কলকাতা, 7 ফেব্রুয়ারি: কলকাতা ফুটবলের দুই প্রধানের শীর্ষ কর্তারা বলছেন, তাঁরা সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কাজে বিরক্ত ৷ কখন কী হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে না ৷ রেফারিদের মানোন্নয়ন থেকে সারাবছরের ফুটবল ক্যালেন্ডার তৈরিতে কোনও পরিকল্পনার ছাপ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ এই সমস্যার ঘোলা জলে বাড়তি নুন ছড়িয়েছে টেকনিক্যাল কমিটি থেকে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের বাদ পড়া ৷
একবছর আগে আইএম বিজয়নের সভাপতিত্বে কমিটি গড়া হয়েছিল ৷ তখন প্রাথমিকভাবে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যকে রাখা হয়েছিল ৷ কিন্তু প্রাক্তন ভারতীয় ডিফেন্ডার চিঠি দিয়ে থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন ৷ সেই সময় সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যকে রাখেন ৷ মেয়াদ কমিটির চা বছর হলেও একবছরের মধ্যে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য সেই কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ৷
এবার সেখানে রাখা হয়েছে বাইচুং ভুটিয়া এবং সন্তোষ সিংকে ৷ বাইচুং ভুটিয়াকে নিয়ে প্রশ্ন নেই ৷ প্রশ্ন বিহারের সন্তোষ সিংকে নিয়ে ৷ কিন্তু, প্রশ্নের উত্তর দেবে কে ? ফেডারেশন তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে না ৷ টেকনিক্যাল কমিটি থেকে বাদ পড়ার ব্যাপারে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া উদাসীনতায় ভরা ৷
তিনি বলছেন, “আমাকে রাখল না বাদ দিল, তাতে কার কী এল গেল ৷ যখন রেখেছিল তখনই রাজি ছিলাম না ৷ চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম ৷ পরে অনেক অনুরোধ করল, হাতে পায়ে ধরার পরিস্থিতি তৈরি হওয়াতে রাজি হয়েছিলাম ৷ এই টেকনিক্যাল কমিটির কাজটা কী ? মাঠে তো যায় না ৷ সেখানে তো কর্তারা যান ৷ আর হয় মিটিং, সেই মিটিং হত জুম কলে ৷ তাতে আমি সড়গড় নই ৷ তাই কী কারণে রাখা হল না, জানি না ৷ আমাকে রাখা বা বাদ দেওয়ার ক্ষমতা টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যদের নেই ৷”
শুধু টেকনিক্যাল কমিটি থেকে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বাদ পড়েছেন এমন নয় ৷ ফেডারেশনের অন্দরে অসন্তোষের আগুন জ্বলছে ৷ শাজি প্রভাকরণকে সচিব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আদালত অবধি গড়িয়েছে ৷ এখন ফেডারেশনের নোডাল লিগ্যাল অফিসার নীলাঞ্জন ভট্টাচার্যের ইমেল কর্তাদের অস্বস্তিতে ফেলেছে ৷ ফেডারেশনের আইনজীবী একগুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে এসেছেন ৷ ফেডারেশনের বিভিন্ন কাজে গোপনীয়তা রক্ষা না-করা, বিশ্বাসভঙ্গ এবং আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে আইনজীবী নীলাঞ্জন ভট্টাচার্যের ই-মেলে ৷
দীর্ঘ ইমেলে তিনি অভিযোগ করেছেন, "যাবতীয় কাজ করা হচ্ছে অন্ধকারে রেখে ৷ এমনকি প্রাপ্য বেতন আটকে রাখা হয়েছে ৷ ফেডারেশন অনেক চুক্তি করছে নোডাল অফিসারকে না জানিয়ে ৷ ফেডারেশনের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলা হলেও, তা কানে তোলা হচ্ছে না ৷ ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবে জানিয়েছেন যাবতীয় প্রশ্ন ও ই-মেলের উত্তর তাঁরা সঠিক সময়ে দেবেন ৷ কার বেতন কমানো হয়েছে ? কেন বেতন কমানো হয়েছে ? তার উত্তর ফেডারেশনের এইচআর বিভাগ দেবে ৷"
ফেডারেশনের কাজকর্মের সমালোচনা করেছেন ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার ৷ তিনি বলেন, "ফেডারেশনের হাতে অনেক ক্ষমতা ৷ আমি যদি সমালোচনা করি, তাহলে আমাদের টেনে নামানোর চেষ্টা করা হবে ৷ গত তিন-চারবছর ধরে সেটাই করা হয়েছে ৷ তবে, আমরা এই অন্যায় মানবো না ৷ আমরা প্রতিবাদে পথে নামব ৷"
মোহনবাগানের সচিব দেবাশিস দত্ত বলছেন, "ফেডারেশন মিটিং ছাড়া করেটা কি ! কথা অনেক বলছে ৷ এই মিটিং, ওই মিটিং করে বেড়ায় ৷ দিনের শেষে ফল শূন্য ৷ ডার্বিতে রেফারিং নিয়ে দু'দলই ক্ষুব্ধ ৷ এমন একজন রেফারিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, যার বিরুদ্ধে খারাপ রেফারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে ৷ বুঝতে পারছি না, এই রেফারিকে কেন ব্যান করা হচ্ছে না ৷ ভালো রেফারি কি নেই ? শুনছি ডার্বির গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা চলছে ৷ ফেডারেশনের মাথায় একজন প্রাক্তন ফুটবলার বসে রয়েছেন ৷ তাঁর কাছ থেকে প্রত্যাশা প্রচুর ৷ ফেডারেশন প্রচুর মিটিং করে, কিন্তু ফল শূন্য ৷ জেলায় অনেক ভালো রেফারি রয়েছেন ৷ তাঁদের তুলে নিয়ে আসা হোক ৷ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সময় ডার্বি কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বিদেশ থেকে রেফারি নিয়ে আসা হত ৷ এখন প্রয়োজনে তা করা হোক ৷"
আরও পড়ুন: