ETV Bharat / sports

যশস্বীর পরপর ডাবল সেঞ্চুরি অপ্রত্যাশিত কোচ জ্বালা সিংয়ের কাছেও

Yashasvi Jaiswal's Childhood Coach Jwala Singh Exclusive Interview: মুম্বইয়ে জ্বালা সিংয়ের অ্যাকাডেমিতে 13 বছর বয়সে প্রথম এসেছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল ৷ তখন থেকেই সন্তান স্নেহে ভারতীয় ক্রিকেটের বর্তমান ও ভবিষ্যতের এই তারকাকে গড়ে তুলেছেন ৷ প্রিয় ছাত্রের সাফল্যের পিছনের কাহিনী শোনালেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি সঞ্জয় অধিকারীকে ৷

ETV BHARAT
ETV BHARAT
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 21, 2024, 12:45 PM IST

যশস্বীর 'যশ' হওয়ার কথা শোনালেন কোচ

কলকাতা, 21 ফেব্রুয়ারি: আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ভালো খেলবে, এই প্রত্যাশা যশস্বী জয়সওয়ালকে ঘিরে তাঁর ছোটবেলার কোচ জ্বালা সিংয়ের ছিল ৷ কিন্তু, ছাত্র যে পরপর দু’টি ডাবল সেঞ্চুরি করবেন, তা স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি ৷ ইটিভি ভারতকে ফোনে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে সে কথাই জানালেন যশস্বীর কোচ ৷

কেরিয়ারের শুরুতেই এই পারফরম্যান্স যশস্বী করবেন বলে আশা করেছিলেন ?

দেখুন প্রত্যাশা একটা ছিল ৷ ছোট থেকেই ও যখন যেখানে খেলেছে সেখানেই ভালো খেলেছে ৷ যে দলেই খেলেছে বড় বড় রান করেছে ৷ তাই একটা প্রত্যাশা ছিল, দেশের হয়ে খেলবে এবং বড় রান করবে ৷ কিন্তু, দু’টো পরপর ডাবল সেঞ্চুরি করবে মানে একটা আলাদা কিছু করে ফেলেছে ৷ রেকর্ড গড়া এক জিনিস ৷ ভালো খেলা আলাদা ব্যাপার ৷ পরপর ডাবল সেঞ্চুরি প্রত্যাশার বাইরে ছিল ৷ রান করছে, আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটেও রান করছে ৷ তাই ওর রান করাটা আমার কাছে বিস্ময়ের নয় ৷

'বাজবল' ক্রিকেট নিয়ে সিরিজ শুরুর আগে অনেক বলা হচ্ছিল ৷ এখন 'যশবল' ক্রিকেটে সিরিজটা পরিণত হয়েছে ৷ ডাবল সেঞ্চুরির পরে ছাত্রের সঙ্গে কি কথা হয়েছে ?

না, আমার সঙ্গে কথা হয়নি ৷ খেলা চলাকালীন কোনও কথা আমি বলি না ৷ পরে দেখব ৷ সিরিজটা শেষ হোক, তখন আমি ডাকব ৷ কথা বলব ৷ এখন ভারতীয় দলে অনেক বড় বড় কোচ রয়েছেন ৷ তাঁদের পরামর্শ পাচ্ছে ৷ ব্যাটিং কোচ, বোলিং কোচ, অধিনায়ক রয়েছেন ৷ ওরা ওকে পরামর্শ দিচ্ছেন ৷ সেই কারণেই ভালো খেলছে ৷

বড় বড় কোচের রয়েছে ৷ কিন্তু আপনি ওকে তৈরি করেছেন ৷ তাই আপনার পরামর্শ সবসময়ই তো মূল্যবান ৷ ঠিক কি না ?

