জানান, এই কেন্দ্র থেকে 20 থেকে 100 ফুট ব্যাসার্ধের বেলুন উৎক্ষেপণ করা হবে । প্রথম দিনই একটি বেলুন উৎক্ষেপণ করা হয় কেন্দ্রটি থেকে ৷
কী এই বেলুন ? কীভাবে কাজ করে এটি ?
7 মাইক্রনের পলিথিন দিয়ে তৈরি 9 কেজি ওজনের এই বেলুনে রয়েছে অত্যাধুনিক নানা যন্ত্রাংশ ৷ একে 'হাই অল্টিটিউড বেলুন'ও বলা হয় ৷ হাইড্রোজেন গ্যাস ভরে এই বেলুন উৎক্ষেপণ করা হয় ৷ বায়ুমণ্ডলের ওজন স্তরের দিকে উঠে যায় এই বেলুন ৷ মাটি থেকে কমপক্ষে 40 কিলোমিটার উপরে ওঠার পর বেলুনের 'পে-লোড' খুলে যায় ৷ বায়ুমণ্ডলে কী ধরনের গ্যাস রয়েছে, সূর্যরশ্মি কোন উচ্চতায় কতটা সক্রিয়, মহাজাগতিক কোনও কণা রয়েছে কি না, এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেয় এই বেলুন ৷ সেই সঙ্গে, আবহাওয়া সংক্রান্ত নানা তথ্য অতি সহজেই সংগ্রহ করে এই বেলুন ৷
সন্দীপ চক্রবর্তী জানান, ইতিমধ্যেই এই সংস্থা 114 বার বেলুন উৎক্ষেপণ করেছে ৷ তবে সংস্থার স্থায়ী ও নিজস্ব কোনও বেলুন উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ছিল ৷ এবার সেই সমস্যার সমাধান হল ৷ এই স্থান থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত দূরে । ফলে বেলুনের তথ্য নিয়ে ফিরে আসার ক্ষেত্রে সুবিধা রয়েছে ৷ এছাড়া, নদীও নেই আশেপাশে । এই সকল বিষয়গুলি দেখেই চন্দ্রপুরকে বেলুন উৎক্ষেপণের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানান সন্দীপ চক্রবর্তী ৷
বিজ্ঞানী বলেন, "বীরভূমের এই ফাঁকা জায়গাটি গবেষণার জন্য উপযুক্ত। আগামী দিনে আমরা বায়ুমন্ডলের আরও উপরের স্তর নিয়ে গবেষণা করতে পারব। সেই রাস্তাই খুলে গেল ৷ এখানে পড়ুয়ারা এসে মহাকাশ গবেষণা করতে পারবেন ৷ তাঁদের কাছে হাতেকলমে বেলুন উৎক্ষেপণ করার জায়গা করতে পারলাম ৷ এটি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় বেলুন উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ।"