মেদিনীপুর, 20 জানুয়ারি: বাড়িতে বড় বউদি ও ছোট বউদির মধ্যে যেমন অভিমান হয়, তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অনেকটা সেই রকম ৷ এমনটাই মনে করেন মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া ৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের এক সাংগঠনিক বৈঠক শেষে তিনি এই মন্তব্য করেছেন ৷ তাঁর মতে, ‘‘পরিবার বড় হলে তার মধ্যে মতানৈক্য অভিমান হতেই পারে ।’’ একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, মেদিনীপুরে তৃণমূল কংগ্রেসে কোনও কোন্দল নেই ৷
প্রশ্ন উঠছে, কোন্দল যদি না থাকে, তাহলে শুক্রবার সন্ধ্যায় শাসক দল জরুরি বৈঠকে কেন বসেছিল ? কেন সেখানে হাজির ছিলেন মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়া, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা, মেদিনীপুর শহরে তৃণমূলের সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব, মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান ? কেন সেখানে ডাকা হয়েছিল মেদিনীপুরের 20 জন কাউন্সিলরকে ?
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের জবাব, শুক্রবার সন্ধ্য়ায় বৈঠক ডাকা হয়েছিল আগামী সোমবার সংহতি মিছিল আয়োজন নিয়ে ৷ সেই মিছিলের প্রস্তুতি নিয়েই যাবতীয় আলোচনা হয়েছে ৷ বৈঠক শেষে সেই কথাই বলেছেন জুন মালিয়া ৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের মধ্যে সাধারণত কোনও দ্বন্দ্ব নেই ৷ সংহতি মিছিল নিয়ে বৈঠক হয়েছে ৷’’
যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের একটি সূত্র বলছে, মেদিনীপুর পৌরসভায় দীর্ঘদিন ধরে অন্তর্দ্বন্দ্বে দীর্ণ শাসক দল ৷ পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে পৌরপ্রধানের বিরুদ্ধে অবস্থান বিক্ষোভও করেছেন 10 জন বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলর ৷ অবস্থা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝে কলকাতায় নেতাদের ডেকে পাঠানো হয় শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে ৷ কলকাতার সেই বৈঠকে শীর্ষ নেতৃত্ব মানস ভুঁইয়াকে দায়িত্ব দেয় দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্য ৷ সেই মতো শুক্রবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরার অফিসে বৈঠক হয় ৷
বৈঠক শেষে মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘দলের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই । সাধারণত কেউ কম কথা বলে ৷ কেউ বেশি কথা বলে । আমাদের উচিত সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া ৷ আগে যেমন বামেরা গরিব লোকের জমি কেড়ে নিত । কিন্তু ডানপন্থীরা চিরকালই বেশি জমি থাকা মানুষ জনের কাছে থেকে জমি নিয়ে কম জমি থাকা মানুষ জনকে দেওয়ার কাজই করে গিয়েছে ।’’
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি দ্বন্দ্ব মিটে গেল ? সেই বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেল বিক্ষুব্ধদের তরফে বক্তব্যেও ৷ সুজয় হাজরা যেমন ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখে বলেন, ‘‘আগে আত্মসম্মান । যাঁর আত্মসম্মান নেই, তিনি মানুষ বলে বিবেচিত হন না ।’’ এই কথা তিনি কাকে বললেন, সেই ব্যাখ্যা অবশ্য দেননি ৷ আবার বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হল, সেই বিষয়েও মুখ খোলেননি ৷
কিন্তু দ্বন্দ্ব মেটার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তার ইঙ্গিত তাঁর কথা থেকেই মিলেছে ৷ সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘কোথাও একটা কাজ করতে গিয়ে সমস্যা হয়েছিল, কাজের মাধ্যমে তা মিটে যাবে ।’’ তবে আলোচনা কি শেষ পর্যন্ত থামল, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আলোচনা আলোচনায় থেকেছে ।’’
আরও পড়ুন: