কলকাতা, 10 অগস্ট: 15 বছরের বাস আর চলবে না শহর ও শহরতলির রাস্তায়। তাই ধীরে ধীরে ওই বাসের সংখ্যা কমছে রাস্তায়। অন্যদিকে, বেসরকারি বাস মালিকরা এই বিষয় ভিন্ন মত পোষণ করে সরকারকে চিঠিও দিয়েছে। কিন্তু এই নিয়মে অনড় রাজ্য পরিবহণ বিভাগ।
তবে বেসরকারি বাস মালিকদের কিছুটা সুবিধা করে দিতে রাজ্যে পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, যেসব সরকারি বাস অব্যবহৃত হয়ে পড়ে রয়েছে সেইসব বাসগুলোকে বেসরকারি অপারেটররা চাইলে তিন বছরের লিজে চালাতে পারবেন। সেক্ষেত্রে 30 থেকে 40 লক্ষ টাকা খরচ করে বেসরকারি বাস মালিকদের আপাতত নতুন বাস আর কিনতে হবে না। তবে এতে কোনও সুরাহা হয়নি কারণ আশানুরূপ লাভ থাকছে না বেসরকারি বাস মালিকদের। এর পাশাপাশি অনেক কম সংখ্যক বাস মালিকরা সরকারের থেকে বাস লিজ নিয়ে চালাচ্ছেন। তাই এই জটিলতায় রাস্তায় বেরিয়ে বাস না-পেয়ে ভোগান্তি হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের।
বাস না-চলার নির্দেশ: প্রসঙ্গত, শহর কলকাতা ও শহরতলীর পরিবহণ দূষণের মাত্রা কম করতেই জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে ভারত স্টেজ (বিএস) 6 মানের নীচে থাকা 15 বছরের গাড়িগুলোকে আর পথে নামাবে না, এমনটা সিদ্ধান্ত নেয় ৷ আর ওই নির্দেশিকা মেনেই পাবলিক ভেহিক্যাল বিভাগ 15 বছরের পুরনো গাড়িগুলিকে চিহ্নিত করে সেইসব গাড়ির মালিকদের নোটিশ পাঠাতে শুরু করে। 15 বছরের পুরনো গাড়িগুলোকে স্ক্যাপ পলিসি অনুসারে বাতিল করতে হবে।
বাস না-চললে প্রভাব: পাবলিক ভেহিক্যাল ডিপার্টমেন্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ধীরে ধীরে বেসরকারি বাস ও মিনিবাস মিলিয়ে বাতিল হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই প্রায় 500-র বেশি বেসরকারি বাস বাতিল হয়েছে। পাশাপাশি অটো সংখ্যা হল প্রায় 1000 এবং ট্যাক্সি সংখ্যা 1000 থেকে 2000-এর মধ্যে। যদিও চলতি বছরে মধ্যে এই সংখ্যাগুলি আরও বেড়ে যাবে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু রুটে বেসরকারি বাসের অভাব দেখা দিয়েছে। সমস্যায় পড়ছেন নিত্যযাত্রীরা। এমনকী রাস্তায় অমিল সরকারি বাসও। তাই অব্যবহৃত সরাসরি বাস নিয়ে বেসরকারি বাস মালিকপক্ষকে চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে এই ব্যবস্থাতেও সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বেসরকারি বাস মালিকরা।
- এই বিষয়ে অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমরা আমাদের নিজেদের বাসই চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। তবে সরকারের বেঁধে দেওয়া শর্ত মেনে সরকারি বাস লিজ নিয়ে চালানো একপ্রকার অসম্ভব হয়ে উঠবে। গত কয়েক বছরে পেট্রল, ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।"
- তিনি আরও বলেন, "পাশাপাশি যন্ত্রাংশের দামও অনেক বেড়ে গিয়েছে। তাই পুরনো বাস বাতিল হয়ে গেলে তার পরিবর্তে নতুন বাস কেনার মতো সামর্থ্য বেসরকারি বাস মালিকদের আর নেই। একটি নতুন বাস কিনতে গেলে প্রথমেই যে এককালীন ডাউনপেমেন্ট করতে হয়ে সেই টাকা ও এমন আমাদের কাছে নেই। এছাড়াও রয়েছে মাসে মাসে কিস্তি। সমস্ত রুটেই বেসরকারি বাস অপ্রতুল। চলতি বছর থেকেই এই অভাব প্রকটভাবে দেখা দেবে।"
- অন্যদিকে, বেসরকারি বাস মালিক সংগঠন সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা জানিয়েছেন, পুরোনো গাড়ি বাতিল হয়ে গেলে যাতে বেসরকারি বাস মালিকদের এককালীন অনেকটা অর্থ ব্যয় করে নতুন বাস কিনতে না-হয়ে তাই বিকল্প হিসেবে এই পাইলট প্রজেক্টটি চালু করে রাজ্যে পরিবহণ বিভাগ। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আয়ের পথটি মসৃণ নয়। এই বাস চালিয়ে আয় ও ব্যয়ের সমতা রক্ষা করা যাচ্ছে না। বাসগুলো টেকনিক্যালি খুবই দুর্বল। এই বাসগুলির বেশিরভাগই 1613 মডেলের গাড়ি। আর এই বাসগুলি চালাতে অনেক বেশি জ্বালানি লেগে যাচ্ছে ।
- তিনি আরও বলেন, "করোনার পরবর্তী সময় বাসের অভাবে বহু বাস রুট বন্ধ হয়ে গিয়েছে আবার অনেক রুটে বাসের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমে গিয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে 15 বছরের পুরোনো বাসের অবলুপ্তি তাই গণপরিবহণ একটা বিরাট সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই যাতে যাত্রীদের রাস্তায় বেরিয়ে সমস্যার মুখে না-পড়তে হয়ে তাই রাজ্যে সরকারকেই বিষয়টির দিকে নজর দিতে হবে। বাস মালিকরা জানিয়েছেন, যে বেসরকারি বাসের ক্ষেত্রে মাইলেজ দেয় 4 কিলোমিটার বা তার বেশি আর যেহেতু তেলের ট্যাঙ্ক ছোট তাই জ্বালানিও তুলনায় অনেকটা কম লাগে কিন্তু সরকারি বাসের ক্ষেতে মাইলেজ 2.3 থেকে 2.4 কিলোমিটার।
একাংশের বাস মালিকরা 15 বছরের বাস বাতিলের বিরোধীরা করছে। এই বিষয় ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস অ্যান্ড মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ নারায়ণ বসু বলেন, "এক একটি বাসে প্রতিদিন প্রায় 600 যাত্রী পরিবহণ করা হয়। তাই 15 বছরের গাড়ি বাতিল করে দিলে সরাসরি 21 লক্ষ যাত্রীর পরিবহণ পরিষেবায় ছেদ পড়তে চলেছে। শুধু যে বাস মালিকদের ক্ষতি হচ্ছে তেমনটা নয় লক্ষ লক্ষ যাত্রী এর ফলে সমস্যার মুখে পড়বেন ৷
তিনি আরও বলেন, "কারণ সরকারি বাসের চেয়ে বেসরকারি বাসের উপরেই অনেক বেশি নির্ভর করেন নিত্যযাত্রীরা। এর পাশাপাশি পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত লক্ষ লক্ষ কর্মী এবং তাঁদের পরিবারেরও ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে। তাই করোনা পরিস্থিতিতে যখন টানা দু'বছর বাস চলেনি সেই সময় তো বাসের কোনওরকম যেহেতু সেই সময় পুরোপুরি বাস করি বসেছিল তাই 15 বছরের মেয়াদটা আরও দু'বছরের জন্য বাড়াবার আবেদন চালানো হয়েছে পরিবহণ দফতরকে।"