ও যখন পারফরম্যান্স করতে পারে না, তখন আমি পরামর্শ দিয়ে থাকি ৷ যখন পারফর্ম করছে তখন পরামর্শের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না ৷ যখন যশস্বী মানসিকভাবে তলানিতে থাকে, রান করতে পারে না, তখন আমি ওর সঙ্গে কথা বলি ৷ মোটিভেট করে থাকি ৷ অতীতে যে সব নিয়ে আলোচনা করেছিলাম সেগুলি বলি ৷ তবে, এখন তো প্রয়োজন নেই ৷ যখন ঠিকঠাক চলে না, তখন আমি কাজে আসি ৷ এখন অনেক লোক আছে ওখানে যারা সামলে দিচ্ছে ৷

আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলছে ৷ রান পাচ্ছে ৷ তা সত্ত্বেও আপনার চোখে কি কোনও টেকনিক্যাল ঘাটতি চোখে পড়েছে ?

এখন টানা রান করে চলেছে ৷ এই অবস্থায় টেকনিক্যাল বা মানসিক দিক দিয়ে আধিপত্য দেখাচ্ছে ৷ আপনি শুরুতেই বলেছেন 'যশবল' ক্রিকেট খেলছে যশস্বী ৷ আজ আপনারা যে ব্যাটিং যশস্বীর দেখছেন, তা নিয়ে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একসময় কাজ করেছি ৷ ও যখন আমার কাছে এসেছিল তখন প্রাথমিকভাবে কী করতে হবে, সে বিষয় নিয়ে কোনও ধারনা ছিল না ৷ তারপর থেকে পরামর্শ দিয়ে আমি ঠিক করেছি ৷ ক্রিকেটীয় শট খেলার ওপর জোর দিতে বলেছি ৷ যে কোনও ক্রিকেটে নয় জনই ফিল্ডার থাকবে ৷ তাদের মধ্যে দিয়ে গ্যাপ খুঁজে বা তাদের উপর দিয়ে বল মেরে আপনাকে রান করতে হবে ৷ ওই সব নিয়ে আমি কাজ করেছি ৷

যখন যশস্বী অনূর্ধ্ব-19 দলে ছিল, তখন টেকনিক নিয়ে কাজ করেছিলাম ৷ অনূর্ধ্ব-19 বিশ্বকাপে ও ছিল ৷ তারপর করোনা অতিমারি শুরু হল ৷ লকডাউনের সময় আমরা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম ৷ তারপরেই আইপিএল চলে এসেছিল ৷ সেখানে যশস্বী রান করতে পারেনি ৷ সেইসময় হতাশ হয়ে কাঁদত, আর বলত ক্রিকেট জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ ওই সময় ওকে ফের গড়ে তুলি ৷ কুড়ি-পঁচিশ দিন ওকে টি-20 ক্রিকেট কীভাবে খেলতে হয়, তা শিখিয়েছিলাম ৷ কোথা দিয়ে বল মারতে হয় ? ফাস্ট বোলারদের কীভাবে সামলাতে হবে ? তা শিখিয়ে ছিলাম ৷

আইপিএলে প্রথমবার খেলতে গিয়ে ট্রেন্ট বোল্টের বিরুদ্ধে গতিতে পরাস্ত হচ্ছিল ৷ তারপর সেটা নিয়ে কাজ করেছিলাম আমরা ৷ সেখান থেকেই বদলটা শুরু হয়েছিল ৷ আমরা সেইসময় ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে প্রচুর কাজ করেছি ৷ মানসিকতার উন্নতির জন্য কাজ করেছিলাম ৷ সেই গড়ে ওঠার পরিশ্রমের ফল আপনারা দেখতে পাচ্ছেন ৷ আইপিএলে যখন যায়, তখন কোচেরাও ওকে নিয়ে কাজ করেছে ৷ আমি মনে করি 2021-22 সালে আমি ওকে পুরো তৈরি করে দিয়েছিলাম ৷ তারপর বড় ক্রিকেটারদের কাছে গিয়ে পরামর্শ পেয়েছে ৷ আমার মনে হয় না টেকনিক নিয়ে কাজ করার আরও কিছু আছে ৷

আমার মনে হয় যেবার প্রথম আইপিএল খেলেছিল, তখন চ্যালেঞ্জটা এসেছিল ৷ রানই করতে পারছিল না ৷ মনে হয়েছিল আইপিএলে ওকে আর নেবে না ৷ ওর প্রথম ও দ্বিতীয় আইপিএলের মাঝের সময়ে আমরা প্রচুর পরিশ্রম করেছি ৷ প্রচুর প্র্যাকটিস করেছি ৷ ওই সময় প্লাস্টিক বলে ওকে প্র্যাকটিস করাতাম ৷ আর বলতাম প্রচুর মারতে ৷ আমার মনে হয় ওর প্রথম ও দ্বিতীয় আইপিএলের মাঝের সময়ে যে পরিশ্রম করেছিলাম তার জন্যই এখন ভয়ডরহীন ক্রিকেট যশস্বী খেলতে পারছে ৷

সেই সময় ও বলত আইপিএল, টি-20 কীভাবে খেলতে হয়, বুঝতে পারছে না ৷ আমি তখন ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখার কথা বলতাম ৷ কীভাবে খেলতে হবে, কোন বোলারের বিরুদ্ধে কী কৌশল নিতে হবে, তা দ্বিতীয় ভাগ ৷ যেকোনও বোলারের বিরুদ্ধে মানসিকভাবে ইতিবাচক থাকা জরুরি ৷ বোলারকে বুঝতে দিলে চলবে না, আমি ভয় পাচ্ছি ৷ ইতিবাচক থাকতে হবে মানসিকভাবে ৷ আপনি দেখুন জেমস অ্যান্ডারসনকে যশস্বী তিনটে ছয় মেরেছে ৷ এটা সম্ভব হয়েছে টেকনিক, মানসিক এবং শারীরিকভাবে ইতিবাচক থাকার কারণে ৷

দুই দিন আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন যশস্বী জয়সওয়ালের হাতে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যত ৷ সব ধরনের ক্রিকেটেই ওর খেলার ক্ষমতা রয়েছে ৷ এই ব্যাপারে আপনি কী বলবেন ?

দাদা যখন বলেছে, তখন তো গুরুত্ব দিতেই হবে ৷ দেশের সেরা ক্রিকেটারদের অন্যতম ৷ অধিনায়কদের মধ্যেও অন্যতম সেরা ৷ ওনার ক্রিকেটীয় জ্ঞান প্রচুর ৷ যশস্বীর মধ্যে কিছু দেখেছেন বলেই বলেছেন ৷ ক্রিকেটে ভবিষ্যত বলে কিছু নেই ৷ বর্তমানেই যা কিছু হয় ৷ তবে ওকে যদি এগোতে হয়, দাদার মতো হতে হয়, শচিন তেন্ডুলকরের মতো হতে হয়, তাহলে পরিশ্রম ধারাবাহিকভাবে করে যেতে হবে ৷ তাহলেই যশস্বী আরও উপরে, ওই পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে ৷

যশস্বীর মানসিক কাঠিন্য কি ওর বেড়ে ওঠার মধ্যে লুকিয়ে ?

যখন যশস্বী মুম্বইতে এসেছিল তখন ছোট ছিল ৷ ওই সময় ওকে সমর্থন বা পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ ছিল না ৷ কোথাও একটা জীবন সংগ্রাম ছিল ৷ তবে, 2013 সালে আমার কাছে আসার পরে, ওকে কোনও কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়নি ৷ আমি নিজের সন্তানের মতো করে যশস্বীকে বড় করেছি ৷ 1995 সালে আমি উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর থেকে মুম্বই এসেছিলাম ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ৷ আমি প্রচুর কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছি ৷ আমার কঠিন সময়ের কথা ওকে বলতাম ৷ আমি যে কষ্ট করেছি, তা যাতে যশস্বীকে করতে না হয়, সেটা দেখতে বলতাম ৷ কষ্ট আমি করব, তুই শুধু খেলে যা বলতাম ৷

অনেক ক্রিকেটার আছে যারা প্রতিভাবান হয়েও কিছু করতে পারেনি ৷ আবার অনেকে দারুণ শুরু করেও হারিয়ে গিয়েছে ৷ আমি সেইসব গল্প বলতাম ৷ যখন খেলত তখন সবসময় ওর পরীক্ষা নিতাম ৷ মানসিকভাবে উদ্বুদ্ধ করতাম আমি ৷ এটায় সফল হলে এই জিনিসটা দেব বলতাম ৷ মুম্বইয়ের হয়ে খেলা সবসময়ই কঠিন ৷ মুম্বই দলে ভালো পারফরম্যান্স না করে টিকে থাকা যায় না ৷ ভারতীয় দলে ঢুকে পড়া জরুরি ৷ ভারতীয় দলে না খেলে মুম্বই দলে টিকে থাকা কঠিন ৷ দীর্ঘসময় ভারতীয় দলে না খেললে, মুম্বইতে টিকে থাকা যায় না ৷

যশস্বী অনেক ছোটবেলা থেকে বড়বড় ক্রিকেটাদের দেখে বেড়ে উঠেছে ৷ যশস্বীর দারিদ্রতা নিয়ে কথা অনেকেই বলেন ৷ 2013 সালের পরে ওকে, কোনও কষ্টের মধ্যে থাকতে হয়নি ৷ বিশ্বমানের ক্রিকেটীয় পরিকাঠামো আমার অ্যাকাডেমিতে যশস্বী পেয়েছে ৷ ওয়াসিম জাফর আমার খুব ভালো বন্ধু ৷ আমি ওকে প্র্যাকটিস করাতাম ওয়াসিমদের সঙ্গে ৷ বলতাম ওর মতো ব্যাট করতে ৷

যশস্বী জয়সওয়াল দারিদ্রতার মধ্যে দিয়ে বড় হয়নি ৷ ওর কষ্টের জীবন অনেক আগের ৷ যখন কেউ দেখত না ৷ মা-বাবা দেখত না ৷ আমি যশস্বীকে সেরা সুবিধার মধ্যে দিয়ে তৈরি করেছি ৷ ওয়াসিম জাফর, দিলীপ বেঙ্গসরকর এবং অনেক বড় বড় ক্রিকেটারের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেয়েছে ৷ মুম্বই রঞ্জি দলের হয়ে যাঁরা খেলছেন, তাঁদের সঙ্গে প্র্যাকটিস করেছে ৷ যশস্বী মুম্বই লিগের কনিষ্ট ক্রিকেটার হিসেবে খেলেছে ৷ কাঙ্গা লিগে ওকে খেলাত না ৷ প্রচুর ঝামেলা হয়েছিল ৷ আমি সংশ্লিষ্ট অধিনায়কদের সঙ্গে পাঙ্গা নিয়েছি ৷ আমি বলতাম একটা সুযোগ দিন ৷ যশস্বী সমস্ত সুবিধা পেয়েছে ৷

কোচের লড়াই কি যশস্বীর অনুপ্রেরণা ?

আমি 1995 সালে মুম্বইতে এসেছিলাম ৷ আচেরকর স্যারের অ্যাকাডেমিতে ছিলাম ৷ সারদাশ্রম স্কুলে ছিলাম ৷ কিন্তু পেশির চোটে আমি ছিটকে যাই ৷ তারপর থেকেই আমি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে এসেছি ৷ ক্রিকেটার তৈরি করার পরিকল্পনা নিই ৷ আমি সবসময় আমার কঠিন সময়ের কথা বলতাম ৷ শুধু খেলে যাওয়ার কথা বলতাম ৷ বাকিটা আমি দেখে নেওয়ার কথা বলতাম ৷ এখন ভারতের হয়ে খেলছে তাতে আমি দারুণ খুশি ৷

আরও পড়ুন:

  1. কোল আলো করে এল দ্বিতীয় সন্তান, পাঁচদিন পর অনুরাগীদের সুখবর শোনালেন 'বিরুষ্কা'
  2. দ্বিশতরানে ফের 'যশস্বী' জয়সওয়াল, রাজকোটে ব্রিটিশদের সামনে 557 রানের লক্ষ্যমাত্রা
  3. সেহওয়াগের সঙ্গে এক সারিতে সেঞ্চুরিয়ান যশস্বী, তিনশো পার ভারতের লিড

যশস্বীর 'যশ' হওয়ার কথা শোনালেন কোচ

কলকাতা, 21 ফেব্রুয়ারি: আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ভালো খেলবে, এই প্রত্যাশা যশস্বী জয়সওয়ালকে ঘিরে তাঁর ছোটবেলার কোচ জ্বালা সিংয়ের ছিল ৷ কিন্তু, ছাত্র যে পরপর দু’টি ডাবল সেঞ্চুরি করবেন, তা স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি ৷ ইটিভি ভারতকে ফোনে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে সে কথাই জানালেন যশস্বীর কোচ ৷

কেরিয়ারের শুরুতেই এই পারফরম্যান্স যশস্বী করবেন বলে আশা করেছিলেন ?

দেখুন প্রত্যাশা একটা ছিল ৷ ছোট থেকেই ও যখন যেখানে খেলেছে সেখানেই ভালো খেলেছে ৷ যে দলেই খেলেছে বড় বড় রান করেছে ৷ তাই একটা প্রত্যাশা ছিল, দেশের হয়ে খেলবে এবং বড় রান করবে ৷ কিন্তু, দু’টো পরপর ডাবল সেঞ্চুরি করবে মানে একটা আলাদা কিছু করে ফেলেছে ৷ রেকর্ড গড়া এক জিনিস ৷ ভালো খেলা আলাদা ব্যাপার ৷ পরপর ডাবল সেঞ্চুরি প্রত্যাশার বাইরে ছিল ৷ রান করছে, আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটেও রান করছে ৷ তাই ওর রান করাটা আমার কাছে বিস্ময়ের নয় ৷

'বাজবল' ক্রিকেট নিয়ে সিরিজ শুরুর আগে অনেক বলা হচ্ছিল ৷ এখন 'যশবল' ক্রিকেটে সিরিজটা পরিণত হয়েছে ৷ ডাবল সেঞ্চুরির পরে ছাত্রের সঙ্গে কি কথা হয়েছে ?

না, আমার সঙ্গে কথা হয়নি ৷ খেলা চলাকালীন কোনও কথা আমি বলি না ৷ পরে দেখব ৷ সিরিজটা শেষ হোক, তখন আমি ডাকব ৷ কথা বলব ৷ এখন ভারতীয় দলে অনেক বড় বড় কোচ রয়েছেন ৷ তাঁদের পরামর্শ পাচ্ছে ৷ ব্যাটিং কোচ, বোলিং কোচ, অধিনায়ক রয়েছেন ৷ ওরা ওকে পরামর্শ দিচ্ছেন ৷ সেই কারণেই ভালো খেলছে ৷

বড় বড় কোচের রয়েছে ৷ কিন্তু আপনি ওকে তৈরি করেছেন ৷ তাই আপনার পরামর্শ সবসময়ই তো মূল্যবান ৷ ঠিক কি না ?

ও যখন পারফরম্যান্স করতে পারে না, তখন আমি পরামর্শ দিয়ে থাকি ৷ যখন পারফর্ম করছে তখন পরামর্শের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না ৷ যখন যশস্বী মানসিকভাবে তলানিতে থাকে, রান করতে পারে না, তখন আমি ওর সঙ্গে কথা বলি ৷ মোটিভেট করে থাকি ৷ অতীতে যে সব নিয়ে আলোচনা করেছিলাম সেগুলি বলি ৷ তবে, এখন তো প্রয়োজন নেই ৷ যখন ঠিকঠাক চলে না, তখন আমি কাজে আসি ৷ এখন অনেক লোক আছে ওখানে যারা সামলে দিচ্ছে ৷

আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলছে ৷ রান পাচ্ছে ৷ তা সত্ত্বেও আপনার চোখে কি কোনও টেকনিক্যাল ঘাটতি চোখে পড়েছে ?

এখন টানা রান করে চলেছে ৷ এই অবস্থায় টেকনিক্যাল বা মানসিক দিক দিয়ে আধিপত্য দেখাচ্ছে ৷ আপনি শুরুতেই বলেছেন 'যশবল' ক্রিকেট খেলছে যশস্বী ৷ আজ আপনারা যে ব্যাটিং যশস্বীর দেখছেন, তা নিয়ে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একসময় কাজ করেছি ৷ ও যখন আমার কাছে এসেছিল তখন প্রাথমিকভাবে কী করতে হবে, সে বিষয় নিয়ে কোনও ধারনা ছিল না ৷ তারপর থেকে পরামর্শ দিয়ে আমি ঠিক করেছি ৷ ক্রিকেটীয় শট খেলার ওপর জোর দিতে বলেছি ৷ যে কোনও ক্রিকেটে নয় জনই ফিল্ডার থাকবে ৷ তাদের মধ্যে দিয়ে গ্যাপ খুঁজে বা তাদের উপর দিয়ে বল মেরে আপনাকে রান করতে হবে ৷ ওই সব নিয়ে আমি কাজ করেছি ৷

যখন যশস্বী অনূর্ধ্ব-19 দলে ছিল, তখন টেকনিক নিয়ে কাজ করেছিলাম ৷ অনূর্ধ্ব-19 বিশ্বকাপে ও ছিল ৷ তারপর করোনা অতিমারি শুরু হল ৷ লকডাউনের সময় আমরা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম ৷ তারপরেই আইপিএল চলে এসেছিল ৷ সেখানে যশস্বী রান করতে পারেনি ৷ সেইসময় হতাশ হয়ে কাঁদত, আর বলত ক্রিকেট জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ ওই সময় ওকে ফের গড়ে তুলি ৷ কুড়ি-পঁচিশ দিন ওকে টি-20 ক্রিকেট কীভাবে খেলতে হয়, তা শিখিয়েছিলাম ৷ কোথা দিয়ে বল মারতে হয় ? ফাস্ট বোলারদের কীভাবে সামলাতে হবে ? তা শিখিয়ে ছিলাম ৷

আইপিএলে প্রথমবার খেলতে গিয়ে ট্রেন্ট বোল্টের বিরুদ্ধে গতিতে পরাস্ত হচ্ছিল ৷ তারপর সেটা নিয়ে কাজ করেছিলাম আমরা ৷ সেখান থেকেই বদলটা শুরু হয়েছিল ৷ আমরা সেইসময় ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে প্রচুর কাজ করেছি ৷ মানসিকতার উন্নতির জন্য কাজ করেছিলাম ৷ সেই গড়ে ওঠার পরিশ্রমের ফল আপনারা দেখতে পাচ্ছেন ৷ আইপিএলে যখন যায়, তখন কোচেরাও ওকে নিয়ে কাজ করেছে ৷ আমি মনে করি 2021-22 সালে আমি ওকে পুরো তৈরি করে দিয়েছিলাম ৷ তারপর বড় ক্রিকেটারদের কাছে গিয়ে পরামর্শ পেয়েছে ৷ আমার মনে হয় না টেকনিক নিয়ে কাজ করার আরও কিছু আছে ৷

আমার মনে হয় যেবার প্রথম আইপিএল খেলেছিল, তখন চ্যালেঞ্জটা এসেছিল ৷ রানই করতে পারছিল না ৷ মনে হয়েছিল আইপিএলে ওকে আর নেবে না ৷ ওর প্রথম ও দ্বিতীয় আইপিএলের মাঝের সময়ে আমরা প্রচুর পরিশ্রম করেছি ৷ প্রচুর প্র্যাকটিস করেছি ৷ ওই সময় প্লাস্টিক বলে ওকে প্র্যাকটিস করাতাম ৷ আর বলতাম প্রচুর মারতে ৷ আমার মনে হয় ওর প্রথম ও দ্বিতীয় আইপিএলের মাঝের সময়ে যে পরিশ্রম করেছিলাম তার জন্যই এখন ভয়ডরহীন ক্রিকেট যশস্বী খেলতে পারছে ৷

সেই সময় ও বলত আইপিএল, টি-20 কীভাবে খেলতে হয়, বুঝতে পারছে না ৷ আমি তখন ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখার কথা বলতাম ৷ কীভাবে খেলতে হবে, কোন বোলারের বিরুদ্ধে কী কৌশল নিতে হবে, তা দ্বিতীয় ভাগ ৷ যেকোনও বোলারের বিরুদ্ধে মানসিকভাবে ইতিবাচক থাকা জরুরি ৷ বোলারকে বুঝতে দিলে চলবে না, আমি ভয় পাচ্ছি ৷ ইতিবাচক থাকতে হবে মানসিকভাবে ৷ আপনি দেখুন জেমস অ্যান্ডারসনকে যশস্বী তিনটে ছয় মেরেছে ৷ এটা সম্ভব হয়েছে টেকনিক, মানসিক এবং শারীরিকভাবে ইতিবাচক থাকার কারণে ৷

দুই দিন আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন যশস্বী জয়সওয়ালের হাতে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যত ৷ সব ধরনের ক্রিকেটেই ওর খেলার ক্ষমতা রয়েছে ৷ এই ব্যাপারে আপনি কী বলবেন ?

দাদা যখন বলেছে, তখন তো গুরুত্ব দিতেই হবে ৷ দেশের সেরা ক্রিকেটারদের অন্যতম ৷ অধিনায়কদের মধ্যেও অন্যতম সেরা ৷ ওনার ক্রিকেটীয় জ্ঞান প্রচুর ৷ যশস্বীর মধ্যে কিছু দেখেছেন বলেই বলেছেন ৷ ক্রিকেটে ভবিষ্যত বলে কিছু নেই ৷ বর্তমানেই যা কিছু হয় ৷ তবে ওকে যদি এগোতে হয়, দাদার মতো হতে হয়, শচিন তেন্ডুলকরের মতো হতে হয়, তাহলে পরিশ্রম ধারাবাহিকভাবে করে যেতে হবে ৷ তাহলেই যশস্বী আরও উপরে, ওই পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে ৷

যশস্বীর মানসিক কাঠিন্য কি ওর বেড়ে ওঠার মধ্যে লুকিয়ে ?

যখন যশস্বী মুম্বইতে এসেছিল তখন ছোট ছিল ৷ ওই সময় ওকে সমর্থন বা পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ ছিল না ৷ কোথাও একটা জীবন সংগ্রাম ছিল ৷ তবে, 2013 সালে আমার কাছে আসার পরে, ওকে কোনও কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়নি ৷ আমি নিজের সন্তানের মতো করে যশস্বীকে বড় করেছি ৷ 1995 সালে আমি উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর থেকে মুম্বই এসেছিলাম ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ৷ আমি প্রচুর কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছি ৷ আমার কঠিন সময়ের কথা ওকে বলতাম ৷ আমি যে কষ্ট করেছি, তা যাতে যশস্বীকে করতে না হয়, সেটা দেখতে বলতাম ৷ কষ্ট আমি করব, তুই শুধু খেলে যা বলতাম ৷

অনেক ক্রিকেটার আছে যারা প্রতিভাবান হয়েও কিছু করতে পারেনি ৷ আবার অনেকে দারুণ শুরু করেও হারিয়ে গিয়েছে ৷ আমি সেইসব গল্প বলতাম ৷ যখন খেলত তখন সবসময় ওর পরীক্ষা নিতাম ৷ মানসিকভাবে উদ্বুদ্ধ করতাম আমি ৷ এটায় সফল হলে এই জিনিসটা দেব বলতাম ৷ মুম্বইয়ের হয়ে খেলা সবসময়ই কঠিন ৷ মুম্বই দলে ভালো পারফরম্যান্স না করে টিকে থাকা যায় না ৷ ভারতীয় দলে ঢুকে পড়া জরুরি ৷ ভারতীয় দলে না খেলে মুম্বই দলে টিকে থাকা কঠিন ৷ দীর্ঘসময় ভারতীয় দলে না খেললে, মুম্বইতে টিকে থাকা যায় না ৷

যশস্বী অনেক ছোটবেলা থেকে বড়বড় ক্রিকেটাদের দেখে বেড়ে উঠেছে ৷ যশস্বীর দারিদ্রতা নিয়ে কথা অনেকেই বলেন ৷ 2013 সালের পরে ওকে, কোনও কষ্টের মধ্যে থাকতে হয়নি ৷ বিশ্বমানের ক্রিকেটীয় পরিকাঠামো আমার অ্যাকাডেমিতে যশস্বী পেয়েছে ৷ ওয়াসিম জাফর আমার খুব ভালো বন্ধু ৷ আমি ওকে প্র্যাকটিস করাতাম ওয়াসিমদের সঙ্গে ৷ বলতাম ওর মতো ব্যাট করতে ৷

যশস্বী জয়সওয়াল দারিদ্রতার মধ্যে দিয়ে বড় হয়নি ৷ ওর কষ্টের জীবন অনেক আগের ৷ যখন কেউ দেখত না ৷ মা-বাবা দেখত না ৷ আমি যশস্বীকে সেরা সুবিধার মধ্যে দিয়ে তৈরি করেছি ৷ ওয়াসিম জাফর, দিলীপ বেঙ্গসরকর এবং অনেক বড় বড় ক্রিকেটারের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেয়েছে ৷ মুম্বই রঞ্জি দলের হয়ে যাঁরা খেলছেন, তাঁদের সঙ্গে প্র্যাকটিস করেছে ৷ যশস্বী মুম্বই লিগের কনিষ্ট ক্রিকেটার হিসেবে খেলেছে ৷ কাঙ্গা লিগে ওকে খেলাত না ৷ প্রচুর ঝামেলা হয়েছিল ৷ আমি সংশ্লিষ্ট অধিনায়কদের সঙ্গে পাঙ্গা নিয়েছি ৷ আমি বলতাম একটা সুযোগ দিন ৷ যশস্বী সমস্ত সুবিধা পেয়েছে ৷

কোচের লড়াই কি যশস্বীর অনুপ্রেরণা ?

আমি 1995 সালে মুম্বইতে এসেছিলাম ৷ আচেরকর স্যারের অ্যাকাডেমিতে ছিলাম ৷ সারদাশ্রম স্কুলে ছিলাম ৷ কিন্তু পেশির চোটে আমি ছিটকে যাই ৷ তারপর থেকেই আমি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে এসেছি ৷ ক্রিকেটার তৈরি করার পরিকল্পনা নিই ৷ আমি সবসময় আমার কঠিন সময়ের কথা বলতাম ৷ শুধু খেলে যাওয়ার কথা বলতাম ৷ বাকিটা আমি দেখে নেওয়ার কথা বলতাম ৷ এখন ভারতের হয়ে খেলছে তাতে আমি দারুণ খুশি ৷

আরও পড়ুন:

  1. কোল আলো করে এল দ্বিতীয় সন্তান, পাঁচদিন পর অনুরাগীদের সুখবর শোনালেন 'বিরুষ্কা'
  2. দ্বিশতরানে ফের 'যশস্বী' জয়সওয়াল, রাজকোটে ব্রিটিশদের সামনে 557 রানের লক্ষ্যমাত্রা
  3. সেহওয়াগের সঙ্গে এক সারিতে সেঞ্চুরিয়ান যশস্বী, তিনশো পার ভারতের লিড
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.