ETV Bharat / sports

প্রতিবন্ধকতা নিয়েই মাঠে ! গণেশের লড়াই এখন অনুপ্রেরণা লাল-হলুদের

‘‘জীবনের লড়াই লড়ব । কিন্তু ক্লাব খারাপ খেললে যে কষ্ট, তা এই যুদ্ধের চেয়েও কঠিন !’’ উচ্চারণের জড়তা নিয়েই গণেশ বলে ওঠেন, ‘‘জয় ইস্টবেঙ্গল !’’

Ganesh Das East Bengal Fan
গণেশের লড়াই এখন অনুপ্রেরণা লাল-হলুদের (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Sports Team

Published : 17 hours ago

কলকাতা, 3 ডিসেম্বর: প্র্যাকটিস শেষে মাঠের ভেতর ফুটবলারদের সঙ্গে জটলায় কোচ অস্কার ব্রুঁজো । মনে হচ্ছিল পরের ম্যাচের নীল নকশার হদিশ তিনি ফুটবলারদের দিচ্ছেন । বাতিস্তম্ভের আলোর অনেকগুলোই নিভে গিয়েছে । কুয়াশা জড়ানো হেমন্তর সন্ধ্যায় ফুটবলারদের নিয়ে জড়ো হয়ে অস্কার ব্রুঁজোর কথা বলার মধ্যে অনেকেই নতুনত্ব পাননি । ভুল ভাঙল একটু পরে । হুইল চেয়ারে বসে থাকা একজনকে ঘিরে রয়েছেন লাল-হলুদের তারকারা ।

ফটো তোলা হচ্ছে । ভিডিয়ো করা হচ্ছে । ফুটবলাররা যে যার মত ছবি তুলছেন হুইল চেয়ারে বসা লোকটির সঙ্গে । যাকে নিয়ে এত ফটো তোলার ধুম সেই মানুষটি নির্বিকার মুখে উপহার পাওয়া লাল-হলুদ জার্সিটা বারবার মাথায় ছোঁয়াচ্ছিলেন । চুমু খাচ্ছিলেন । পাশে দাঁড়ানো ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুঁজো এবং ফুটবলারদের হাত ধরে বলছিলেন, ‘‘আমরা ঘুরে দাঁড়াব তো ? ভালো খেলব তো ?’’ হাততালি দিয়ে ছেলেটিকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোস, ক্লেইটন সিলভারা ।

Ganesh Das East Bengal Fan
প্রতিবন্ধকতা নিয়েই মাঠে (ইটিভি ভারত)

গণেশ দাস । বাঘাযতীন নিবাসী বছর 46-এর গণেশ শারীরিক প্রতিবন্ধী । জন্মের পরে থেকেই তাঁর দু’টো পা অচল । ‘‘জন্মের পরেই ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা এবং ভুল ইঞ্জেকশনে পা হারাতে হয়েছে ,’’ বলছিলেন গনেশ । জড়ানো কথা । উচ্চারণের জড়তা নিয়েই গণেশ বলে ওঠেন, ‘‘জয় ইস্টবেঙ্গল !’’

আজ মঙ্গলবার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস । তার আগে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে ফুটবলারদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন গণেশ । ইস্টবেঙ্গল মাঠে আসা নতুন নয় । সেই 1997 সাল থেকে ময়দানে প্রিয় ক্লাবের খেলা দেখতে আসেন । হুইল চেয়ারে চেপে ঠিক হাজির হয়ে যান গলা ফাটাতে । জিতলে আনন্দ করতে করতে বাড়ি ফেরেন । হারলে চোখের জল মোছেন ।

Ganesh Das East Bengal Fan
তাঁর হাতে একটি হেলমেট তুলে দেওয়া হয় ক্লাবের তরফ থেকে (ইটিভি ভারত)

ক্লাবের প্রতি আবেগ ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দিতেই গণেশকে ইস্টবেঙ্গলের পক্ষ থেকে বিশেষ ভাবে তৈরি স্কুটার কিনে দেওয়া হয়েছে গতবছর । তারপর থেকে সেই স্কুটার চালিয়ে মাঠে আসেন । ময়দান আসলেও এই স্কুটার নিয়ে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ঢুকতে পারেন না । ‘‘সল্টলেক স্টেডিয়ামে এই স্কুটার নিয়ে আমাকে ঢুকতে দেয় না । কতবার বলেছি । কত অনুরোধ করেছি,” দুঃখ করে বলছিলেন গনেশ । তাঁর হাতে একটি হেলমেট তুলে দেওয়া হয় ক্লাবের তরফ থেকে ।

প্রায় তিরিশ বছর মাঠে বসে খেলা দেখছেন । ইস্টবেঙ্গলের প্রতিটি ম্যাচের গল্প-পরিসংখ্যান মুখস্থ । অনেক ফুটবলারকে দেখলেও গণেশের প্রিয় ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়া । দেখাও হয়েছে, কথাও । ‘‘বাইচুং ভাই আমাকে খুব ভালোবাসে । ওর সব খেলা দেখেছি এই মাঠে,” উজ্জ্বল হয়ে ওঠে গণেশের মুখ ।

Ganesh Das East Bengal Fan
গণেশকে ঘিরে রয়েছেন লাল-হলুদের তারকারা (ইটিভি ভারত)

কীভাবে হল ইস্টবেঙ্গলের প্রতি ভালোবাসা ? গণেশ জানালেন, ‘‘বাবা ইস্টবেঙ্গলের পাগল ভক্ত । ছোট থেকে বাবাকে দেখেই ক্লাবকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম । মাঠে এসেছি সব বাধা পেরিয়ে । আমি বাইরেও ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখতে গিয়েছি । জীবনের লড়াই লড়ব । কিন্তু ক্লাব খারাপ খেললে যে কষ্ট পাই, তা তো এই যুদ্ধের চেয়েও কঠিন !’’

মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিলেন ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ হেডস্যর । ‘‘ওর প্রাণশক্তি দলের প্রেরণা । কঠিন সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি ।’’ অস্কার ব্রুঁজো সমর্থকদের সঙ্গে মিশতে ভালোবাসেন । কথা বলে ইচ্ছে-স্বপ্ন-যন্ত্রণাটা বুঝতে চান । নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে জয় ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাস ফিরিয়েছে । আমরাও পারি এই বোধটা এখন সবার মধ্যে । তারই মাঝে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে গণেশ দাসের লড়াই, প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে এগিয়ে চলার শপথ কোথায় যেন দিয়ামান্তোকোস, ক্রেসপো, আনোয়ারদের চোয়াল শক্ত করে দেয় ।

আরও পড়ুন

কলকাতা, 3 ডিসেম্বর: প্র্যাকটিস শেষে মাঠের ভেতর ফুটবলারদের সঙ্গে জটলায় কোচ অস্কার ব্রুঁজো । মনে হচ্ছিল পরের ম্যাচের নীল নকশার হদিশ তিনি ফুটবলারদের দিচ্ছেন । বাতিস্তম্ভের আলোর অনেকগুলোই নিভে গিয়েছে । কুয়াশা জড়ানো হেমন্তর সন্ধ্যায় ফুটবলারদের নিয়ে জড়ো হয়ে অস্কার ব্রুঁজোর কথা বলার মধ্যে অনেকেই নতুনত্ব পাননি । ভুল ভাঙল একটু পরে । হুইল চেয়ারে বসে থাকা একজনকে ঘিরে রয়েছেন লাল-হলুদের তারকারা ।

ফটো তোলা হচ্ছে । ভিডিয়ো করা হচ্ছে । ফুটবলাররা যে যার মত ছবি তুলছেন হুইল চেয়ারে বসা লোকটির সঙ্গে । যাকে নিয়ে এত ফটো তোলার ধুম সেই মানুষটি নির্বিকার মুখে উপহার পাওয়া লাল-হলুদ জার্সিটা বারবার মাথায় ছোঁয়াচ্ছিলেন । চুমু খাচ্ছিলেন । পাশে দাঁড়ানো ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুঁজো এবং ফুটবলারদের হাত ধরে বলছিলেন, ‘‘আমরা ঘুরে দাঁড়াব তো ? ভালো খেলব তো ?’’ হাততালি দিয়ে ছেলেটিকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোস, ক্লেইটন সিলভারা ।

Ganesh Das East Bengal Fan
প্রতিবন্ধকতা নিয়েই মাঠে (ইটিভি ভারত)

গণেশ দাস । বাঘাযতীন নিবাসী বছর 46-এর গণেশ শারীরিক প্রতিবন্ধী । জন্মের পরে থেকেই তাঁর দু’টো পা অচল । ‘‘জন্মের পরেই ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা এবং ভুল ইঞ্জেকশনে পা হারাতে হয়েছে ,’’ বলছিলেন গনেশ । জড়ানো কথা । উচ্চারণের জড়তা নিয়েই গণেশ বলে ওঠেন, ‘‘জয় ইস্টবেঙ্গল !’’

আজ মঙ্গলবার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস । তার আগে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে ফুটবলারদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন গণেশ । ইস্টবেঙ্গল মাঠে আসা নতুন নয় । সেই 1997 সাল থেকে ময়দানে প্রিয় ক্লাবের খেলা দেখতে আসেন । হুইল চেয়ারে চেপে ঠিক হাজির হয়ে যান গলা ফাটাতে । জিতলে আনন্দ করতে করতে বাড়ি ফেরেন । হারলে চোখের জল মোছেন ।

Ganesh Das East Bengal Fan
তাঁর হাতে একটি হেলমেট তুলে দেওয়া হয় ক্লাবের তরফ থেকে (ইটিভি ভারত)

ক্লাবের প্রতি আবেগ ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দিতেই গণেশকে ইস্টবেঙ্গলের পক্ষ থেকে বিশেষ ভাবে তৈরি স্কুটার কিনে দেওয়া হয়েছে গতবছর । তারপর থেকে সেই স্কুটার চালিয়ে মাঠে আসেন । ময়দান আসলেও এই স্কুটার নিয়ে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ঢুকতে পারেন না । ‘‘সল্টলেক স্টেডিয়ামে এই স্কুটার নিয়ে আমাকে ঢুকতে দেয় না । কতবার বলেছি । কত অনুরোধ করেছি,” দুঃখ করে বলছিলেন গনেশ । তাঁর হাতে একটি হেলমেট তুলে দেওয়া হয় ক্লাবের তরফ থেকে ।

প্রায় তিরিশ বছর মাঠে বসে খেলা দেখছেন । ইস্টবেঙ্গলের প্রতিটি ম্যাচের গল্প-পরিসংখ্যান মুখস্থ । অনেক ফুটবলারকে দেখলেও গণেশের প্রিয় ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়া । দেখাও হয়েছে, কথাও । ‘‘বাইচুং ভাই আমাকে খুব ভালোবাসে । ওর সব খেলা দেখেছি এই মাঠে,” উজ্জ্বল হয়ে ওঠে গণেশের মুখ ।

Ganesh Das East Bengal Fan
গণেশকে ঘিরে রয়েছেন লাল-হলুদের তারকারা (ইটিভি ভারত)

কীভাবে হল ইস্টবেঙ্গলের প্রতি ভালোবাসা ? গণেশ জানালেন, ‘‘বাবা ইস্টবেঙ্গলের পাগল ভক্ত । ছোট থেকে বাবাকে দেখেই ক্লাবকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম । মাঠে এসেছি সব বাধা পেরিয়ে । আমি বাইরেও ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখতে গিয়েছি । জীবনের লড়াই লড়ব । কিন্তু ক্লাব খারাপ খেললে যে কষ্ট পাই, তা তো এই যুদ্ধের চেয়েও কঠিন !’’

মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিলেন ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ হেডস্যর । ‘‘ওর প্রাণশক্তি দলের প্রেরণা । কঠিন সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি ।’’ অস্কার ব্রুঁজো সমর্থকদের সঙ্গে মিশতে ভালোবাসেন । কথা বলে ইচ্ছে-স্বপ্ন-যন্ত্রণাটা বুঝতে চান । নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে জয় ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাস ফিরিয়েছে । আমরাও পারি এই বোধটা এখন সবার মধ্যে । তারই মাঝে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে গণেশ দাসের লড়াই, প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে এগিয়ে চলার শপথ কোথায় যেন দিয়ামান্তোকোস, ক্রেসপো, আনোয়ারদের চোয়াল শক্ত করে দেয় ।

আরও পড়ুন

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.