জলপাইগুড়ি, 4 এপ্রিল: নির্বাচনী জনসভা থেকেও এবার এজেন্সির ব্যবহার এবং কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা উঠে এল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের গলায় ৷ আবাস যোজনা বা 100 দিনের কাজ, কোনও কিছুতেই কেন্দ্রের ছবি বা নামের উল্লেখ রাখা হবে না বলেও ঘোষণা করেন মমতা ৷ তার ব্যাখ্য়া দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, কেন্দ্র অর্ধেক টাকা দেয় ৷ 75 শতাংশ টাকা রাজ্য সরকার খরচ করে ৷ তারপরও কেন কেন্দ্রের দেওয়া প্রকল্পের নাম বা ছবি ব্যবহার করা হবে তা নিয়েই বৃহস্পতিবার প্রশ্ন তুলেছেন মমতা ৷ সেই সঙ্গে, নাম না করে অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপ বিশ্বেসের বাড়িতে আয়কর তল্লাশি নিয়েও এদিন মুখ খুলেছেন মমতা ৷
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী যে ইডি'র বাজেয়াপ্ত টাকা রাজ্যের মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার যে দাবি করেছেন, তা নিয়েও এদিন কটাক্ষ করেছেন মমতা তিনি বলেন, "তিন হাজার কোটি টাকা বাংলার মানুষকে দিতে গেলে প্রত্যেকে 21 টাকা করে পাবেন ৷ সেই টাকার জন্য আপনারা যাবেন ? 15 লক্ষ টাকা দেবে বলেছিল, দিয়েছে ? বিজেপি ভাঁওতাবাজ দল ৷ বিজেপিকে ভোট দিলে তিন হাজার টাকা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেবে বলছে ৷ কী করে দেবে ? এটা রাজ্যের প্রকল্প, নরেন্দ্র মোদির প্রকল্প না ৷ বাংলা বাঁচলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, সাইকেল, কন্য়াশ্রী, স্বাস্থ্য সাথী সব পাবেন ৷"
এজেন্সির ব্যবহার নিয়ে আগেই সরব হয়েছে বিরোধীরা ৷ দেশের প্রায় সব বিরোধী দলই এক যোগে ইডি-সিবিআই-এর অভিযানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে ৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "রিপোর্ট আছে, বিজেপি নেতারা এনআইএ নিয়ে ঘুরছে ৷ জেতার ক্ষেত্রে নিশ্চিত হলে এতো এজেন্সি পাঠাচ্ছে কেন ? তোমরা যখন এতই কনফিডেন্ট তবে কেন আয়কর বিবাগ, ইডি, সিবিআইকে বিরোধীদের বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে ৷ লজ্জা লাগে না ! বেহায়া, জুমলাবাজ, ধোকাবাজের দল বিজেপি ৷" এরপরই কেন্দ্রের প্রকল্প নিয়েও সরব হয়েছেন মমতা ৷ তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবাস প্রকল্পে আমার নাম দেয় না কেন ? কেন নাম দেব ? তুমি পুরো টাকা দাও যে তোমার নাম দেব ? অর্ধেক টাকা রাজ্যের আর অর্ধেক টাকা তোমার ৷ তবে কেন শুধু তোমার নাম থাকবে ? মানুষের নাম থাকবে ৷"
এখানেই শেষ নয়, তীব্র কটাক্ষের সুরে মমতা বলেন, "পাঁচ কেজি চালের বস্তাতেও প্রধানমন্ত্রীর ছবি, বিজেপির প্রতীক ! মানুষকে সামান্য খেতে দেবে সেখানেও প্রচার চায় ৷ মোদি এত আত্মপ্রচারে ব্যস্ত ! সেনা হাসপাতাল পর্যন্ত বিজেপির দখলে চলে গিয়েছে ৷ সব কিছুতেই শুধুই রাজনীতি ৷" একানেই শেষ নয়, এদিন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপ বিশ্বাসের বাড়িতে আইটি অভিযান নিয়েও মুখ খুলেছেন মমতা ৷ নাম না করে তিনি বলেন, "আমাদের এক কাউন্সিলরের বাড়িতে আইটি পৌঁছে গিয়েছিল ৷ রোজ লোকের বাড়িতে আয়কর রেইড করাচ্ছে ৷ বাড়ির বাচ্চাদেরও খেতে দেওয়া হচ্ছে না ৷"
সেইসঙ্গে, জলপাইগুড়িতে ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বলতে গিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী কার্যত নির্বাচন কমিশনকেও আক্রমণ করেছেন ৷ কমিশন কার্যত বিজেপির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন মমতা ৷ তিনি আরও বলেন, "ত্রাণ নিয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে এটা বিজেপির কথা ৷ এটা নিয়ে বিজেপির রাজনীতির কাছে আত্মসমর্পন করবেন না ৷ ইলেকশন না থাকলে আমি এক সেকেন্ডে ঘোষণা করে দিতাম ৷ সব বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে ৷ আমরা রাজ্য সরকারের থেকে করব ৷ কেন্দ্রের দয়া চাই না ৷ 100 দিনের টাকা দেয় না, তাদের দয়া চাই না ৷ কমিশন অনুমতি দিচ্ছে না ৷ তাই দেরি হচ্ছে ৷ বিজেপি না বললে কাজ করতেও দিচ্ছে না ৷"
রাজ্যে আটকে থাকা কেন্দ্রের প্রকল্পের কথা বলতে গিয়ে মমতা বলেন, "কোথায় দুর্নীতি হয়েছে প্রমাণ করতে হবে ৷ মুখে বললে হবে না ৷ তিন বছর ধরে কেন আবাস যোজনার টাকা দেননি, গ্রামীণ রাস্তার টাকা দেননি, 100 দিনের কাজের টাকা তিন বছর ধরে দেওয়া হয়নি ৷ আমরাই টাকা দেব ৷ দিল্লির কাছে আর হাত পাতব না ৷ মে মাসের পর 11 লক্ষ বাড়ির টাকা রাজ্য সরকার দেবে ৷ বাজেটে পাশ হয়ে গিয়েছে ৷"
আরও পড়ুন: