কলকাতা, 16 এপ্রিল: তুমি কেমন করে স্ট্র্যাটেজি সাজাও হে গুণী...
সোমবারের পর আন্তোনিয়ো লোপেজ হাবাসকে নিয়ে মোহন জনতা এমন গান বাঁধলে আশ্চর্যের কিছু নেই ৷ দু'বারের লিগ-শিল্ড চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের নয়া শিল্ড উইনার মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ৷ যা আখেড়ে বাগানের ট্রফির ভাঁড়ারের ষোলকলা পূর্ণ করল বলা যায় ৷ এই সাফল্যের পিছনে সবুজ-মেরুন ফুটবলারদের উদয়াস্ত খাটনিকে ছোট না-করেই বলতে হয় 'বস কিন্তু হাবাসই'৷
ঠিক দশ বছর আগে জন্মলগ্ন থেকে আইএসএলে সাফল্যের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে তাঁর নাম ৷ এরপর টানা তিনি লিগের সঙ্গে জুড়ে ছিলেন তেমনটা নয়, তবে ভারতের ক্লাব ফুটবলকে যে গুলে খেয়েছেন স্প্যানিশ ভদ্রলোক, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ আইএসএলের আত্মপ্রকাশে এটিকে ট্রফি জিতেছিল এই স্প্যানিয়ার্ডের হাত ধরেই ৷ এটিকে'কে তারপরেও সাফল্য এনে দিয়েছেন হাবাস, তবে সংযুক্তিকরণের পর সবুজ-মেরুনকে কিছু দিতে পারেননি বলিভিয়ার প্রাক্তন জাতীয় দলের কোচ ৷
আইএসএল আত্মপ্রকাশে হাবাসের কোচিংয়ে বাগান ফাইনালে পৌঁছলেও ঠোঁট আরে কাপের দূরত্বটা রয়েই গিয়েছিল ৷ ভারতীয় ফুটবল সার্কিটে পোড় খাওয়া হলেও তাঁর রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি প্রশ্নের মুখে পড়েছিল বারংবার ৷ 2021-22 মরশুমে মাঝপথে তো ক্লাব গোল্ডেন হ্যান্ডশেকই সেরে নিয়েছিল হাবাসের সঙ্গে ৷ দায়িত্ব নিয়েছিলেন তরুণ জুয়ান ফেরান্দো ৷ সাফল্যও এনে দেন হাবাসের উত্তরসূরি ৷ গত মরশুমে বাগান যখন আইএসএল জিতল, সুদূর স্পেনে বসে তখন জল মাপছেন আন্তোনিও হাবাস ৷ এটিকে এবং পরবর্তীতে সংযুক্তিকরণের পর এটিকে মোহনবাগান (বর্তমানে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট) ম্যানেজমেন্টের ভরসার স্থলপাত্র তিনি এতটাই হয়ে ওঠেন যে, চলতি মরশুমের শুরুতে ফেরান্দোর সঙ্গে ফের কোচিং স্টাফ হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল হাবাসের নাম ৷
বছর ছেষট্টির স্প্যানিয়ার্ড বোধহয় তখন হাঁটুর বয়সি ফেরান্দোর পদস্খলনের প্রতীক্ষায় ৷ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে স্পেন থেকেই কাজ করছিলেন তিনি ৷ মরশুমের শুরুটা ফেরান্দোর হাত ধরে চ্যাম্পিয়নের মতোই শুরু করেছিল বাগান ৷ প্রথমে ডুরান্ড জয়, তারপর আইএসএলে দারুণ শুরু ৷ বিপত্তিটা বাঁধল ডিসেম্বর নাগাদ ৷ তারকাখচিত দল পেয়েও এএফসি'তে আশানরূপ ফলাফল না-পাওয়ার পর যোগ হল আইএসএলে মুম্বই, গোয়া এবং কেরলের কাছে সবুজ-মেরুনের হারের হ্যাটট্রিক ৷ ফেরান্দোকে সরিয়ে জরুরি ভিত্তিতে স্পেন থেকে হাবাসকে ডেকে পাঠানো হল ৷ তারপরেরটা তো সকলেরই জানা ৷
আশ্চর্যজনকভাবে দলের ওজন বুঝে এবার স্ট্র্যাটেজিতেও আমূল পরিবর্তন এল হাবাসের ৷ আপফ্রন্টে দিমি পেত্রাতোস, জেসন কামিংস, আর্মান্দো সাদিকু কিংবা মাঝমাঠে সাহাল আব্দুল সামাদ, অনিরুদ্ধ থাপাদের পেয়েও যেটা করে দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন ফেরান্দো; পরিকল্পনার খোলনলচে বদলে তাদের দিয়েই কড়ি তুলে আনলেন হাবাস ৷ সেইসঙ্গে স্প্য়ানিয়ার্ড তাঁর পূর্বসূরিকে যেন বার্তা দিয়ে গেলেন ৷ পরিসংখ্যান বলছে হাবাসের অধীনে চলতি মরশুমে 12টি আইএসএল ম্যাচ থেকে 9টি জয়-সহ 29 পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে বাগান ৷ সেইসঙ্গে গোলের ফুলঝুরি ফুটিয়েছে বাগানের আপফ্রন্ট ৷
তাই সবশেষে বলতেই হয় তারকাসমৃদ্ধ দলকে সামলাতেও প্রয়োজন হয় ক্ষুরধার মস্তিষ্কের ৷ এব্য়াপারে বাহবা দিতে হয় মোহনবাগান ম্যানেজমেন্টকেও ৷ ঠিক সময়ে ফেরান্দোকে সরিয়ে হাবাসকে আনার মাস্টারস্ট্রোকটা যে তাদেরই ৷ তাঁরই ফল বাগানের ক্যাবিনেটে আইএসএল শিল্ড ৷
আরও পড়ুন: