কলকাতা, 5 জুন: অস্তিত্বের ম্যাচে আবেগের সুনামি ৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আয়োজিত হবে ভারত বনাম কুয়েত ফিফা বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচ ৷ দুই দেশ ফুটবল যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দীতার চোরাস্রোত বইবে এটাই তো স্বাভাবিক ৷ কিন্তু, কুয়েত বা ভারত দু’দলের সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্নের এপিসেন্টার হয়ে থাকলেন সুনীল ছেত্রী ৷ ভারতীয় দলের অধিনায়ক তাঁর কুড়ি বছরের আর্ন্তজাতিক ফুটবলে দাড়ি টানছেন ৷
150 ম্যাচে 94 গোল করে বিশ্বে বর্তমানে ফুটবলারদের মধ্যে ভারত অধিনায়কের স্থান তিন নম্বরে ৷ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং লিওনেল মেসির পরেই ৷ ফুটবলে প্রথম বিশ্বের দুই কিংবদন্তির পাশে তৃতীয় বিশ্বের একজন স্ট্রাইকারের জায়গা করে নেওয়া নিঃসন্দেহে কুর্নিশ যোগ্য ৷ তাই তিনি যখন বুট তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেন, তখন প্রতিপক্ষও বৈরিতা ভুলে টুপি খুলে সম্মান জানায় ৷
আবেগের সুনামিতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে চলেছেন সুনীল ছেত্রী ৷ সাংবাদিক সম্মেলনের সিংহভাগ প্রশ্ন তাঁর অবসর সংক্রান্ত হতে দেখে সুনীল বলেন, “আপনারাই এই ম্যাচটিকে আবেগতাড়িত করে তুলছেন ৷ এটা আর বাকি ম্যাচের মতোই একটা ম্যাচ ৷ এই ম্যাচটা ভারতের বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছনোর ম্যাচ ৷ এটা ভারতীয় ফুটবলের জন্য বিরাট ব্যাপার ৷ এর আগে এই ঘটনা ঘটেনি ৷ এতবড় মঞ্চ ফুটবল ছাড়ার জন্য পেতাম না !”
কুড়ি বছরের উজ্জ্বল আর্ন্তজাতিক ফুটবল জীবনের সমাপ্তি ৷ স্বাভাবিকভাবেই অভাব পূরণ সহজ নয় ৷ সুনীল ছেত্রীর পাশে বসে অভাব পূরণের কথা মানছেন কোচ ইগর স্টিম্যাচ ৷ তবে, সুনীল ছেত্রীকে নিয়ে আবেগতাড়িত হওয়ার চেয়ে কুয়েত ম্যাচের ছক সাজাতে ব্যস্ত তিনি ৷ মানছেন এই ম্যাচের অভিঘাত সুনীল ছেত্রীর মতো কিংবদন্তির অবসরের অবেগে পর্যবসিত ৷
তিনি বলেন, “শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত আমাদের পাশে থাকবেন ৷ শেষ পর্যন্ত নিজেদের নিংড়ে দেব ৷” প্রথম একাদশ ইতিমধ্যেই বেছে নিয়েছেন স্টিম্যাচ ৷ গোলরক্ষকের জায়গায় গুরপ্রীত সিংই থাকছেন ৷ তবে, দল স্টিম্যাচ বেছেছেন ফুটবলারদের বর্তমান ফর্মের ভিত্তিতে ৷ কুয়েতের সঙ্গে প্রাক বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের ম্যাচে মনবীর সিংয়ের গোলে জয় পেয়েছিল ভারত ৷ তারপর থেকে জয় অধরা ৷ পয়েন্টের বিচারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফের জয় ভারতকে পরের পর্বে পৌঁছে দিতে পারে ৷ সেই ভাবনা থেকেই সুনীল ছেত্রী বলছেন, গোল কে করবেন, তার চেয়ে যে কোনও উপায়ে তিন পয়েন্ট পাওয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেন ৷
সুনীলের কথায়, “শেষ ম্যাচ নিয়ে আবেগ থাকবেই ৷ আমি চেষ্টা করছি আবেগ সরিয়ে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে ৷ খুব চেষ্টা করছি আবেগ সরিয়ে রাখতে ৷ ম্যাচটা জিততে পারলে আমাদের সুযোগ থাকবে ৷” প্রায় একইসঙ্গে যোগ করেন, “দিন কুড়ি আগে আমি ঘোষণা করেছি ৷ তারপর থেকে দিন গোনা শুরু হয়েছে ৷ এরপর খেলা দেখতে স্যুট পরে আসব ৷” কিন্তু, সুনীলের ছেড়ে যাওয়া জুতোয় কে পা গলাবেন ? সুনীল জানালেন, উত্তরসূরির লম্বা লাইন ৷
সুনীল বললেন, “মনবীর, ডেভিড, ছাঙতেরা জিজ্ঞাসা করছে, অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তটা চূড়ান্ত তো ? আমি তেমন মানুষ নই, যে কথা দেওয়ার পর তার খেলাপ করি ৷ যা করি ভেবেচিন্তে করি ৷ তাই এরপর শুধু স্ট্যান্ডে বসে ম্যাচে দেখব ৷” প্রাক্তন হতে চলা ভারত অধিনায়কের কথার রেশ ধরে স্টিম্যাচ যোগ করেন, “তোমাকে পরবর্তী সময়ে ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে পারি !” ভবিষ্যতে সুনীল ছেত্রীকে কি ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে দেখা যেতে পারে ? প্রশ্নটা শুনেই সুনীল জানিয়েছেন, সেই সম্ভাবনা নেই ৷ মজা করেই বললেন, “পাঁচ বছর আগে স্টিম্যাচকে পেয়েছিলাম ৷ সুন্দর চেহারা ছিল ৷ গত পাঁচ বছরে পনেরো বছর বয়স বেড়ে গিয়েছে ওর ৷ আমি সেই টেনশন নিতে চাই না ৷ প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছ'টায় ওঠার ঝক্কি নিতে রাজি নই ৷ অবসরটা উপভোগ করতে চাই ৷”