সন্দেশখালি, 4 এপ্রিল: যে এলাকার নারীদের আন্দোলন হইচই ফেলেছে দেশজুড়ে, সেই এলাকায় দাঁড়িয়ে 'নতুন' সন্দেশখালি গড়ার ডাক দিলেন বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম । বৃহস্পতিবার চাঁদিঠাটা রৌদ্রের মধ্যেই সন্দেশখালিতে মিছিল ও পথসভা সংগঠিত হয় তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে । জোড়া এই কর্মসূচিকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা ছিল লক্ষণীয় । বিশেষ করে সন্দেশখালির প্রতিবাদী মহিলাদের একাংশের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো । যা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ । তাহলে কি সন্দেশখালির রাজনৈতিক সমীকরণ বদলাতে শুরু করেছে ? নাকি আন্দোলন ঘিরে প্রতিবাদী মহিলারাই দ্বিধাবিভক্ত ? সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে ।
বৃহস্পতিবার সন্দেশখালির ফেরিঘাট চত্বর ছিল কার্যত তৃণমূল-ময় ! ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন হাতে নিয়ে আগে থেকেই দলীয় প্রার্থীকে বরণ করে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তৃণমূলের বহু কর্মী-সমর্থক । দলের প্রার্থী সেখানে পৌঁছাতেই জয়ধ্বনি, শাঁখ এবং উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ফেরিঘাট চত্বর । এরপর, তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলামকে সামনে রেখে শুরু হয় তৃণমূলের প্রচার অভিযান ।
সূত্রের খবর, প্রথমে শাসকদলের প্রার্থীর সমর্থনে সন্দেশখালি বাজারে মিছিল হয় । পরে, স্থানীয় দুর্গামণ্ডপ এলাকায় আয়োজিত হয় একটি পথসভা । দু’টি কর্মসূচিতেই তৃণমূল কর্মীদের পাশাপাশি সন্দেশখালির মানুষের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া । প্রার্থীকে ঘিরে কার্যত এ দিন উচ্ছ্বাস, আবেগে ভেসে যান তাঁরা । পরে, সভা শেষে সন্দেশখালির প্রতিবাদী মহিলাদের কয়েকজন প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন ।
সেই সময় প্রতিবাদী মহিলাদের একাংশের উদ্দেশ্যে তৃণমূল প্রার্থীকে জিজ্ঞাসা করতে শোনা যায়, আপনাদের উপর কেউ কি অত্যাচার করেছে ? পাশ থেকে উত্তর আসে, না না ! সেরকম কোনও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি তাঁদের সঙ্গে । পালটা তখন হাজি নুরুল বলেন, "সবটাই নাটক এবং পরিকল্পিত । আমরা একসঙ্গে ছিলাম । একসঙ্গে থাকব । আপনাদের পাশে আমরা রয়েছি । আইন আইনের মতো করে চলবে ।" এরপরই হাজি নুরুলের নামে জয়ধ্বনি দিতে শুরু করেন মহিলাদের কেউ কেউ ।
এই বিষয়ে সুমিত্রা মণ্ডল নামে সন্দেশখালির এক প্রতিবাদী মহিলা বলেন, "আমাদের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল শিবু হাজরা ও উত্তম সরদারের জমি জবরদখল এবং জমির লিজের টাকা না দেওয়ার বিরুদ্ধে । আর নারী নির্যাতনের যে ঘটনা বলা হচ্ছে, সেটা কতটা সত্য, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান আমরা । কারণ, যাঁরা এই অভিযোগ তুলছে, তাঁরা নির্দিষ্টভাবে অভিযুক্তদের কারও নাম ঠিকমতো বলতে পারছে না । ফলে জমি কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে আগে ক্ষোভ থাকলেও এখন আমরা আশ্বস্ত শাহজাহান, শিবু, উত্তমরা জেলে যাওয়াতে । আমরা তৃণমূলের সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব । প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে আমরা খুব খুশি । উনি এসে সকলের সঙ্গে কথা বলে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন ।"
সব শুনে আপ্লুত তৃণমূলের বিধায়ক প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম বলছেন, "এই কেন্দ্রে জয় নিশ্চিত । 4 জুন ফলাফল বেরোলেই দেখতে পাবেন । সন্দেশখালি নিয়ে যে মিথ্যাচার করা হয়েছিল, তা প্রতিবাদী মহিলারা বুঝতে পেরেছেন । এত কথা হচ্ছে সন্দেশখালি নিয়ে ! সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের ঘটনা কি প্রমাণিত হয়েছে ? কেউ বলতে পারবে তাঁর সঙ্গে লাঞ্ছনা হয়েছে ? এসব করে কোনও লাভ হবে না । মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন দেখে ভোট দেবে । এখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এসেও কিছু করতে পারবেন না । নতুন সন্দেশখালি গড়বো আমরা । উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে এখানে ।"
প্রসঙ্গত, বসিরহাট কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামের সঙ্গে এবার লড়াই হতে চলেছে সন্দেশখালির আন্দোলনের অন্যতম 'মুখ' রেখা পাত্রর । স্বভাবতই এই কেন্দ্রের দিকে নজর রয়েছে সকলের । তাই, জমজমাট লড়াই হবে নাকি অভিজ্ঞতার নিরিখে বিজেপি প্রার্থীকে ধরাশায়ী করবেন তৃণমূল প্রার্থী, তা নিয়ে এখন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ । যদিও এসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না শাসকদলের প্রার্থী । বরং বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রকে কটাক্ষ করে জেতার বিষয়ে প্রত্যয়ী হাজি নুরুল ইসলাম বলছেন, "আগে সন্দেশখালি ভালোভাবে ঘুরুক । তারপর জেতার ব্যাপারে ভাববে ।"
আরও পড়ুন: