কলকাতা, 10 সেপ্টেম্বর: প্রয়াত হলেন বাংলার টেবল টেনিসের 'দ্রোণাচার্য' কোচ জয়ন্ত পুশিলাল। বয়স হয়েছিল 63 । দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার রাতে নারকেলডাঙ্গায় নিজের বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । অরূপ বসাক, মৌমা দাস, প্রাপ্তি সেনের মতো জাতীয় চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় গড়েছেন তিনি । আমেরিকায় গিয়েও অলিম্পিয়ান তৈরি করেছেন । তাঁর মৃত্যুতে শুধু টেবল টেনিস নয়, বাংলার ক্রীড়ামহল বড় ধাক্কা খেল ।
রেখে গেলেন স্ত্রী,পুত্র ও কন্যাকে ৷ একমাস আগেই মাতৃবিয়োগ হয়েছিল। এবার জয়ন্ত পুশিলাল নিজেই না-ফেরার দেশে। জয়ন্ত পুশিলাল কোচেদের কোচ। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। কার্যত শয্যাশায়ী ৷ মাসখানেক আগে এক অনুষ্ঠানে তাঁর ছাত্রছাত্রীরা সমবেত হয়েছিলেন গুরু জয়ন্ত পুশিলালকে সাহচর্য দিয়ে মানসিক শক্তি বাড়াতে ৷ কিন্তু সব চেষ্টা শেষ ৷ প্রাপ্তি সেন তাঁর অন্যতম সেরা ছাত্রী ৷ জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ছাত্রী মানতে পারছেন না, জয়ন্ত স্যরের চলে যাওয়া। “কয়েকদিন আগেও বোটনদাকে দেখে এলাম। ভাবতে পারছি না এইভাবে হঠাৎ করে চলে যাবেন। বড় ক্ষতি হয়ে গেল,” বলছিলেন প্রাপ্তি ৷
বিএসটিটি এ সচিব শর্মি সেনগুপ্ত বলেন, “আমরা অভিভাবককে হারালাম। অসুস্থতা ছিল। আগে যেবার অসুস্থ হয়েছিলেন, তখন রাজ্য সরকার পাশে দাঁড়িয়েছিল। তারপর থেকেই শরীরটা ভেঙে গিয়েছিল। চলতি বছর জানুয়ারিতে নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামেও এসেছিলেন। বোটনদাকে নিয়ে কত স্মৃতি। আমরা অভিভাবককে হারালাম। প্রকৃত ক্রীড়াগুরু চলে গেলেন। ”
পাঁচবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মৌমা দাস গুরু জয়ন্ত পুশিলালের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ। “কি বলব। কোনও ভাষা নেই। অসুস্থ ছিলেন। সেই অসুস্থতার কষ্ট চোখে দেখা যাচ্ছিল না। তবুও শেষবার দেখা করতে গিয়েছিলাম তখন অত শারীরিক কষ্টের মধ্যেও খেলার খবর নিলেন। তিরিশ বছরের সম্পর্ক আমাদের। ওনার হাতে বেড়ে ওঠা। উনি আমাকে খাইয়ে পর্যন্ত দিয়েছেন। উনি আমাকে সব জায়গায় খেলতে নিয়ে যেতেন। বাড়ির লোকও নিশ্চিন্ত থাকত ওনার সঙ্গে যাচ্ছি শুনলে। কোনও দিন গায়ে হাত দেননি। তবে ভুল করলে প্রচণ্ড বকা দিতেন। খেলার সময় টেবিলের পাশে থাকলে আমি ম্যাচ হারতাম না। নারকেলডাঙার ওই টেবিলে জয়ন্তদা পড়ে থাকতেন। পড়ে থাকতেন চ্যাম্পিয়ন তৈরি করার জন্য। 10 জনের বেশি জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ওঁনার কোচিং থেকে বেরিয়েছে। আজ সবকিছুই স্মৃতি। ইউটিটি খেলতে যাব দু'দিন পরে। হিমাচলপ্রদেশে চলে গেলে শেষ দেখাও হত না। বুধবার সকালে শেষকৃত্যের সবকিছু হবে। শেষ যাত্রায় অবশ্যই থাকব। আত্মীয় বিয়োগের যন্ত্রণাবোধ হচ্ছে ৷”