বিধাননগর, 24 ফেব্রুয়ারি: রাতের শেষ আপ-ট্রেন। ঘড়িতে সময় সাড়ে এগারোটা। বিধাননগর স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে ধরা গায়ে এসে দাঁড়ালেন এক যুবক। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। উস্কোখুস্কো চুল। শরীরী ভাষায় শোকের ছাপে স্পষ্ট। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গত মঙ্গলবার মাতৃহারা হয়েছেন তিনি। মানুষের জীবনে এই শোকপর্ব স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু মাতৃশোক ভুলতে যখন কেউ প্রিয় দলের পতাকা আঁকড়ে ধরেন তখন পুরো বিষয়টিতে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়।
তেমনই একজন দমদম রাজাবাগানের দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্য়ায়। রবিসন্ধ্যায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রায় 58 হাজার সবুজ-মেরুন সমর্থকদের মধ্যে দীপঙ্করও ছিলেন একজন। অন্যরা যখন সবুজ-মেরুন সাজে যুবভারতীতে গলা ফাটালেন। সেই শব্দব্রহ্মের মাঝে অশৌচের পোশাকে দীপঙ্করের গলা থেকে নিঃসৃত স্বর যেন মাতৃবন্দনারই অংশ। ম্য়াচের পর ফেরার সময় দীপঙ্কর বলছিলেন, "আমরা মোহনবাগানী। জন্মদাত্রী মায়ের মত মোহনবাগানও আমাদের মা। জন্মদাত্রী মাকে গত মঙ্গলবার হারিয়েছি। তাঁকে তো সারাজীবনে আর পাব না। কিন্তু আরেক মা আইএসএল শিল্ড জিতল। তার এই নজিরের দিনে মাঠে উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলাম। মাতৃশোক ভুলতে আরেক মায়ের সাফল্যের উদযাপনে অংশ নিলাম। তাই সবুজ-মেরুন পতাকাতেও মা লিখে এনেছি ৷"
লোকাল ট্রেনের কামরায় ক্যাকোফেনির মধ্যে মাতৃহারা যুবকের কথা অনুরণন হয়ে ঘুরে বেড়ায়। বিধাননগর স্টেশন থেকে দমদম স্টেশনের সময় দূরত্ব মাত্র পাঁচ মিনিটের। ট্রেন থামে। দীপঙ্কর বাড়ির পথে রওনা দেন শোক এবং আনন্দকে জড়িয়ে। আঠারো মাস আগে বাবাকে হারিয়েছিলেন, এবার মা। মাস আলাদা হলেও তারিখ দু'টো ক্ষেত্রেই এক। দীপঙ্কর রাজাবাগানে থাকেন স্ত্রী এবং চারবছরের পুত্রকে নিয়ে। পুরো সংসারটাই মোহনবাগানময়। যেখানে পার্থিব মা হারানোর যন্ত্রণা সমর্থকরা ভোলে অপার্থিব মায়ের সাফল্যের রঙে। এটাই বাংলার ফুটবল। যেখানে মানুষ আসে নিজেকে ফিরে পেতে। কান্না-হাসিতে ক্ষণিকের যাপন প্রমাণ করে কেন সব খেলার সেরা বাঙালির ফুটবল।