ফ্লোরিডা, 15 জুলাই: আর্জেন্তিনার জার্সিতে 2006 ফিফা বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলেছিলেন লিওনেল মেসি ৷ সেখান চারটি বিশ্বকাপ ও 2014 সালে ফাইনালে ওঠা ৷ ট্রফির খুব কাছে পৌঁছেও, তা ছোঁয়া হয়নি ৷ এমনকি দেশের জার্সিতে কোপা আমেরিকাতেও সাফল্য তাঁর থেকে বহুদূরে ছিল ৷ কিন্তু, একবার বাঁধ ভাঙতেই সবকিছু ওলটপালট করে দিলেন লিওনেল মেসি ৷
2021 সাল থেকে 2024, আর্জেন্তিনার জার্সিতে তিনটি মেজর টুর্নামেন্টে মোট চারবার ট্রফি জিতলেন লিও ৷ ভারতীয় সময় সকাল 10টা নাগাদ কোপা আমেরিকারয় ফাইনাল ম্যাচে রেফারি বাঁশি বাজাতেই ইতিহাস তৈরি করলেন মেসি এবং তাঁর আর্জেন্তিনা ৷ পরপর চারবার কোনও আন্তর্জাতিক মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালে জিতল তাঁরা ৷ যার কারিগর হয়ে রইলেন কিংবদন্তি লিওনেল মেসি ৷
My king 💔 pic.twitter.com/FmyCD9ImH0
— Messi Media (@LeoMessiMedia) July 15, 2024
শুরুটা হয়েছিল 2020 কোপা আমেরিকা দিয়ে (কোভিডের কারণে 2021 সালে টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়) ৷ ব্রাজিলকে তাদের ঘরের মাঠে হারিয়ে দেশের জার্সিতে প্রথম ট্রফি জিতছিলেন তিনি ৷ এরপর 2022 সালে বহুকাঙ্খিত ফিফা বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নপূরণ হয় লিওনেল মেসির ৷ ফাইনাল ম্যাচ বাদ দিলে, বাকি পুরো টুর্নামেন্টে একক দক্ষতায় আর্জেন্তিনাকে টেনে নিয়ে যান লিও ৷ বিশ্ব জয়ের রাতের সেই ম্যাচেও অল্পের জন্য ট্রফি হাতছাড়া হচ্ছিল এলএম-10’র ৷ তবে, গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজের দুরন্ত গ্লাভ-ওয়ার্ক আর্জেন্তিনাকে তৃতীয় এবং মেসিকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতায় ৷
এর আগে অবশ্য আরেকটি খেতাব আর্জেন্তিনার হয়ে জেতেন লিওনেল মেসি ৷ কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন বনাম ইউরো কাপ চ্যাম্পয়িনের মধ্যে হওয়া ফাইনালিসিমা 2022 জেতে আর্জেন্তিনা ৷ 2022 সালের 1 জুন ইতালিকে সেই ম্যাচে 3-0 গোলে হারিয়েছিল মেসির আর্জেন্তিনা ৷ সেই ম্যাচে মেসি নিজে গোল না পেলেও, গোল করিয়েছিলেন ৷ মেসির সাফল্যের পালকে এবার জুড়ল দ্বিতীয় কোপা আমেরিকা ৷ সবমিলিয়ে তিনবছরে চারটি মেজর আন্তর্জাতিক ট্রফি ৷
Messi lifts up the trophy once again !!! 🇦🇷❤️ pic.twitter.com/76unxFQ0TD
— Messi Media (@LeoMessiMedia) July 15, 2024
তবে, আজকের এই সাফল্যের আকাশে, আশঙ্কার ঘন কালো মেঘ জমেছিল বেশ কিছুক্ষণের জন্য ৷ দ্বিতীয়ার্ধে বল নিয়ে কলম্বিয়ার বক্সের দিকে দ্রুত গতিতে এগনোর মুহূর্তে হঠাৎই মাঠের মধ্যে শুয়ে পড়েন মেসি ৷ মাটিতে পড়ার মুহূর্তে ডাগআউটে মেডিক্যাল টিমকে ইশারা করেন ৷ অনেকক্ষণ মাটিতে পড়ে থাকেন ৷ পরে মেডিক্যাল টিমের সাহায্যে উঠে দাঁড়ালেও, খেলার মতো পরিস্থিতি ছিল না ৷ ডান পায়ের গোড়ালিতে গুরুতর চোট পেয়ে 67 মিনিটের মাথায় মাঠ ছাড়েন লিও ৷
ডাগআউটে পায়ে বরফ বেঁধে বসে থাকা অবস্থায় কাঁদতে দেখা যায় এলএম-10কে ৷ যা মুহূর্তে মেসি তথা ফুটবল অনুরাগীদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ৷ একসময় মনে হয়েছিল, হয়তো ট্রফিটাই না হাতছাড়া হয়ে যায় ৷ তবে, মেসিহীন আর্জেন্তিনাকে সামলান মাঠে উপস্থিত বাকি খেলোয়াড়রা ৷ ম্যাচ নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য থাকে ৷ এরপর অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে 112 মিনিটে মার্কস আকুনার পাস থেকে গোল করে আর্জেন্তিনা তথা মেসিকে তাঁর দ্বিতীয় কোপা আমেরিকা পাইয়ে দেন লাউতারো মার্তিনেজ ৷
ডাগআউটে অশ্রুস্নাত মেসিকে দেখে যেমন বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিল ফুটবল বিশ্ব ৷ তেমনি দ্বিতীয়বার মেসিকে কোপা আমেরিকার পোডিয়ামে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি হাতে নিতে দেখে উল্লাসে মেতে ওঠে সেই সব ফুটবল অনুরাগীরা ৷ যেন এক রূপকথার গল্প ৷ আশঙ্কার কালো মেঘ সরে গিয়ে মায়ামির রাতের আকাশে কোটি কোটি নক্ষত্রের চমক ৷ আর সেই নক্ষত্রের আলোকছটায় আলোকিত লিওনেল মেসি ৷