কলকাতা, 29 জানুয়ারি: সময়টা 2003 সালের শীতের ঠিক আগ-মুহূর্ত ৷ তখন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সফল হতে তিনি পৌঁছে যান প্রাক্তন অজি অধিনায়ক গ্রেগ চ্যাপেলের কাছে ৷ তাঁর কাছে ব্যাটিং পরামর্শ নিতে ৷ চ্যাপেলের মন্ত্রে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই সিরিজের প্রথম টেস্টেই গাব্বায় সেঞ্চুরি করেছিলেন সৌরভ ৷ তাঁর সেই সেঞ্চুরি অস্ট্রেলিয়ান সামারের সুর বেঁধে দিয়েছিল ৷
22 বছর পর প্রায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ৷ এক মর্ডান-ডে লেজেন্ড বিরাট কোহলি ক্রিকেটের অ-আ-ক-খ ঝালিয়ে নিতে ফিরে গেলেন পুরনো দিনে ৷ তিনি বেছে নিয়েছেন প্রাক্তন ভারতীয় অলরাউন্ডার তথা প্রাক্তন ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারকে ৷ অফ-স্টাম্পের বাইরে বল খেলতে গিয়ে যে জাঁতা-কলে পড়েছেন, তার সমাধান খুঁজতে ৷
এখানেই প্রশ্ন, বিরাট কোহলি কেন সঞ্জয় বাঙ্গারকেই বেছে নিলেন, তাঁর ব্যাটিংয়ের খামতিগুলিকে ঠিক করার জন্য ৷ আসলে উন্নতমানের বোলিং আক্রমণের সামনে নিজের ত্রুটিগুলি শুধরানোর সময় এসেছে কোহলির ৷ আর এটাই একদম সঠিক সময় ৷ সম্প্রতি বর্ডার-গাভাসকর ট্রফির পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে পার্থের সেঞ্চুরি ছাড়া 9 ইনিংসে মাত্র 190 রান করেছেন তিনি ৷
এমন একটি জঘন্য সিরিজের পর, নিজেকে সেই খারাপ সময় থেকে বের করে আনার পরিকল্পনা আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল ৷ তার জন্য বিরাট বাঙ্গারের মুখাপেক্ষী হয়েছেন ৷ সঞ্জয় বাঙ্গার 2014-19 সাল পর্যন্ত ভারতীয় দলের ব্যাটিং কোচ ছিলেন ৷ বাঙ্গারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ থাকার পাশাপাশি, ওই সময়ে কোহলি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট 48টি সেঞ্চুরি করেছেন (22টি টেস্ট ও 26টি ওয়ান-ডে সেঞ্চুরি) ৷ আর সেই সময়ে বিরাটের গড় ছিল 60-এর উপর ৷ তাই সন্দেহের কোনও জায়গা নেই, কেন বিরাট এই কঠিন সময় কাটিয়ে উঠতে বিরাট বাঙ্গারের স্মরণাপন্ন হয়েছেন ৷
তবে, বিরাট ও সৌরভকে আরও একটি জিনিস এক করে দিচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিতে ৷ 2003-এর সেই সময়ে গ্রেগ চ্যাপেল সৌরভকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, বাউন্সার আসবে এটা না-ভেবে খেলতে ৷ বরং, বল দেখে ব্যাকফুটকে মিডল-স্টাম্প লাইনে নিয়ে যেতে এবং চেষ্টা করতে সবসময় সামনে খেলার ৷ হুবহু একই প্রেসক্রিপশন বিরাটের জন্যও লিখেছেন সঞ্জয় বাঙ্গার ৷ আর বৃহস্পতিবার রেলওয়েজের বিরুদ্ধে নামার আগে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের নেটে সেটাই অনুশীলন করতে দেখা গিয়েছে বিরাটকে ৷
নিন্দুকরা যা-খুশি তাই বলতে পারেন ! কিন্তু বাস্তবটা হল, ভালো বোলিং আক্রমণকে সামলাতে হলে ব্যাকফুটের খেলাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৷ বিশেষ করে পেস বোলারদের সামনে ৷ 2003 সালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যা করে দেখিয়েছিলেন, 22 বছর পর বিরাটকেও ঠিক একই জিনিস করতে দেখা যাচ্ছে ৷
এটা উল্লেখ্য যে, বিরাট রঞ্জি খেলতে দিল্লি উড়ে যাওয়ার আগে সঞ্জয় বাঙ্গারের সঙ্গে মুম্বইয়ে কয়েকটা সেশন করেছিলেন ৷ কোহলি তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছেন কি না, তা জানতে আরও একটা দিন অপেক্ষা করতে হবে ৷ এই মুহূর্তে দিল্লি বনাম রেলওয়েজের এই ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে ৷ সকল ক্রিকেট প্রেমী, তথা ক্রিকেট-বিশ্বের নজর 12 বছর পর রঞ্জিতে তাঁর প্রত্যাবর্তনের দিকে ৷
দিল্লি তো অবশ্যই, রেলওয়েজের তরুণ ক্রিকেটারদের সামনেও সুযোগ রয়েছে, এমন একজনের কাছ থেকে পীঠ-চাপড়ে নেওয়ার, যাঁকে আলাদাভাবে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হবে না ৷ যিনি কি না, সব সাফল্যের অধিকাংশ চূড়াগুলি ছুঁয়ে ফেলেছেন, যা তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেওয়া হয়েছিল ৷ একমাত্র কিংবদন্তী সচিন তেন্ডুলকরের একশোটি সেঞ্চুরির একমাত্র রেকর্ড থেকে পিছনে রয়েছেন ৷ বিরাট কোহলির নামে আন্তর্জাতিক ম্যাচে টেস্ট, ওয়ান-ডে ও টি20 মিলিয়ে 81টি সেঞ্চুরি করেছেন ৷
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিসিআই-এর একটি সূত্র জানিয়েছেন, যদি, বিরাট এবং রোহিত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেন, তাহলে প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটাররা, ওঁদের খেলা কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাবে ৷ এমনকি নিজেদের খেলার মান বৃদ্ধি করতে, ওঁদের থেকে পরামর্শ নিতে পারবে ৷ এটা ওই তরুণ ক্রিকেটারদের ভবিষ্যতের বড় মঞ্চের জন্য তৈরি হতে সাহায্য করবে ৷
অন্যদিকে, বিরাট কোহলি 12 বছর পর রঞ্জি ট্রফিতে দিল্লির হয়ে খেলতে নামছেন ৷ আর তাই ডিডিসিএ নির্দিষ্ট সংখ্যক দর্শকদের বিনামূল্যে খেলা দেখার জন্য মাঠে ঢুকতে দেবে ৷ তবে, এই ম্যাচের কোনও টেলিভিশন কভারেজ ছিল না ৷ কিন্তু, একটি বেসরকারি সম্প্রচারকারী সংস্থা দিল্লি বনাম রেলওয়েজের ম্যাচে কোহলি ম্যাজিকের সরাসরি দেখানোর ব্যবস্থা করতে পেরেছে ৷ এই বিশেষ সুবিধা ভারতীয় দলের অন্যান্য ক্রিকেটাররা যেমন, রোহিত শর্মা এবং কেএল রাহুল আদায় করতে পারেননি ৷ যাঁরা কি না ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করেছেন ৷ এই বৃহস্পতিবার থেকে আগামী চারদিন ক্রিকেট উৎসাহীদের নজর থাকবে শুধুমাত্র বিরাট কোহলির উপর ৷