ETV Bharat / sports

শব্দেই লাল-হলুদের মলাট আঁকেন ‘অন্ধ’ ভক্ত প্রদীপ - East Bengal - EAST BENGAL

Story of East Bengal Fan: ‘‘কানই আমার চোখ, চোখই আমার কান ৷’’ গত 28 বছর ধরে ইস্টবেঙ্গলের খেলা নিয়মিত রোজ মাঠে আসেন প্রদীপ দাস ৷ লাল-হলুদের ‘অন্ধ’ ভক্ত খেলা দেখেন কান দিয়ে ৷

Story of East Bengal Fan
লাল-হলুদের ‘অন্ধ’ ভক্ত (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Sports Team

Published : Jul 28, 2024, 2:23 PM IST

কলকাতা, 28 জুলাই: “চোখের দেখা যাক ফুরিয়ে ক্ষতি কিছু নাই

স্বপ্ন দেখার নাই সীমানা

দেখে যাব তাই...’’

জনপ্রিয় বাংলা ছবিতে মান্না দে’র গাওয়া কালজয়ী গানের বাস্তবতা যেন সালকিয়ার প্রদীপ দাস । জন্মান্ধ মানুষটি হাওড়ার সালকিয়ার রসিককৃষ্ণ ব্যানার্জী লেন থেকে প্রতিদিন কলকাতা ময়দানে আসেন শুধুমাত্র খেলাকে ভালোবেসে । আরও পরিস্কার করে বললে, ‘ইস্টবেঙ্গলকে ভালোবেসে’ । শুধু ইস্টবেঙ্গলই নয়, ক্রিকেটেরও অনুরাগী প্রদীপ ৷ একটি ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও চালান তিনি ৷

কিন্তু চোখে না-দেখে খেলাকে, প্রিয় দলকে ভালোবাসা যায় ? প্রদীপ দাস এখানেই আলাদা ৷ চোখের দেখা ফুরিয়ে গেলেও তাঁর কোনও ক্ষতি নেই । বরং কানকে আশ্রয় করেই হাজার সমর্থকের ভিড়ে তিনিও উৎসাহী ‘দর্শক’ ৷ যার কাছে লাল-হলুদ আবেগ, যা না-দেখেও যাপন করা যায় ৷ প্রদীপ দাস বাকিদের মতোই মাঠে আসেন, গ্যালারিতে বসেন, আবেগ-উচ্ছ্বাসে অংশ নেন ৷ দলের সাফল্যে উত্তাল হন, ব্যর্থতায় ভেঙে পড়েন ৷ সবটাই শ্রবণ শক্তির ব্যবহারিক অনুভূতিতে ।

দেখুন চোখের কাজটা কান দিয়ে করি । গোল হলে উচ্ছ্বাস । গোল করতে না-পারার হতাশা, খারাপ খেলার হতাশা সবকিছুই পরিবেশের মধ্যে দিয়ে উপলব্ধি করি ৷” নিজের অনুভূতির কথা বলে চলেন প্রদীপ...

ইস্টবেঙ্গলের ‘অন্ধ’ ভক্ত বলেন, “লোক চোখে দেখছে । আমি কানে শুনে নিচ্ছি । এটাই আমার চোখ, এটাই আমার কান ৷ ’97 সাল থেকে এভাবেই আমি খেলার মাঠে ৷’’ আইপিএল টিকিটের লাইনেও প্রদীপ দাস তাঁর ওয়াকিং স্টিককে ‘হাতিয়ার’ করে উপস্থিত থাকেন । ক্রিকেট মাঠে যান, তবে নিয়মিত নন । তাঁর কথায়, “আগে তো ক্রিকেট পছন্দের ছিল ৷ যখনই আইপিএল চালু হয়েছে, আমি মাঠে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছি । আইপিএল শুরু হওয়ার পর ছেলেদের ক্রিকেট শেখানো ছেড়ে দিয়েছি ৷ কারণ পরে জুয়া খেলতে হবে ৷”

আপনি ক্রিকেট শেখান ? সেটা কি ব্লাইন্ড ক্রিকেটারদের ? প্রদীপ বলে ওঠেন, “না না ৷ আমি স্বাভাবিক ক্রিকেটারদেরই শেখাই ৷” কিন্তু হাতে-কলমে দেখান কি করে ? “আমার সহকারী ছিল মন্টু অধিকারী । ও হাতেকলমে দেখিয়ে দিত । আমি নির্দেশ দিতাম । তবে কোভিড অতিমারিতে মন্টু মারা গিয়েছেন । তবে অভিভাবকরা আবার চালু করতে বলছে ৷” বললেন প্রদীপ ।

লাল-হলুদ সমর্থক এই মানুষটি শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় প্রতিটি ম্যাচে দু’জন ছাত্রকে সঙ্গী করে ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ দেখতে উপস্থিত হতেন । এখন ছাত্রদের স্কুল রয়েছে, তাই প্রদীপ একাই সালকিয়া থেকে ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখতে চলে আসেন । লাল-হলুদ সমর্থকের সংসার কি করে ? প্রদীপ বলেন, “দেখুন কোচিং ক্যাম্প থেকে একটা উপার্জন তো হয় । এছাড়া ক্লাব থেকে আমাকে সাহায্য করা হয় । যাতায়াতের টাকা দেয় ক্লাব । ফুটবলকে ভালোবাসি । আর ভালোবাসি ইস্টবেঙ্গলের জার্সিকে ।” “

সালকিয়ার রসিককৃষ্ণ ব্যানার্জী লেনে প্রদীপের বাড়িতে মা এবং পরিবারের সকলকে নিয়ে ভরা সংসার । বাবা প্রয়াত হয়েছেন বছর আটেক আগে । শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে উড়িয়ে খেলাকে ভালোবেসে স্বপ্ন দেখে চলেন প্রদীপ । “স্পোর্টস আমার ফিউচার”, অকপটভাবে বলে ওঠেন । তাঁর এই মানসিক জোর, বিজিগীষার সামনে “স্বপ্ন দেখার নাই সীমানা, দেখে যাব তাই,” লাইনটি বড় বেশি বাস্তবিক মনে হয় ।

কলকাতা, 28 জুলাই: “চোখের দেখা যাক ফুরিয়ে ক্ষতি কিছু নাই

স্বপ্ন দেখার নাই সীমানা

দেখে যাব তাই...’’

জনপ্রিয় বাংলা ছবিতে মান্না দে’র গাওয়া কালজয়ী গানের বাস্তবতা যেন সালকিয়ার প্রদীপ দাস । জন্মান্ধ মানুষটি হাওড়ার সালকিয়ার রসিককৃষ্ণ ব্যানার্জী লেন থেকে প্রতিদিন কলকাতা ময়দানে আসেন শুধুমাত্র খেলাকে ভালোবেসে । আরও পরিস্কার করে বললে, ‘ইস্টবেঙ্গলকে ভালোবেসে’ । শুধু ইস্টবেঙ্গলই নয়, ক্রিকেটেরও অনুরাগী প্রদীপ ৷ একটি ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও চালান তিনি ৷

কিন্তু চোখে না-দেখে খেলাকে, প্রিয় দলকে ভালোবাসা যায় ? প্রদীপ দাস এখানেই আলাদা ৷ চোখের দেখা ফুরিয়ে গেলেও তাঁর কোনও ক্ষতি নেই । বরং কানকে আশ্রয় করেই হাজার সমর্থকের ভিড়ে তিনিও উৎসাহী ‘দর্শক’ ৷ যার কাছে লাল-হলুদ আবেগ, যা না-দেখেও যাপন করা যায় ৷ প্রদীপ দাস বাকিদের মতোই মাঠে আসেন, গ্যালারিতে বসেন, আবেগ-উচ্ছ্বাসে অংশ নেন ৷ দলের সাফল্যে উত্তাল হন, ব্যর্থতায় ভেঙে পড়েন ৷ সবটাই শ্রবণ শক্তির ব্যবহারিক অনুভূতিতে ।

দেখুন চোখের কাজটা কান দিয়ে করি । গোল হলে উচ্ছ্বাস । গোল করতে না-পারার হতাশা, খারাপ খেলার হতাশা সবকিছুই পরিবেশের মধ্যে দিয়ে উপলব্ধি করি ৷” নিজের অনুভূতির কথা বলে চলেন প্রদীপ...

ইস্টবেঙ্গলের ‘অন্ধ’ ভক্ত বলেন, “লোক চোখে দেখছে । আমি কানে শুনে নিচ্ছি । এটাই আমার চোখ, এটাই আমার কান ৷ ’97 সাল থেকে এভাবেই আমি খেলার মাঠে ৷’’ আইপিএল টিকিটের লাইনেও প্রদীপ দাস তাঁর ওয়াকিং স্টিককে ‘হাতিয়ার’ করে উপস্থিত থাকেন । ক্রিকেট মাঠে যান, তবে নিয়মিত নন । তাঁর কথায়, “আগে তো ক্রিকেট পছন্দের ছিল ৷ যখনই আইপিএল চালু হয়েছে, আমি মাঠে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছি । আইপিএল শুরু হওয়ার পর ছেলেদের ক্রিকেট শেখানো ছেড়ে দিয়েছি ৷ কারণ পরে জুয়া খেলতে হবে ৷”

আপনি ক্রিকেট শেখান ? সেটা কি ব্লাইন্ড ক্রিকেটারদের ? প্রদীপ বলে ওঠেন, “না না ৷ আমি স্বাভাবিক ক্রিকেটারদেরই শেখাই ৷” কিন্তু হাতে-কলমে দেখান কি করে ? “আমার সহকারী ছিল মন্টু অধিকারী । ও হাতেকলমে দেখিয়ে দিত । আমি নির্দেশ দিতাম । তবে কোভিড অতিমারিতে মন্টু মারা গিয়েছেন । তবে অভিভাবকরা আবার চালু করতে বলছে ৷” বললেন প্রদীপ ।

লাল-হলুদ সমর্থক এই মানুষটি শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় প্রতিটি ম্যাচে দু’জন ছাত্রকে সঙ্গী করে ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ দেখতে উপস্থিত হতেন । এখন ছাত্রদের স্কুল রয়েছে, তাই প্রদীপ একাই সালকিয়া থেকে ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখতে চলে আসেন । লাল-হলুদ সমর্থকের সংসার কি করে ? প্রদীপ বলেন, “দেখুন কোচিং ক্যাম্প থেকে একটা উপার্জন তো হয় । এছাড়া ক্লাব থেকে আমাকে সাহায্য করা হয় । যাতায়াতের টাকা দেয় ক্লাব । ফুটবলকে ভালোবাসি । আর ভালোবাসি ইস্টবেঙ্গলের জার্সিকে ।” “

সালকিয়ার রসিককৃষ্ণ ব্যানার্জী লেনে প্রদীপের বাড়িতে মা এবং পরিবারের সকলকে নিয়ে ভরা সংসার । বাবা প্রয়াত হয়েছেন বছর আটেক আগে । শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে উড়িয়ে খেলাকে ভালোবেসে স্বপ্ন দেখে চলেন প্রদীপ । “স্পোর্টস আমার ফিউচার”, অকপটভাবে বলে ওঠেন । তাঁর এই মানসিক জোর, বিজিগীষার সামনে “স্বপ্ন দেখার নাই সীমানা, দেখে যাব তাই,” লাইনটি বড় বেশি বাস্তবিক মনে হয় ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.