কলকাতা, 22 নভেম্বর: ‘‘বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের শতবর্ষ উদযাপন করতে পারে না ৷ ছোট খেলার আর্থিক নিশ্চয়তা দিতে পারে না ৷ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখতে পারে না ৷ তাঁদের বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের পদাধিকারী হওয়া সাজে না ।’’ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের আনাচে-কানাচে এই কথাগুলোই এখন কান পাতলে শোনা যাচ্ছে ।
গত 4 বছরে বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরাই এখন বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে সরব । আড়ালে-আবডালে নয়, সকলেই কথাগুলো কার্যত প্রকাশ্যে বলছেন । 29 নভেম্বর বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন । আপাত নিস্তরঙ্গ এই সংস্থায় এখন নির্বাচনের উত্তাপ । যা কার্যত বিস্ফোরণের অপেক্ষায় ।
4 বছর আগে তৎকালীন বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়কে নির্বাচনে হারিয়েছিলেন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় । রক্তের সম্পর্কের দু’ভাইয়ের প্রশাসনিক শীর্ষপদে বসা নিয়ে উত্তপ্ত হয়েছিল ময়দান । দুই বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের দাদা ও ভাই । ফলে রাজ্য অলিম্পিক ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনে দু’ভাইয়ের আস্তিন গুটিয়ে নেমে পড়ায় অস্বস্তিতে পড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর পরিবার । শোনা যায়, বহু চেষ্টা করেও ছোট ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বড় ভাই অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়ানো থেকে বিরত করা যায়নি ।
মাঝের চার বছরে বহু জল গড়িয়েছে । রাজ্য অলিম্পিক সংস্থার পারফর্ম্যান্স নিয়ে কাঁটাছেড়া হচ্ছে । এবার দু’ভাইয়ের লড়াই নয়, প্রতিপক্ষের মুখ বদল হয়েছে । বর্তমান বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনকে কোনঠাসা করতে পর্দার আড়াল থেকে আসরে রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী । তা তিনি করছেন রাজ্যের শাসকদলের নির্দেশ অনুসারে । ফলে বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের লড়াইটা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভূতি নিয়ে পর্দার পেছন থেকে চালনা করছেন ওই মন্ত্রী । তিনি ঘুঁটি সাজাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে । অর্থাৎ ঘুরিয়ে দেখতে গেলে এবছরের লড়াইটা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দিদি বনাম ছোট ভাইয়ের ।
রাজ্যের ওই মন্ত্রী বকলমে যে প্রার্থীপদ দিতে চলেছেন, তাতে রোয়িংয়ের চন্দন রায়চৌধুরী সভাপতি পদে দাঁড়াচ্ছেন । সহ-সভাপতি পদে বিশ্বরূপ দে । সচিব পদে জহর দাস রয়েছেন । বেঙ্গল অলিম্পিক সংস্থার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে বিশ্বরূপ দে জানিয়েছেন, তিনি দলের নির্দেশ অনুসরণ করছেন মাত্র । অতীতে সিএবি নির্বাচন এবং আইএফএ নির্বাচনেও দলের নির্দেশ মত চলেছিলেন ৷ এবারও সেইভাবেই চলবেন । তাঁর মতে, রাজ্যের খেলাধুলো নিয়ে ক্রীড়া উৎসাহী কোনও মন্ত্রীর বক্তব্য থাকার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই । যেকোনও ক্রীড়া সংস্থা চালানোর জন্য সরকারের সঙ্গে তালমিল থাকা আবশ্যিক । বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন তাঁদের শতবর্ষ উদযাপনে ব্যর্থ । যা প্রমাণ করে, সংস্থাটি ঠিকভাবে চলছে না । ছোট ছোট খেলাগুলির আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার দায়িত্বও বেঙ্গল অলিম্পিক সংস্থার । সেই কাজেও ব্যর্থতা । তা সকলেই দেখতে পাচ্ছেন ।
শনিবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন । বিশ্বরূপ দে বলছেন, নির্বাচনে লড়াইয়ের পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা চলছে । এবছর চারবছর আগের পরিস্থিতি হবে না । কারণ, রিটার্নিং অফিসার হিসেবে থাকছেন অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় । যদিও নির্বাচনের পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা হলেও তা বোধহয় হচ্ছে না বলে জানাচ্ছে বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের একটি সূত্র । সব মিলিয়ে মন্ত্রী বনাম স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইয়ের আবহে উত্তপ্ত বেঙ্গল অলিম্পিকের নির্বাচন ।