কলকাতা, 6 নভেম্বর: রুপোর দেশে সাফল্যের রুপোলি ঝলক । 16তম ওয়ার্ল্ড ব্রিজ অলিম্পিয়াড বা তাসের বিশ্বকাপে রানার্স প্রণব বর্ধন-বাদল দাস জুটি ।
দ্বিতীয় ভারতীয় জুটি হিসেবে এই কৃতিত্ব দেখালেন যাদবপুর রামগড়ের দুই বাঙালি । এবছর বিশ্বকাপের আসর বসেছিল আর্জেন্তিনার বুয়েনস আইরসে ।
দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনার দেশে তাসের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ । সেখানে সাফল্যের রুপোলি আলো মাখতে পেরে তৃপ্ত প্রণব । 2018 সালে এশিয়ান গেমসে প্রথম ভারতকে তাসে সোনা উপহার দিয়েছিলেন কাচ্চু দে সরকার এবং প্রণব বর্ধন জুটি । ছ’বছর পরে ফের সাফল্য । তবে প্রণবের সঙ্গী বদল । কেন ? দিল্লি এয়ারপোর্টে বসে কলকাতায় ফেরার বিমান ধরার তাড়ার মাঝেই প্রণব বলেন, “এই বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে খেলার যোগ্যতা অর্জনে বয়সের মাপকাঠি রয়েছে । সবাই এখানে পঁয়ষট্টি বছরের উর্ধ্বে । তাই কাচ্চু যেতে পারেনি । তবে আমি বাদল দাসকে নিয়ে খেলেছি । ওকে নিয়ে এশিয়া কাপেও সোনা পেয়েছিলাম । আমরা জু্টি ভাঙিনি । যাঁদের নিয়ে অনুশীলন করি তাঁদের মধ্যে থেকে একজনের সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলেছি ।”
তাস, পাশা, দাবা / তিন সর্বনাশা । বাংলার এই প্রবাদ এখন প্রণব বর্ধন, বাদল দাস, কাচ্চু দে সরকারদের সৌজন্যে ভুল প্রমাণিত । তাস যে সর্বনাশা নয়, বরং অঙ্ক নির্ভর একটা অভ্যাস তা এরা প্রমাণ করেছেন । প্রণব বলছেন, “দৃষ্টিভঙ্গী বদলেছে । আমাদের রাজ্যে বদলের গতিটা শ্লথ । তবে হচ্ছে । অন্য রাজ্যে ছবিটা দ্রুত বদলাচ্ছে । বাণিজ্যিক বড় বড় সংস্থাগুলি আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করছে । অনেক তরুণ খেলোয়াড় শিখতে আসছে । বিশ্বকাপে সাফল্যের পরে আমি দেশের সব জায়গা থেকে এত অভিনন্দন বার্তা পেয়েছি যে ফোন উপচে পড়ছে ।’’
কেমন ছিল লড়াইটা ?
সিনিয়র বিভাগে মোট 24টি দেশ অংশগ্রহণ করে । প্রথম 16টি দল কোয়ালিফাই করে । ভারত তৃতীয় দল হিসেবে কোয়ালিফাই করে । নক-আউট স্তরে ভারত প্রথম হারায় স্কটল্যান্ডকে, দ্বিতীয় হারায় ক্যানাডাকে, এরপর সুইডেনকে । পরপর তিনটি ম্যাচ জেতার পর আমেরিকার কাছে ভারত 165-258 স্কোর পরাজিত হয় । হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে ফাইনালে । ভারতের সিনিয়র দল ফাইনালে আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রথম দুই রাউন্ডে প্রায় ড্র করার কাছাকাছি চলে যায় । এরপর আমেরিকা পালটা দিয়ে ম্যাচে ফেরে । ফলে রুপো জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় প্রণব-বাদল জুটিকে ।
প্রতিযোগীদের চ্যালেঞ্জের চেয়েও কঠিন ছিল অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সামলানো । প্রণব বলছেন, ‘‘এবারের অভিজ্ঞতা ভালো । আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে । এটা ভারতে নেই । ফলে আমাদের কাছে একটু চ্যালেঞ্জের ছিল । প্রযুক্তি শিখে আমাদের খেলতে হয়েছে । এক্ষেত্রে বাড়তি সতর্ক থাকতে হয়েছে ।’’
পরিবারের সাহায্য বিশেষ করে স্ত্রী রুমা বর্ধনের পাশে থাকা এই সাফল্যের পথ গড়তে সাহায্য করেছে । ইস্টবেঙ্গল সমর্থক প্রণব বিশ্বকাপের টেনশন কাটাতে চলে গিয়েছিলেন বুয়েনস আইরসের মাঠে খেলা দেখতে । সেই অভিজ্ঞতাও ভোলার নয় । লাল-হলুদ সমর্থক বলেন, “আমরা যেদিন গিয়েছিলাম সেদিন ম্যাচ ছিল । ফুটবলকে ঘিরে কী উন্মাদনা তা বলে বোঝানো সম্ভব নয় । পাগলের মত আচরণ করছে সবাই । আর নিরাপত্তা ? সে কি বলব । প্রতিটি পদক্ষেপে নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় । ইচ্ছে ছিল মারাদোনার ক্লাবের মাঠে পা ঘসে আসার । কিন্তু নিরাপত্তার জন্য সম্ভব হয়নি । ফুটবল নিয়ে মাতামাতি না দেখলে বিশ্বাস হবে না ৷”